বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ| দর্শন একাদশ

গভীর সাধনা করে গৌতম বুদ্ধ মানুষের দুঃখ মুক্তির পথ নির্দেশ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ করে জীবন অতিবাহিত করলে দুঃখের অন্তরায় হয়। এই অংশে আমরা গৌতম বুদ্ধ নির্দেশ অষ্টাঙ্গিক মার্গ আলোচনা করবো। বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ  বৌদ্ধ নীতিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ।

একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টারদর্শনশাস্ত্রের  unit-2: Introduction of Ethics ,Topic -c ; বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ Budhist concepts of Eight-Fold-Margas ;  এই বিষয় নিয়ে  আজকের আমাদের আলোচনা ।WBCHSE Class 11 Philosophy- এর ছাত্রছাত্রীদের একেবারে নুতন সিলেবাস অনুযায়ী , একাদশ শ্রেনী দর্শন | 

সুতরাং একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে, তাদের পরীক্ষার পস্তুতির সহায়তায়,  আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়-বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ।

 

বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ বর্ণনা
বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ বর্ণনা

 

বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ বর্ণনা |Eightfold Path of Buddhism

 

2 Marks প্রশ্ন- উত্তর

১. বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ গুলি কী কী?

উত্তর-  বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ গুলি – 1) সম্যক্‌ দৃষ্টি , 2) সম্যক সংকল্প , 3) সম্যক বাক্‌ , 4) সম্যক কর্মান্ত , 5) সম্যক আজীব , 6) সম্যক ব্যায়াম , 7) সম্যক স্মৃতি , 8) সম্যক সমাধি ।

২. বৌদ্ধ ধর্ম মতে সকল দুঃখের কারণ কি?

উত্তর- বৌদ্ধ ধর্ম মতে সকল দুঃখের কারণ হল অবিদ্যা। অর্থাৎ বৌদ্ধ দর্শনের চারটি  আর্যসত্য (Four Noble Truths ) সম্পর্কে অঞ্জানতাই হল মানুষের সকল দুঃখের কারণ।

৩. চারটি আর্য সত্য বলতে তুমি কি বোঝো?

উত্তর-  বুদ্ধদেব সর্বদাই মানুষকে দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখ নিবৃত্তি ও দুঃখ নিবৃত্তির উপায় এই চারটি সত্য সম্পর্কে উপদেশ দিতেন বলে এই উপদেশ চার আর্যসত্য (Four Noble Truths ) নামে পরিচিত। এই চারটি আর্যসত্য হল-দুঃখ, দুঃখ সমুদয়, দুঃখ নিরোধ ও দুঃখ নিরোধ মার্গ।

৪. অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর-  বুদ্ধদেব বলেন দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির এই পথ বা মার্গকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়।বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ গুলি – 1) সম্যক্‌ দৃষ্টি , 2) সম্যক সংকল্প , 3) সম্যক বাক্‌ , 4) সম্যক কর্মান্ত , 5) সম্যক আজীব , 6) সম্যক ব্যায়াম , 7) সম্যক স্মৃতি , 8) সম্যক সমাধি ।

৫. বৌদ্ধ ধর্মের অষ্টম পথ কি?

উত্তর-  বৌদ্ধ ধর্মের অষ্টম পথ হল সম্যক সমাধি। এই অবস্থা লাভ করার ফলে সাধকের চিত্ত শান্ত হয়ে যায়। সাধকের মোক্ষ প্রাপ্তি হয়। এই স্তরে সাধক সম্পূর্ন ভাবে সমাহিত হয়, সাধকের কোনো রূপ অনুভূতি থাকে না। এই অবস্থায় প্রঙ্গার উদয় হয় এবং সাধক নির্বান লাভ করে।

৬. ‘সম্যক স্মৃতি’ কী? সম্যক স্মৃতির উপযোগিতা কী?
উত্তর-   চারটি আর্যসত্য, নির্বাণ, আত্মা ও বস্তুর স্বরূপ সম্পর্কে সর্বদা স্মৃতিকে জাগ্রত রাখাকে বলা হয় সম্যক স্মৃতি।
সম্যক স্মৃতি অনাসক্তি সৃষ্টি করে নির্বাণের পথে চালিত করে।

