পুরুষার্থ একাদশ শ্রেণী দর্শন সেমিস্টার ২

Class 11 Second Semester WBCHSE । দর্শন সিলেবাস 2024-25 অনুযায়ী দর্শন শাস্ত্রের Unit –২ এ রয়েছে Introduction to Ethics -এর Topic No : 1 ভারতীয় নীতিবিদ্যা (Indian Ethics). এই অংশের একটি বিষয় হল- পুরুষার্থ (Purushartha)।

আলোচনার এই পর্বে  একাদশ শ্রেণি দর্শন ২য় সেমিস্টার -এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব । এই অংশটি থেকে তোমাদের Total 2 marks এর রয়েছ।

ভারতীয় নীতিবিদ্যা মধ্যে যে মোট চারটি অংশ রয়েছে । এর মধ্যে প্রথম অংশ হল- পুরুষার্থ (Purushartha)।

WBCHSE XI 2nd Semester সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই Topic থেকে কিছু সংক্ষিপ্ত ও ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করেছি । একাদশ শ্রেণি দর্শন ভারতীয়  নীতিবিদ্যার  suggestion স্বরূপ এই প্রশ্ন গুলো তোমরা ভালোভাবে প্রস্তুত করলেই ,পরীক্ষায় নিশ্চয় সফল হবে ।

পুরুষার্থ একাদশ শ্রেণী দর্শন সেমিস্টার ২
পুরুষার্থ একাদশ শ্রেণী দর্শন সেমিস্টার ২

 

পুরুষার্থ একাদশ শ্রেণী দর্শন সেমিস্টার ২

পুরুষার্থ প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি দর্শন 

Marks- 2

১.  পুরুষার্থ কাকে বলে ?

 উত্তর-  ‘পুরুষার্থ’ কথাটির সরল অর্থ হল মানুষের শ্রেষ্ঠ কাম্য বস্তু। মানুষ তার জীবনে যে সব বিষয়কে সবথেকে বড়ো পাওয়া বলে মনে করে তাই হল পুরুষার্থ। অর্থাৎ কাম্য বস্তু মনে করে মানুষ যাকে কামনা করে সেটাই মানুষের জীবনে পুরুষার্থ। ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থ চার প্রকার ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। মোক্ষ এগুলি মানব জীবনে শ্রেয় ও প্রেয় বস্তু।

২. ‘ধর্ম ‘ পদটির অর্থ কী ?

 উত্তর- ভারতীয় ধর্মশাস্ত্রে ও নীতিশাস্ত্রে সমাজ জীবনের পরিপেক্ষিতে ‘ধর্ম’ শব্দটির অর্থ করা হয়েছে। ধর্মকে সমাজের ধারক, রক্ষক ও প্রতিপালক হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ যা সমগ্র জগত এবং মানুষের নৈতিক জীবনকে রক্ষা করে তাকে বলে ধর্ম।  তাই ধর্মের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়লে সমাজও ভেঙে পড়ে। তাই ধর্মের পথ অবলম্বন করলে ব্যক্তির মঙ্গল, কল্যান ও নির্বাণ লাভ সম্ভব হয়। ধর্মের মাপকাটিতে যেমন ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপেরও মূল্যায়ন করা যায়।

৩. চারটি পুরুষার্থের মধ্যে মোক্ষকে শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থ বলা হয়  কেন ?

 উত্তর- ভারতীয় দর্শনে মোক্ষকে পরম পুরুষার্থ বলা হয়েছে। যা লাভ করলে মানুষের জীবনে আর কোন কিছুই লাভ বা কামনা করার থাকেনা, তাকে পরম পুরুষার্থ বলা হয়। মোক্ষ হল এমন একটি অবস্থা যা লাভের পর মানুষের আর অন্যকিছু কামনা করার থাকে না। এই অবস্থায় আত্মা গুন শূন্য হয়ে নিজ স্বরূপে অবস্থান করে। মোক্ষ প্রাপ্তিতে মানুষের স্ব দুঃখের অবসান ঘটে। তার মোক্ষ মানুষের কাছে পরম পুরুষার্থ।

৪. পরম পুরুষার্থ কী ? 

