সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা

আজকের বাংলা রচনা পর্বে যে রচনাটি আমরা উপস্থাপন করতে চলেছি তা হল –সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা | সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা 400 শব্দ ।

সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা
সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা

 

সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা


সৃষ্টির উদ্দেশ্য পাওয়া যায় না, নির্মাণের উদ্দেশ্য পাওয়া যায়। ফুল কেন ফোটে তাহা কার সাধ্য অনুমান করে, কিন্তু ইটের পাঁজা কেন পোড়ে, সুরকির কল কেন চলে, তাহা সকলেই জানে। সাহিত্য সেইরূপ সৃজনধর্মী।’      —–   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকাঃ

সৃষ্টির আদিতে মানুষ শুধু নিজেকে জেনে সন্তুষ্ট হয়নি, অপরকেউ জানতে চেয়েছে। এই জানার মাধ্যমে মানুষ যে আনন্দ পেয়েছে সেই আনন্দের আদিমতম রূপ হল সাহিত্য। তাই সাহিত্যের সাথে মানুষের আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে।সাহিত্য হল মানুষের হ্রদয় বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। সাহিত্য যেমন মানুষের আন্তর প্রবৃত্তিকে মানুষের সামনে তুলে ধরে ,তেমনই একটি সমাজেরও প্রতিফলন ঘটে সাহিত্যর মাধ্যমে।

সাহিত্য কীঃ

সাহিত্য শব্দেটি এসেছে ‘সহিত’ শব্দ হতে, যার ধাতুগত অর্থ হচ্ছে ‘ মিলন ‘। অর্থাৎ সাহিত্য মানুষের সাথে মানুষের, মানুষের সাথে সমাজের, আত্মার সাথে নিজের, প্রকৃতির সাথে মানব সত্তার মিলন ঘটায়। তাই আমাদের জীবনে সাহিত্যের অবদান যে আছে তা স্বীকার করতেই হয়।

সাহিত্যের বিস্তৃতিঃ

সাহিত্য শুধু মাত্র গল্প, গান, কবিতা ও উপন্যাসের মধ্যে আবদ্ধ কোন বিষয় নয়, সাহিত্য জল, স্থল ,আকাশ-বাতস, অর্থাৎ নিখিল বিশ্বে এর বিস্তার। এপ্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- ” যে দেশে সাহিত্যের অভাব সে দেশের লোক পরস্পর সজীব বন্ধনে আবদ্ধ নয়, তারা বিচ্ছিন্ন।” তাই সাহিত্য পাঠ না করলে মানুষ নিখিল বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে।

প্রয়োজনীয়তাঃ

সাহিত্য আমাদের সত্য উপলব্ধিতে সাহায্য করে, মনুষত্যের বিকাশ ঘটায়, ন্যায় অন্যায় ও ভালোমন্দের বিচারে সহযোগিতা করে। সাহিত্যপাঠের মধ্য দিয়ে আমরা জগৎকে জানি জীবনের চাহিদাকে জানি এবং মানুষের জীবন ধারাকে জানতে পারে তাই সাহিত্য পাঠ শুধু ব্যক্তিগত চাহিদাকে পরিতিপ্ত করে না, সাহিত্যপাঠের মধ্য দিয়ে অন্য দেশের জীবন জানতে পারি।

জীবন ও সঙ্গিঃ

সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়ে দুটি উদ্দেশ্য পূরণ হয়।

  1.  আমাদের চিন্তা ভাবনা ভবিষ্যৎ কালের জন্য লিপিবদ্ধ করে রাখা যায়।
  2. আমাদের সমাজ জীবনের রীতিনীতির প্রকাশ ঘটে। মানুষ যখন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে তখন সেই নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গি হয় সাহিত্য। এই দিক থেকে বিচার করে সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব পূর্ন।