৭. সম্যক ব্যায়ামের ফল কী? সম্যক আজীবের ফল কী?
উত্তর-   সম্যক ব্যায়ামের ফলে চিত্তশুদ্ধি হয়।
আজীবের ফলে দেহ নির্মল ও চিত্তশুদ্ধি হয়।

৮. সম্যক্ কর্মান্তের ফল কী? সম্যক দৃষ্টির ফল কী?
উত্তর-   সম্যক কর্মান্তের মাধ্যমে জাগতিক বিষয়ের প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি করে।
সম্যক দৃষ্টির ফলে অবিদ্যা দূরীভূত হয়।

৯. ‘পঞ্চশীল’ কী?
উত্তর- বৌদ্ধ দদর্শনে শীল কথার অর্থ হল শুদ্ধ আচার- আচরণ অর্থাৎ  চুরি, হিংসা, কামভোগ, মিথ্যা ভাষণ ও নেশা থেকে বিরত থাকাকে বলা হয় পঞ্চশীল।

১০. বুদ্ধদেব অষ্টাঙ্গিক মার্গকে মধ্যপথ বলেছেন কেন?
উত্তর- বুদ্ধদেব অষ্টাঙ্গিক মার্গকে মধ্য পথ বলেছেন, কারণ এই পথ অনুসরণে কঠোর কৃচ্ছসাধনের প্রয়োজন নেই, আবার ভোগবিলাসেরও প্রয়োজন নেই। এই জন্যই অষ্টাঙ্গিক মার্গকে বলা হয় মধ্যপথ বলা হয়।

১১.  সম্যক ব্যায়াম কতপ্রকার ও কী কী?

উত্তর- সম্যক ব্যায়াম চারপ্রকার, এগুলি হল-

[1] কুচিন্তার বিনাশ সাধন করা।

[2] কুচিন্তার উৎপত্তি নিবারণ করা।

[3] সৎ চিন্তার সংরক্ষণ ও সংবর্ধন করা।

[4] সৎ চিন্তার উৎপাদনের জন্য সচেষ্ট হওয়া।

১২.  অসৎ চিন্তা দূরীকরণের জন্য বুদ্ধদেব যে চারটি উপায়ের নির্দেশ দিয়েছেন তা লেখো।

উত্তর-

[1] সর্বদা শুভ চিন্তাতে মনকে নিবন্ধ রাখা।

[2] অশুভ ভাবনাজনিত কর্মের ফল সহ্য করা।

[3] অশুভ ভাবনা থেকে মনকে সরিয়ে রাখা।

[4] শারীরিক কুষ্ণতার দ্বারা মনকে নিগৃহীত করা।

১৩. সম্যক সমাধির চারটি স্তর কী কী?
উত্তর-
1] বিচার ও বিতর্ক।

[2] সন্দেহের অবসান।

[3] সুখ ও আনন্দের প্রতি উপেক্ষা।

[4] অনুভূতির অবসান।

১৪.  ‘নির্বাণ’ কী? বৌদ্ধ মতে নির্বাণের স্বরূপ কী?

উত্তর- নির্বাণ হল আত্যন্তিক দুঃখ নিবৃত্তি। অর্থাৎ জীবন থেকে দুঃখের চিরতরে বিনাশকে নির্বাণ বলা হয়।

নির্বাণের  স্বরূপ সম্পর্কে বলা হয়-

১.  নির্বাণ হল অনির্বচনীয় অবস্থা।

২. নির্বাণ হল নিভে যাওয়া।

৩. নির্বাণ হল নির্লিপ্ত অবস্থা।



6- Marks প্রশ্ন- উত্তর

 আর্যসত্য কী?

বোধি লাভের পর বুদ্ধদেব যে চরম সত্য উপলব্ধি করেছিলেন তাই বৌদ্ধ দর্শনে আর্যসত্য নামে পরিচিত। বুদ্ধদেব সর্বদাই মানুষকে দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখ নিবৃত্তি ও দুঃখ নিবৃত্তির উপায় এই চারটি সত্য সম্পর্কে উপদেশ দিতেন বলে এই উপদেশ চার আর্যসত্য (Four Noble Truths ) নামে পরিচিত।

বুদ্ধদেব বলেন দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির এই পথ বা মার্গকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়। বৌদ্ধ নীতি তত্ত্বে এই অষ্টাঙ্গিক মার্গের আটটি মার্গ হল –