 উত্তর-  যাকে লাভ করলে মানুষের জীবনে আর কিছুই পাওয়ার থাকে না, সব প্রয়োজনের অবসান ঘটে তাই হল পরম পুরুষার্থ। ভারতীয় মোক্ষবাদী দর্শনে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চারটি পুরুষার্থের মধ্যে মোক্ষকে পরম পুরুষার্থ বলা হয়েছে। কারণ মোক্ষ লাভ করলে সমস্ত কামনার অবসান ঘটে, মানুষের জীবনে আর কিছু পাওয়ার থাকে না, সমস্ত পাওয়ার অবসান হয়।

৫. অর্থ বলতে কী বোঝায়?

 উত্তর-   ‘অর্থ’ কথাটির অর্থ হল জাগতিক সেইসব বিষয় যা লাভ করা যায়, যা ভোগ করা যায়, যাতে অংশগ্রহণ করা যায় এবং যা আমাদের জীবন ও পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বদাই প্রয়োজন। ধর্মের পথে উপার্জিত অর্থই প্রকৃত পক্ষে অর্থ। অসৎ উপায়ে, মিথ্যা বলে বা প্রতারণা করে উপার্জিত অর্থকে যেমন পুরুষার্থ বলা যায় না, তেমনই কেবল নিজের দৈহিক সুখভোগ ও কাম সাধনের জন্য যে অর্থ ব্যায় হয় সেই অর্থকেও পুরুষার্থ রূপে গণ্য করা যায় না। অথএব ন্যায় সম্মত পথে উপার্জিত অর্থই হল পুরুষার্থ।

৬.  কাম বলতে কী বোঝায়?

 উত্তর-   বাস্তব মুখী ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে কামকে পুরুষার্থ রূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কারণ কাম পুরুষের বহু আকাঙ্খিত বিষয়। ‘কাম’ বলতে কেবল যৌন কামনাকে বোঝায় না। জাগতিক সমস্ত বস্তুর প্রতি আকাঙ্খাকে কাম শব্দের দ্বারা বোঝানো যায়। এক কথায় একটি মানুষের যা কিছু ঈস্পিত হতে পারে তাকেই কাম বলা যায়।

৭.  মোক্ষ বলতে কী বোঝায়?

 উত্তর-  মোক্ষ কথাটির আর্থ হল দুঃখের আত্যন্তিক মুক্তি অর্থাৎ জীবন থেকে দুঃখের চির বিনাশ ঘটলে যে অবস্থার প্রাপ্তি হয় তাকে মোক্ষ বলে। মোক্ষ হল এমন একটি অবস্থা যা লাভের পর মানুষের আর অন্যকিছু কামনা করার থাকে না। এই অবস্থায় আত্মা গুন শূন্য হয়ে নিজ স্বরূপে অবস্থান করে। মোক্ষ প্রাপ্তিতে মানুষের  দুঃখের অবসান ঘটে। তাই মোক্ষ মানুষের কাছে পরম পুরুষার্থ।

৮. মানব জীবনের চারটি পুরুষার্থ কী কী?

 উত্তর- মানব জীবনের চারটি পুরুষার্থ হল- ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। ভারতীয় দর্শনের অধিকাংশ শাখাতেই অর্থ ও কামকে গৌণ পুরুষার্থ  বলে বিবেচিত করা হয়েছ  এবং  ধর্ম ও মোক্ষকেই সেখানে স্বতঃমূলবান পুরুষার্থ বলা হয়েছে।

 


পুরুষার্থ প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি দর্শন 

Marks- 3/6

1.ভারতীয় নৈতিকতার পূর্বস্বীকৃতি আলোচনা করো ?

 উত্তর- ভারতীয় নীতিশাস্ত্র আধ্যাত্মবাদ সমর্থিত। আধ্যাত্মক বলতে সেই মতবাদকে বোঝায় যা ঈশ্বর, দেহ অতিরিক্ত আত্মা , পরলোক, পুর্ণজন্ম, মোক্ষ ইত্যাদিকে বিশ্বাস করে। এইসবের প্রতি বিশ্বাসই হল ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের পূর্বস্বীকৃতি।

১. ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে একটি পূর্ব স্বীকৃতি বা মৌলিক বিশ্বাস হল সমগ্র নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। এই পূর্ব স্বীকৃতির জন্যই ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে আধ্যাত্মবাদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২. ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের অপর একটি পূর্ব স্বীকৃতি হল কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস। প্রথম পূর্ব স্বীকৃতি থেকে দেখা দেয় কর্মবাদ জন্মান্তর বাদে বিশ্বাস।

৩.   ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের অপর এক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হল পরম পুরুষার্থ রূপে মোক্ষ বা মুক্তির প্রতি বিশ্বাস। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চার প্রকার পুরুষার্থের মধ্যে মানুষের শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থ হল মোক্ষ। কারণ মোক্ষ লাভের পরে আত্মার আর কিছুই কামনা করার থাকেনা।

৪. ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব স্বীকৃতি অবিদ্যা এবং অবিদ্যা জনিত দুঃখ। অবিদ্যার জন্যই জীব বার বার জন্মগ্রহণ করে।

 

২. মানবজীবনে চারটি পুরুষার্থের পারস্পরিক সম্বন্ধ কী ?

 উত্তর- ভারতীয় দর্শনে স্বীকৃত ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। এই চতুবর্গ পুরুষার্থের মধ্যে ধর্মকে প্রথম স্থানে রাখা হয়েছে। ধর্ম মানবজীবনের পথ নির্দেশক। অর্থাৎ মানুষ কোন পথে কাম, অর্থ, ধর্ম ও মোক্ষ অর্জন করবে তা নির্দেশ করে দেয় ধর্ম। এইজন্য পুরুষের প্রথম কাম্যবস্তু হল ধর্ম।

বাস্তবমুখী ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে মানুষের জীবনে দৈহিক সুখ ভোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। দৈহিক সুখভোগের জন্য কাম পরিচর্যার প্রয়োজন। এই কারণে কাম মানবজীবনের পুরুষার্থ

আবার কাম্যবস্তুকে ভোগ করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয়। সম্পত্তি, সামাজিক মর্যদা ,পতিপত্তি -এগুলি জীবের অর্থ সংগ্রহের অনুকূল। এগুলি না থাকলে কাম্যবস্তু ভোগ করা যাবে না। তবে কামকে পরিতৃপ্তি করার জন্য অর্থ সংগ্রহ অবশ্যই ধর্মের পথে হতে হবে। অর্থাৎ সমাজ স্বীকৃত পথে মানুষের অর্থ সংগ্রহ করা স্বীকৃত। এই কারণে ধর্ম মানবজীবনে গুরুত্বপূর্ণ পুরুষার্থ।

ধর্মের পথে অর্থ সংগ্রহ ও কামের নিবৃত্তি হলেও কাম ও অর্থ উভয়ই ক্ষনস্থায়ী। অর্থাৎ কাম ও অর্থ মানুষকে ক্ষনিকের জন্য সুখ দেয়। তবে মোক্ষ এমন একটি পুরুষার্থ যা মানুষকে চির দুঃখ মুক্তির অবস্থায় উপনীত করে। অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করলে জীবন থেকে দুঃখের আত্মান্তিক নিবৃত্তি ঘটে। তাই ভারতীয় দর্শনের মোক্ষ পরম পুরুষার্থ।

পুরুষার্থকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়গুলির মধ্যে মতপার্থক্য আছে। চার্বাক দার্শনিক সম্প্রদায়েরাই কাম ও অর্থকেই পুরুষার্থ বলে স্বীকার করেছেন। এরা কামকে মোক্ষ পুরুষার্থ এবং কাম পালনের জন্য অর্থকে গৌণ পুরুষার্থ বলেছেন, আবার প্রাচীন মীমাংসাকগন সর্বসুখকে পরম পুরুষার্থ বলেছেন তবে সামগ্রিক ভারতীয় দর্শনে মোক্ষ পরম পুরুষার্থ হলেও, ধর্ম, অর্থ, কাম, কখনও উপেক্ষিত হয়নি।

৩. পুরুষার্থ কাকে বলে ?

