স্বতঃমূল্য সম্পর্কে G.E MOORE-এর তত্ত্ব

পরিবেশ নীতিবিদ্যা দর্শনশাস্ত্রের নীতিবিদ্যা একটি অন্যতম শাখা।  বর্তমানে  Man And  Nature হল দর্শনশাস্ত্রের SEC Paper ( Skill Enhancement Course) এর অন্তর্গত। প্রিয় শিক্ষার্থীদের SEC Paper এর উপর পাঠ গ্রহণ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে , সেই কথা মাথায় রেখে সম্পূর্ন বাংলায় Man And  Nature থেকে প্রতিটা অংশ অলোচনা করা হল। আজকের আলোচনায় পরিবেশ নীতিবিদ্যা থেকে স্বতঃমূল্য সম্পর্কে G.E MOORE-এর তত্ত্ব | (G.E MOORE’s Theory of Intrinsic value)। 

স্বতঃমূল্য সম্পর্কে G.E MOORE-এর তত্ত্ব |
স্বতঃমূল্য সম্পর্কে G.E MOORE-এর তত্ত্ব |

 

স্বতঃমূল্য সম্পর্কে G.E MOORE -এর তত্ত্ব | G.E MOORE’s Theory of Intrinsic value | 

ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত, সুন্দর কুৎসিত এই ধারণাগুলি বিষয়নিষ্ঠ না বিনয়িনিষ্ঠ- এই নিয়ে সুদীর্ঘ কাল ধরে বির্তক চলে আসছে । সাধারণত স্বতঃমুল্যর ধারানাকে  পরতঃ মুল্যের ধারণ বিপরীত হিসেবে বোঝানো  হয়। একটি বস্তুর স্বতঃমূল্য  আছে তার অর্থ হল ওই বস্তুটির কি কাজ করা যায়  তার উপর নির্ভর করে না ।

বস্তুটি মূল্য বস্তুটি ঠিক যেরকম তার ওপর নির্ভর করে যেমন – সংগীতের স্বতঃমূল্য আছে তার অর্থ সংগীত নিজেই মুল্যবান । এই অর্থে পরিবেশের হল সব স্বতঃমূল্য আছে একথা বলার অর্থ  হল পরিবেশ আমাদের কী কাজে লাগে তা তার ওপর নির্ভর  করে না  পরিবেশ নিজে থেকেই মুল্যবান একথা বলতে হয় ।

G.E  Moore প্রথম স্বতঃমূল্যকে স্বতঃধর্মের ধারণার সাহায্যে ব্যাখা করেছেন । স্বতঃধর্ম এমন একটি ধর্ম যা কোন পরিবর্তিত হয় না এবং যার পরিমান সব অবস্থাতেই অভিন্ন থাকে এই স্বতঃধর্মের সাহায্যে Moore বলতে চেয়েছেন যে –

(ক)   এটি হতে পারে না যে একটি অবস্থায় কোন বস্তুর স্বতঃমূল্য রয়েছে এবং অন্য অবস্থায় বস্তুর স্বতঃমূল্য নেই ।   স্বতঃ মূল্য হল এমন একটি ধর্ম যা বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন হলেও নিজে অপরিবর্তিত থাকে ।

(খ)  কোনো বস্তুর স্বতঃমূল্য একটি সময়ে যে পরিমাণ থাকে অন্য সময়ে ঠিক একই পরিমাণ থাকবে । অর্থাৎ Moore-এর মতে, অবস্থা ও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কোনো বিষয়ের স্বতঃমূল্যের পরিবর্তিত হয় না।

বস্তুর স্বতঃমূল্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার  সাথে পরিবর্তিত হয় না। সুতরাং Moore -এর মতে কোন বস্তুর স্বতঃমূল্য  থাকার অর্থ হল  তা  অপরিবর্তনীয়, পারিপার্শ্বিক  অবস্থার পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে না। বস্তুর স্বতঃমূল্য আমাদের   আরোপের উপর  নির্ভর করে না । এই জন্য  স্বতঃমূল্য হল বিষয়নিষ্ঠ । যদি স্বতঃ মূল্য বিষয়নিষ্ঠ হতো তাহলে তা আমাদের আরপের ওপর নির্ভর করে না ।  তাই স্বতঃমূল্যের হল বিষয়নিষ্ঠ ।