১. সম্যক্‌ দৃষ্টি

সম্যক দৃষ্টি মানে সত্য জ্ঞান। জগৎ ও আত্মা সম্পর্কে মিথ্যা জ্ঞান দুঃখের প্রধান কারণ। তাই নৈতিক সংস্কারের প্রথম স্তর হল সত্য দৃষ্টি বা জ্ঞান লাভ করা। জগতের অনিত্য জাগতিক বস্তুর প্রতি আশক্তি আমাদের জন্ম এবং আমাদের দুঃখের কারণ- এমন জ্ঞানই সম্যক দৃষ্টি বা সত্য জ্ঞান।

 ২. সম্যক সংকল্প

সম্যক জ্ঞান হলেই দুঃখ মুক্তি হয় না, সত্য জ্ঞান অনুযায়ী জীবন জাপন করার সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ বিষয়ের প্রতি আশক্তি, অন্যের প্রতি হিংসা ও অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে প্রেম ও করুণা বিতরণের দৃঢ় ইচ্ছাই সম্যক সংকল্প।

৩. সম্যক বাক্‌

মিথ্যা কথা পরিহার করে সর্বদা সত্য কথা বলাই হল সম্যক বাক্‌। অর্থাৎ সত্য ও প্রীতি পূর্ন কথা বলা, ক্টু বাক্য, পরনিন্দা প্রভৃতি সাধকের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একান্ত প্রয়োজন।

৪.  সম্যক কর্মান্ত

সম্যক আচরণ হল সম্যক কর্মান্ত। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহো, হিংসা, মাদক দ্রব্য, পর দ্রব্য ইত্যাদি বর্জন করে অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার দ্বারা পরিচালিত হয়ে কর্ম সাধন করতে হবে।

৫.  সম্যক আজীব 

সৎ ভাবে জীবিকা অর্জন করা হল সম্যক আজীব। এই নীতি বলে যে, জীবিকা অর্জনের জন্য প্রাণী স্বীকার প্রাণী হত্যা, মাদক দ্রব্য বিক্রয়, গানিকাবৃত্তি, চুরিকরা, মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি সম্পূর্ন রূপে বর্জন করে সৎ ভাবে জীবিকা অর্জন করতে হবে।

৬.  সম্যক ব্যায়াম

সম্যক ব্যায়াম হল এক প্রকার মানষিক ব্যায়াম। দুঃখ থেকে মুক্তির জন্য মন থেকে যাবতীয় কুচিন্তা দূর করে, মনকে সর্বদা সৎ চিন্তায় নিয়োজিত করতে হবে।

৭.  সম্যক স্মৃতি

এর অর্থ হল জগৎ ও জীবন অনিত্য, দেহ ও মন অনিত্য, এগুলি প্রতি নিয়ত স্মরণ রাখাই হল সম্যক স্মৃতি।

৮.  সম্যক সমাধি

উপরিউক্ত সাতটি মার্গ যথাযথভাবে পালন করার ফলে সাধকে চিত্ত শান্ত হয় এবং যে সমাধির সামর্থ লাভ করে।সমাধির আবার চারটি স্তর আছে।

প্রথম স্তরে- সাধকের মন একটি নিদিষ্ট বিষয় চিন্তায় সমাহিত হয়। এই স্তরে সত্য সম্পর্কে বিচার বির্তক ও সংশয়  থাকে, তবে মনে এক সুখের অনুভূতি হয়।

দ্বিতীয় স্তরে- সাধকের মনে বিচার তর্কের কোনো স্থান নেই। সাধক এই স্তরে দিত্য আনন্দ অনুভব করে।

 তৃতীয় স্তরে -সাধকের মনে সুখের অনুভূতি ও আনন্দের অনুভূতির প্রতি উদাসিন্য দেখা যায়।

 চতুর্থ স্তরে- সাধক সম্পূর্ন ভাবে সমাহিত হয়, সাধকের কোনো রূপ অনুভূতি থাকে না। এই অবস্থায় প্রঙ্গার উদয় হয় এবং সাধক নির্বান লাভ করে।

উপসংহার (Conclusion)

এইভাবে  বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণে  মানুষের জীবনে দুঃখের আত্মান্তিক মুক্তির পথ নির্দেশ করা হয়েছে।


Thanks For Reading : বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গ বর্ণনা |Eightfold Path of Buddhism


আরো পড়ুন 


 

Leave a comment