 উত্তর- কাম্যবস্তু মানে যাকে কামনা করে সেটাই  মানুষের জীবনে পুরুষার্থ। ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে মানুষের প্রয়োজন সাধন চারটি কাম্য বস্তুর অর্থাৎ পুরুষার্থের – ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। মানুষের জীবনে ক্রমানুসারে এই চারটি পুরুষার্থের বিন্যাস যদিও এক ধর্ম, দুই অর্থ, তিন কাম, ও চার মোক্ষ তথাপি এখানে ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে ধর্মকেই পরম পুরুষার্থ রূপে সর্বাগ্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়েছে। তবে আলোচনার সুবিধার জন্য উপরিউক্ত ক্রমটি সাজানো হয়েছে ।

‘পুরুষার্থ’ কথাটির সরলার্থ হল মানুষের শ্রেষ্ঠ কাম্যবস্তু। মানুষ তার জীবনে যেসব বিষয়কে সব থেকে বড় পাওয়া বলে মনে করে তাই হল পুরুষার্থ। এগুলো মানবজীবনে শ্রেয় ও প্রেয়বস্তু।

উপরিউক্ত চারটিকে পুরুষার্থরূপে গণ্য করা হলেও সবটিকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এদের মধ্যে অর্থ ও কামের মূল প্রন্থা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধর্মকে নৈতিকমূল্যের মর্যদা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য চারটি সাধারণ ভাবে মূল্য বলে বিবেচিত হলেও অর্থ ও কাম এদেরকেই জীবনের যথার্থ মূল্য বলে স্বীকার করা হয়েছে।

ভারতীয় দর্শনের অধিকাংশ শাখাতেই অর্থ ও কামকে পুরুষার্থ বলে বিবেচিত করা হয়নি। ধর্ম ও মোক্ষকেই সেখানে স্বতঃমূলবান পুরুষার্থ বলা হয়েছে। যে সকল দর্শনে মোক্ষের ধারণা যথেষ্ঠ গুরুত্ব পায়নি, সেখানেও কিন্তু ধর্মের আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। এই সকল দর্শনে ধর্মকে উচ্চস্থান দিয়ে বলা হয়েছে –  “If mokho is the purusartha of the kingdom of god, Dharma is the Purus Artha of the kingdom of god on earth ” আমরা এখানে চারটি পুরুষার্থ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

 

৪. ধর্ম অর্থ, কাম, ও মোক্ষ এই বর্গচতুষ্ঠয়কে পুরুষার্থ বলা হয় কেন? 

 উত্তর- ভারতীয় নীতিবিদ্যার সাধারণত ধর্ম , অর্থ, কাম, ও মোক্ষ এই বর্গচতুষ্ঠয়কে পুরুষার্থ বলা হয়। এই বর্গ চতুষ্ঠয়ের ধর্মকে প্রথমে স্থান দেওয়া হয়েছে। কারণ ধর্ম হল অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই তিনটি পুরুষার্থ লাভের উপায় বা পথ অর্থাৎ ভারতীয় নীতিশাস্ত্রানুযায়ী ধর্মের পথ অনুসরণ করে কামনা পরিতৃপ্ত করতে হবে, অর্থ উপার্জন করতে হবে এবং মোক্ষ লাভ করতে হবে, তবে ধর্মের অনুসরণে একটি জীবদেহ পরিচালিত হতে পারেনা। জীব মাত্রই দেহধারী এক জীবাত্মা। তাই দেহের উপযোগী বস্তু প্রাপ্তি বা ভোগ, জীবের কাম্য হয়ে ওঠে। এই কারণে কাম জীবের পুরুষার্থ। আবার কাম্যবস্তু ভোগ করতে গেলে জীবের প্রয়োজন হয় অর্থের। এই কারণে অর্থ ও মানুষের পুরুষার্থ। অর্থ না থাকলে কাম্য বস্তু ভোগ করা যায় না।

কাম পরিতৃপ্তির জন্য মানুষকে সামাজিক সংগঠনের মধ্য দিয়ে চলতে হয়। সামাজিক নিয়মরীতির বাইরে গিয়ে মানুষ কামকে চরিতার্থ করতে গেলে তাতে সমাজ দায় এসে পড়ে। তাই কাম পালনের জন্য ধর্মের পথ অবলম্বন করা অবশ্য কর্তব্য। ধর্ম মানুষকে সমাজ বিরুদ্ধ কাম পরিচর্যা করতে বাধা দেয়।

