দর্শন আলোচনার আজকের পর্বের পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা আলোচনা করতে চলেছি । সেটি হল-সবল ও দুর্বল অর্থে জানার মধ্যে পার্থক্য লেখ| BA Philosophy SEM 1-এর দর্শন শাস্ত্রের সমস্ত Topic আলোচনা করা হবে। আশা রাখি ,আমাদের এই উপস্থাপনা দর্শন শাস্ত্রের সকল ছাত্রছাত্রীদের উপকারে আসবে ।
সবল ও দুর্বল অর্থে জানার মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Difference between knowing in strong and weak sense |
বাচনিক জ্ঞানের শর্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন হতে পারে – কী পরিমাণ সাক্ষ প্রমাণ পেলে জ্ঞানকে পর্যাপ্ত শর্ত হিসাবে গণ্য করা যাবে? এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হসপর্স ‘জানা’ কথাটির দুটি অর্থের মধ্যে পার্থক্য করেছেন – দুর্বল অর্থে জানা ও সবল অর্থে জানা।
জগৎ ব্যাপারে জ্ঞান মাত্রই দুর্বল অর্থে জানা কারণ জাগতিক জ্ঞানের সত্যতাকে চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা না গেলেও, কিছু সমর্থক যুক্তি বা তথ্য প্রমাণ সংগৃহিত হলে আমরা তাদের সত্য বলে গ্রহণ করি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – ‘আমার অফিসে একটি বই রাখার আলমারি আছে’ এই বচনটির সমর্থনে আমি বলতে পারি- 1) আমি জানি বচনটি সত্য 2) বচনটি সত্যতায় আমার বিশ্বাস আছে এবং 3) বচনটির বিশ্বাসে যুক্তি প্রমাণ আছে।
ধরাযাক , কোনো ব্যক্তি আমার উক্তি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করলেন, তখন আমি তার সংশয় দূর করার জন্য অফিসের ঘরে থাকা আলমারিটি দেখলাম তখন সংশয়কারী বললেন আপনার জ্ঞানটি সত্য ।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হসপস ‘জানা’ শব্দটি দুর্বল অর্থে ব্যবহার করেছেন কারণ এখানে যে তথ্য প্রমাণ দেওয়া হল তা পর্যাপ্ত নয়। জাগতিক ব্যাপার সংক্রান্ত সমস্ত বচনকে আমরা দুর্বল অর্থে জানতে পারি। আমাদের সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানে এই প্রকার দুর্বল অর্থে জ্ঞানেরই সন্ধান করি।
অপরদিকে জানা ক্রিয়াপদের আরেকটি অর্থ হল সবল অর্থে জানা বলতে , সেই প্রকার জ্ঞানকে বোঝায় যেখানে জ্ঞাত বচনটিকে অবশ্যই সত্য হতে হবে, বচনটির সত্যতার উপর বিশ্বাস থাকতে হবে এবং বচনের সত্যতা প্রমানের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য থাকতে হবে।
অধ্যাপক হসপর্স কেবল মাত্র দুই প্রকার জ্ঞানের ক্ষেত্রে সবল অর্থে জানা ক্রিয়াপদটি প্রয়োগ করেছেন। যথা – 1) আত্মচেতনা বিষয়ক জ্ঞান হল সবল অর্থে জানা। আমার পেট ব্যাথা হচ্ছে, আমার মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে, আমি অসুস্থ বোধ করছি, এই জাতীয় উক্তি সম্পর্কে অনুভবকারী কোনো সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে না বলে তা সবল অর্থে জানা।
2) বিশ্লেষক বচনে সত্যতা সম্বন্ধে কেউ সংশয় করতে পারে না কারণ , এই সব বচনে বিরুদ্ধ বচন বিরোধী হয়। যেমন – সকল বিড়াল হয় বিড়াল, সকল লাল জিনিস হয় লাল ইত্যাদি। এই সব বচনগুলি চূড়ান্তভাবে সত্য এই সব বচনগুলিকে জানা হল সবল অর্থে জানা।
আরো পড়ুনঃ
- হিউমের সতত সংযোগবাদ তত্ত্ব সমালোচনাসহ |
- দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ
- বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল গুলি কি কি ।
- চরম স্বচ্ছলতার কি নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে|
- দ্রব্য কি ? দ্রব্য সম্পর্কে বুদ্ধিবাদীদের অভিমত |
- উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ |
- কার্যকারণ সম্পর্কে প্রসক্তি তত্ত্ব সমালোচনা সহ ।
- -“Tabula Rasa” বা “অলিখিত কাগজ” কথার তাৎপর্য লেখ |
- অধিবিদ্যা কী | অধিবিদ্যার প্রকৃতি আলোচনা করো
- বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করো |
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. জানা বা জ্ঞান বলতে কি বোঝায় ?
উত্তরঃ জানা বা জ্ঞান একটি পরিচিতি, সচেতন, বা কোনো কিছু সম্পর্কে বোঝা, যা অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও আবিষ্কারের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
২. জানা ক্রিয়াপদটি কী কী অর্থে ব্যবহৃত হয় ?
উত্তরঃ জানা ক্রিয়াপদটি দুটি ব্যবহৃত হয়-i) দুর্বল অর্থে জানা ii) সবল অর্থে জানা।
৩. দুর্বল অর্থে জানা বলতে কি বোঝো ?
উত্তরঃ বচনে যে তথ্য প্রমাণ দেওয়া হল তা পর্যাপ্ত নয়। জাগতিক ব্যাপার সংক্রান্ত সমস্ত বচনকে আমরা দুর্বল অর্থে জানতে পারি। আমরা সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানে এই প্রকার দুর্বল অর্থে জ্ঞানেরই সন্ধান করি।
৪. সবল অর্থে জানা বলতে কি বোঝো ?
উত্তরঃ জানা ক্রিয়াপদের সবল অর্থে জানা বলতে , সেই প্রকার জ্ঞানকে বোঝায় যেখানে জ্ঞাত বচনটিকে অবশ্যই সত্য হতে হবে, বচনটির সত্যতার উপর বিশ্বাস থাকতে হবে এবং বচনের সত্যতা প্রমানের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য থাকতে হবে।