অনেকে মনে করেন যে  ‘সুন্দর’ এই ধারণাটি বিষয়ীনিষ্ট, তাদের মতে এটি ” সুন্দর”  এই বাক্যটি একজন ব্যাক্তির মানসিকতাকে প্রকাশ করে। মানসিকতা বলতে ভালোলাগা, খারাপ লাগা ইত্যাদি মানসিক প্রবণতাগুলিকে বোঝায়। তবে যারা বিষয়নিষ্ঠবাদী তারা আবার  উপরিউক্ত মতের বিরোধিতা করে  বলেন , ভালো মন্দ  উচিত-অনুচিত, এই ধারণাগুলি বিষয়নিষ্ঠ ।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিষয়নিষ্ঠবাদীরা যখন  যে “সুন্দর” ইত্যাদিকে যখন বিষয়নিষ্ঠ বলেন তখন তারা ওই ধারণাগুলি বিষয়ীনিষ্ঠ  হওয়ার কথা বলেছেন তা নয় , তারা আরও কিছু বলতে চেয়েছেন । G.E. Moore – এর  মতে বিষয়নিষ্ঠবাদীরা আসলে বলতে চেয়েছেন যে সুন্দর ইত্যাদি ধারণানগুলি স্বতঃ মূল্যবান। যদি ভালো বলতে বিবর্তনের  ধারাপথে জীবনরক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্যতর বুঝি  তবে ভালোত্ব আর বস্তর স্বতঃধর্মের উপর আর নির্ভর করে  না কারণ-বিবর্তনের গতি যদি অন্যরকম হয় তাহলে বুঝতে হবে  কোন কিছু যা আজ ভালো তা পরবর্তীকালে ভালো নাও হতে পারে ।

Moore -এর মতে বিষয়নিষ্ট ও বিষয়ীনিষ্ঠ মধ্যে যে  বির্তক আছে  তা হলো-  স্বতঃমূল্য সম্পর্কে  বিতর্ক । অর্থাৎ সুন্দর ইত্যাদি ধর্মগুলি স্বতঃমূল্য কিনা এই নিয়ে বির্তক।

“ স্বতঃ” এই ধারণাটির ব্যাখা  করতে  গিয়ে  Moore আরোও বলেন যে  মুল্যবিষয়ক  বিশেষণগুলি স্বতঃমুল্য ঠিকই কিন্তু সেগুলি স্বতঃধর্ম নয় কারণ স্বতঃধর্ম বস্তুর স্বতঃভাবকে যেভাবে ব্যাখা করে, মূল্যবিষয়ক বিশেষণগুলি বস্তুর স্বতঃভাবকে সেই অর্থে বর্ণনা  করে না । একটি বস্তুর স্বতঃবিশেষণগুলি বস্তুর পূর্ণ বিবরণের জন্য মুল্যবিষয়ক বিশেষণের  প্রয়োজন নেই।

সুতরাং Moore-এর মতে স্বতঃমুল্যের উপস্থিতি ও তার পরিমাণ  অপরিবর্তনীয় তাই কোনো বস্তুর স্বতঃমূল্য থাকা কোনো বাহ্যিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে না বা কোনো  মানুষ কোনো বস্তুর উপর মূল্য আরোপ করলে তবে বস্তুটি মুল্যবান হয় ।   এই অর্থে  Moore স্বতঃমূল্য কথাটি ব্যবহার করেননি।

পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান-ই  আমাদের আরোপের ওপর নির্ভর করে মূল্যবান  বায় তারা নিজে থেকে মূল্যবান।  এই অর্থে  স্বতঃমূল্য বিষয়নিষ্ঠ  মতবাদকে সমর্থন  করেন। তবে বিষয়নিষ্ঠ  হলেই যে  স্বতঃ মূল্য থাকবে একথা বলা যায় না ।


আরো পড়ুন  


১ । স্বতঃমূল্য কাকে বলে ?

উত্তরঃ  পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান পরস্পর   পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হলেও তারা নিজগুনে মূল্যবান  । জগতের প্রত্যেকটি বস্তুর যে নিজস্ব মূল্য তা হল স্বতঃমূল্য ।


 

 

 

Leave a comment