প্রতিটি সমাজে মানুষের আচার আচরণের বিভিন্ন রীতি – নীতি  আছে। সামাজিক রীতি – নীতি  মেনে আচরণ করাকে নীতিবিদ্যার সৎ আচরণ বলা হয়। সামাজিক সংগঠনের মধ্যে থাকলে মানুষকে অবশ্যই সেই সমাজ অনুমোদিত পথে কামের পরিচর্যা করতে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ মানুষের জীবনে অর্থের প্রয়োজন শুদ্ধভাবে কামকে পরিচর্যা করার জন্য,  কাম পালনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে দিয়ে মানুষ যদি ধর্মের পথ অবলম্বন করে, তাহলে তাতে কোন সামাজিক বাধ্য বাধকতা আসেনা বরং সেই সমগ্র সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়।

ধর্মের পথে কামের নিবৃত্তি ও অর্থ সংগ্রহ করলেও কাম ও অর্থ ক্ষণস্থায়ী। তাই মানুষ এই দুটি পেয়ে সাময়িক শান্তি পেলেও চিরস্থায়ী শান্তি পেতে পারেনা। সে এমন এক পুরুষার্থ খোঁজে যা তাকে স্থায়ী শান্তি দিতে পারে। একমাত্র মোক্ষলাভেই মানুষ চিরস্থায়ী শান্তির স্তরে পৌঁছাতে পারে। ধর্মের পথেই মানুষকে মোক্ষ লাভের পথে নিয়ে যায়। মোক্ষ প্রাপ্তিতেই জীবের সব দুঃখ -এর অবসান ঘটে।

সুতরাং  ভারতীয় নীতিবিদ্যা অনুসারে মানুষের জীবন সঠিক ভাবে পরিচালিত হতে গেলে ধর্ম ,অর্থ, কাম, ও মোক্ষ – এই চারটি পুরুষার্থের প্রয়োজন। তাই ধর্ম ,অর্থ, কাম, ও মোক্ষ – এই চারটি পুরুষার্থকে বর্গচতুষ্ঠয়কে পুরুষার্থ বলা হয়।

 

৫. পুরুষার্থকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মতপার্থক্য  গুলি লেখ।

 উত্তর- পুরুষার্থকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

১. চার্বাক সম্প্রদায় কাম ও অর্থকেই কেবল পুরুষার্থ বলে স্বীকার করেন।

২. প্রাচীন মীমাংসকগণ স্বর্গ সুখ ভোগকে পরম পুরুষার্থ বলে মনে করেন।

৩. চার্বাক ও মীমাংসক ছাড়া ভারতীয় দর্শনের অপর শাখাগুলি মোক্ষকেই পরম পুরুষার্থ বলেছেন।

মোক্ষ পরম পুরুষার্থ হলেও চতুবর্গ পুরুষার্থে অপর তিনটিকে এরা উপেক্ষা করেননি। আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে চতুবর্গ পুরুষার্থ – এর পারস্পরিক সম্পর্ককে কখনও অস্বীকার করা যায়না। মোক্ষকেই যদি পুরুষার্থ হিসাবে ধরা হয়, তাহলে জৈবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একটি বড়ো প্রশ্নচিহ্ন এসে পড়ে। জৈবিক জীবন – যাপন অর্থাৎ কামনা – বাসনা ও অর্থ ব্যাতিত মানুষের জীবন অর্থ হীনতায় পরিণত হয়, তাই ভারতীয় নীতিবিদ্যা স্বীকৃত 4 টি পুরুষার্থ একে অপরের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ।

 

৬. ‘ধর্ম ‘ পদটির অর্থ কী ? পুরুষার্থ হিসাবে ধর্মের গুরুত্ব লেখো।

 উত্তর- ভারতীয় ধর্মশাস্ত্রে ও নীতিশাস্ত্রে সমাজ জীবনের পরিপেক্ষিতে ‘ধর্ম’ শব্দটির অর্থ করা হয়েছে। ধর্মকে সমাজের ধারক, রক্ষক ও প্রতিপালক হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। তাই ধর্মের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়লে সমাজও ভেঙে পড়ে। তাই ধর্মের পদ অবলম্বন করলে ব্যক্তির মঙ্গল, কল্যান ও নির্বাণ লাভ সম্ভব হয়। ধর্মের মাপকাটিতে যেমন ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপেরও মূল্যায়ন করা যায়। সুতরাং মানব জীবন ধর্মের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় তাই ধর্মের বিধি আমাদের অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত।

ধর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের সামাজিক চেতনার ও প্রতিফলন ঘটে। ধর্মের পথ অবলম্বন করে এক আদর্শ সমাজ জীবন গড়ে ওঠে। যে সমাজে মানুষ নিজের তথা সমাজের তথা বিশ্বাসীর কল্যাণের স্বার্থে বিভিন্ন কর্যানুষ্ঠান করেন। সমাজের কল্যাণের স্বার্থে কর্ম অনুষ্ঠান হল সৎ কর্ম। আর এই সৎ কর্মি হল ধর্ম।

মানুষের জীবনে ইহলৌকিক ও পরলৈকিক উভয় সুখলাভের উপায় হিসাবে ধর্ম অবশ্য পালনীয়। ধর্মের দ্বারাই পার্থিব ও অপার্থিব বিষয়ে লাভ হয়। তাই যাকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহ হয় তাই হল ধর্ম। সুতরাং, মানুষের জীবনে ধর্ম অতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

৭. চারটি পুরুষার্থের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থ কোনটি এবং কেন ?

 উত্তর- ভারতীয় দর্শনে মোক্ষকে পরম পুরুষার্থ বলা হয়েছে। যা লাভ করলে মানুষের জীবনে আর কোন কিছুই লাভ বা কামনা করার থাকেনা, তাকে পরম পুরুষার্থ বলা হয়। মোক্ষ হল এমন একটি অবস্থা যা লাভের পর মানুষের আর অন্যকিছু কামনা করার থাকে না। এই অবস্থায় আত্মা গুন শূন্য হয়ে নিজ স্বরূপে অবস্থান করে। মোক্ষ প্রাপ্তিতে মানুষের স্ব দুঃখের অবসান ঘটে। তার মোক্ষ মানুষের কাছে পরম পুরুষার্থ।

জৈবিক দেহের জন্য কামনা – বাসনার আবির্ভাব হয়। এই কারণে কাম জীবের পুরুষার্থ। আবার কাম চারিতার্থের জন্য প্রয়োজন অর্থের। এই কারণে অর্থ প্রয়োজন তবে তা অবশ্যই ধর্মের পথে হতে হবে। সমাজবদ্ধ জীব হয়ে জীব কখনও সামাজিক ও জাগতিক নিয়মের বাইরে যেতে পারেনা। তাই অর্থ ও কাম চারিতার্থের জন্য ধর্মের প্রয়োজন। এইজন্য ধর্ম মানুষের অন্যতম পুরুষার্থ। যদিও ধর্মের পথে কাম নিবৃত্তি ও অর্থ সংগ্রহ করা গেলেও কাম বা অর্থ ক্ষণস্থায়ী।

তাই মানুষ এই দুটি পেয়ে চিরন্তন শান্তি পেতে পারে না। এইজন্য মানুষকে এমন এক পুরুষার্থের খোঁজ করতে হয়, যা তাকে চিরশান্তি দিতে পারে। মোক্ষই একমাত্র মানুষকে এই স্থায়ী শান্তির পথে পৌঁছে দিতে পারে। এই অবস্থায় পৌঁছালে চাওয়া পাওয়া জনিত সকল দুঃখের নিবৃত্তি হয়। এই কারণে মানব জীবনের পরম পুরুষার্থ হল মোক্ষ। জ্ঞান, ভক্তি ও কর্ম এই তিন যোগমার্গে – এ মোক্ষ লাভ সম্ভব।

 

৮. পুরুষার্থ কী ? পরম পুরুষার্থ কী ? অর্থ ও কামকে কেন পুরুষার্থ বলা হয় ?

 উত্তর- ‘পুরুষার্থ’ কথাটির সরল অর্থ হল মানুষের শ্রেষ্ঠ কাম্য বস্তু। মানুষ তার জীবনে যে সব বিষয়কে সবথেকে বড়ো পাওয়া বলে মনে করে তাই হল পুরুষার্থ। অর্থাৎ কাম্য বস্তু মনে করে মানুষ যাকে কামনা করে সেটাই মানুষের জীবনে পুরুষার্থ। ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থ চার প্রকার ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। মোক্ষ এগুলি মানব জীবনে শ্রেয় ও প্রেয় বস্তু।

যাকে লাভ করলে মানুষের জীবনে আর কিছুই পাওয়ার থাকে না, সব প্রয়োজনের অবসান ঘটে তাই হল পরম পুরুষার্থ। ভারতীয় মোক্ষবাদী দর্শনে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চারটি পুরুষার্থের মধ্যে মোক্ষকে পরম পুরুষার্থ বলা হয়েছে। কারণ মোক্ষ লাভ করলে সমস্ত কামনার অবসান ঘটে।

১. অর্থ 

ভারতীয় নীতি শাস্ত্র জীবন বিমুখ নয় বা বাস্তব বিরুদ্ধ নয়। জীবনকে যাপন যোগ্য করার জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে। ব্যক্তির প্রয়োজনে, পারিবারিক দায়িত্ব পালনের জন্য সামাজিক কর্তব্য পালনের জন্য এবং ধর্ম পালনের জন্য অর্থ মানুষের কাম্য বস্তু। অর্থাৎ মানুষের বাস্তবিক জীবনের কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য অর্থ উপার্জন করতে হয় এবং উপার্জিত অর্থ সঞ্চয় করতে হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ তাঁর উদ্দেশ্য পালনের জন্য অর্থকে কাম্য বস্তু বলে কামনা করে। এই জন্য ভারতীয় নীতি শাস্ত্রে অর্থকে পুরুষার্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

‘অর্থ’ কথাটির অর্থ হল জাগতিক সেইসব বিষয় যা লাভ করা যায়, যা ভোগ করা যায়, যাতে অংশগ্রহণ করা যায় এবং যা আমাদের জীবন ও পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বদাই প্রয়োজন। ধর্মের পথে উপার্জিত অর্থই প্রকৃত পক্ষে অর্থ। অসৎ উপায়ে, মিথ্যা বলে বা প্রতারণা করে উপার্জিত অর্থকে যেমন পুরুষার্থ বলা যায় না, তেমনই কেবল নিজের দৈহিক সুখভোগ ও কাম সাধনের জন্য যে অর্থ ব্যায় হয় সেই অর্থকেও পুরুষার্থ রূপে গণ্য করা যায় না। অথএব ন্যায় সম্মত পথে উপার্জিত অর্থই হল পুরুষার্থ।

২. কাম 

বাস্তব মুখী ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে কামকে পুরুষার্থ রূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কারণ কাম পুরুষের বহু আকাঙ্খিত বিষয়। ‘কাম’ বলতে কেবল যৌন কামনাকে বোঝায় না। জাগতিক সমস্ত বস্তুর প্রতি আকাঙ্খাকে কাম শব্দের দ্বারা বোঝানো যায়। এক কথায় একটি মানুষের যা কিছু ঈস্পিত হতে পারে তাকেই কাম বলা যায়। মনোঃতত্ত্ব অনুসারে পশুর মতো মানুষের জীবনেও সহজাত প্রবৃত্তি ও আবেগ আছে এবং পশুর মতো মানুষও ওই প্রবৃত্তিকে কোনো না কোন ভাবে পরিতৃপ্ত করতে চায়।

তবে ইন্দ্রীয় বা দৈহিক সুখ ভোগ সংযত ও ন্যায় সম্মত হতে হবে। তা না হলে অর্থাৎ অসংযত কাম চর্চাকে পুরুষার্থ রূপে গণ্য করা যাবে না, কারণ তা মানুষের উচ্চতর দেবসত্ত্বাকে বিকাশিত করতে বাধা দেয়। তাই শাস্ত্র সম্মত কামই মোক্ষ লাভের উপায় হিসাবে পুরুষার্থের অন্তর্গত।

ধর্ম

পুরুষার্থসমূহের মধ্যে ‘ধর্ম’ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ‘ধর্ম’ শব্দটি যদিও নানার্থবোধক তাহলেও এর একটি মুখ্য অর্থ আছে। ‘ধর্ম’ শব্দের একটি প্রাচীন অর্থ হল ‘ধারণাৎ ধর্মম্ ইত্যাহুঃ’-অর্থাৎ ধর্ম তাই যা মানুষ ও সমাজকে ধারণ বা রক্ষা করে।

‘ধৃ’ ধাতুর অর্থ ‘ধারণ’। যা ধারণ করে তাই ধর্ম। ধর্মকে বলা হয়েছে ‘সর্বস্য ধারকম্’। ধর্ম সবকিছুকেই ধারণ করে। ভারতীয় চিন্তাধারা অনুযায়ী ধর্ম প্রতিটি মানুষকে ধারণ করে এবং তার ফলে সমগ্র মানবসমাজকে ধারণ করতে সমর্থ হয়। ব্যক্তি ও সমাজের অস্তিত্ব ও ধারাবাহিকতার জন্য তাই ধর্মপালন করা কর্তব্য।

৯. ভারতীয় নীতিবিদ্যা সন্মত চারটি পুরুষার্থ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভারতীয় নীতিবিদ্যা সন্মত চারটি পুরুষার্থ হল-

১. ধর্ম – পুরুষার্থসমূহের মধ্যে ‘ধর্ম’ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ‘ধর্ম’ শব্দটি যদিও নানার্থবোধক তাহলেও এর একটি মুখ্য অর্থ আছে। ‘ধর্ম’ শব্দের একটি প্রাচীন অর্থ হল ‘ধারণাৎ ধর্মম্ ইত্যাহুঃ’-অর্থাৎ ধর্ম তাই যা মানুষ ও সমাজকে ধারণ বা রক্ষা করে।

‘ধৃ’ ধাতুর অর্থ ‘ধারণ’। যা ধারণ করে তাই ধর্ম। ধর্মকে বলা হয়েছে ‘সর্বস্য ধারকম্’। ধর্ম সবকিছুকেই ধারণ করে। ভারতীয় চিন্তাধারা অনুযায়ী ধর্ম প্রতিটি মানুষকে ধারণ করে এবং তার ফলে সমগ্র মানবসমাজকে ধারণ করতে সমর্থ হয়। ব্যক্তি ও সমাজের অস্তিত্ব ও ধারাবাহিকতার জন্য তাই ধর্মপালন করা কর্তব্য।

২. অর্থ- পুরুষার্থ প্রসঙ্গে ‘অর্থ’ বলতে জীবিকা অর্জনের উপায়কে বোঝান হয়। বিষয়-সম্পত্তি, জীবনধারণের আর্থিক উপকরণ সবই অর্থ। মহাভারতে অর্জুন ত্রিবর্গের মধ্যে অর্থের প্রাধান্যের কথা বলেছেন। সেখানে বলা হয়েছে ‘অর্থেভ্যো হি বিবৃদ্ধেভ্যঃ’। অর্থই উরী-সমৃদ্ধি আনে। চাণক্য বলেছেন- ‘ধর্মস্য মূলম্ অর্থঃ’।

৩. কাম- ‘কাম’ শব্দটির সাধারণ অর্থ কামনা, প্রেম, ইন্দ্রিয়সুখ, লোভ প্রভৃতি। পুরুষার্থের অঙ্গরূপে কামকে এই অর্থে নেওয়া হয় না। সাধারণ অর্থে যখন ‘কাম’ শব্দটিকে বিচার করা হয় তখন দেখা যায় যে, কাম যেন একটি প্রবৃত্তি যা চরিতার্থতার জন্য উন্মুখ।মানুষ যতই ইন্দ্রিয়কে পরিতৃপ্ত করে ইন্দ্রিয়ের ভোগলিপ্সা ততই বৃদ্ধি পায়।

৪.মোক্ষ – মোক্ষ কথাটির আর্থ হল দুঃখের আত্যন্তিক মুক্তি অর্থাৎ জীবন থেকে দুঃখের চির বিনাশ ঘটলে যে অবস্থার প্রাপ্তি হয় তাকে মোক্ষ বলে। মোক্ষ হল এমন একটি অবস্থা যা লাভের পর মানুষের আর অন্যকিছু কামনা করার থাকে না। এই অবস্থায় আত্মা গুন শূন্য হয়ে নিজ স্বরূপে অবস্থান করে। মোক্ষ প্রাপ্তিতে মানুষের  দুঃখের অবসান ঘটে। তাই মোক্ষ মানুষের কাছে পরম পুরুষার্থ।

Thanks For Reading:  পুরুষার্থ একাদশ শ্রেণী দর্শন সেমিস্টার ২।


অরো পড়ুন 


 

Leave a comment