সমাজ দর্পণঃ

ইংরেজিতে একটা কথা আছে ” Literature is the mirror of society ” অর্থাৎ সাহিত্য রূপ দর্পণে সমকালের জীবন ও সমাজ প্রতিফলিত হয়। সাহিত্যের সাথে যার বন্ধুত্য তা নির্ভরযোগ্য, কারণ সাহিত্য আমাদের সাথে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। সাহিত্য সমকালীন জীবন ও সমাজের দর্পণ সরূপ সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে আমরা যেমন জ্ঞান লাভ করতে পরি, তেমনই মানব মনের অনুভূতিগুলি জানতে পারি। তাই সাহিত্য পাঠ আমাদের আনন্দের কারণ হয়।

কল্পনা শক্তির বিকাশঃ

সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়ে কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে। সাহিত্য রচনার সময় কবি লেখকেরা মায়াজালে বা কল্পনা শক্তি দিয়ে সাহিত্যকে রঞ্জিত করে। তাই কবিদের সুরে সুর মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি –

“মন মোর মেঘের সঙ্গি, উড়ে চলে দিক দিগন্তের পানে / নিঃসীম শূন্য। ”

অবসরের সঙ্গিঃ

সাহিত্য পাঠ বিভিন্ন বয়সকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে। রূপকথা ও উপকথার গল্প শিশু মনকে আকৃষ্ট করে। ডিটেকটিভ ও অ্যাডভেনচার কিশোর জীবনকে আকৃষ্ট করে। প্রেমের সাহিত্য  তরুণ তরুণীকে আকৃষ্ট করে এবং সামাজিক রচনা পরিণত  বয়সকে আকৃষ্ট করে। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহিত্য পাঠ অবসর যাপনের সঙ্গি মাত্র।

চরিত্র গঠন ও সাহিত্যঃ

সাহিত্যের মাধ্যমে অনেক সময় নীতি বোধের প্রতিফলন ঘটে। ভালো -মন্দ, উচিত-আনুচিত, ন্যায়-অন্যায় প্রভুতি নৈতিক বোধের শিক্ষা সাহিত্যের মাধ্যমে লাভ করা যায়। এর ফলে মানুষ সমাজের ভাল-মন্দ বুঝতে পেরে নিজেকে বদলে নিয়ে সঠিক পথে চলতে শেখে। নিজের চরিত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

আত্মদর্শনঃ

সাহিত্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির চরিত্রকে তুলে ধরা হয়। এই চরিত্র গুলি একেকটি আয়নার মতো। আয়নাতে যেমন মানুষ নিজের প্রতিফলন দেখতে পায় ,তেমনই সাহিত্যের চরিত্ররূপ আয়নার মাধ্যমে মানুষ নিজের সত্তা বা আত্মাকে চিনতে পারে। নিজের জীবনের প্রতি এক দৃঢ় বিশ্বাস জাগ্রত হয়।

উপসংহারঃ

সাহিত্য পাঠ আমাদের হ্রদয়কে প্রস্ফুটিত  করে, মনকে ঐশ্বর্য  মন্ডিত করে এবং বুদ্ধিকে তীক্ষ্ণ করে। জীবনের নতুন মূল্য সাহিত্য থেকে আমরা পাই বলে বর্তমান নিঃসঙ্গ জীবনে সাহিত্য পাঠকে জীবনের সঙ্গি করা একান্ত প্রয়োজন, যে সঙ্গি মানুষকে তীপ্তি দেবে শান্তি দেবে। জীবনের কঠিন সত্যকে জয় করতে শেখায় সাহিত্য । তাই কবি গুরুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে-

“সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম

সে কখনো করে না বঞ্চনা।” 

  • Thanks For Reading : সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা। 
  • সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা- এই রচনাটি তোমাদের উপকারে এলে অবশ্যই বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করবে ।

আন্যান্য রচনা পড়ুনঃ 

১.তোমার প্রিয় কবি রচনা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২. ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা

৩.মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রবন্ধ রচনা

৪.একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা

৫.পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

৬.আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান- প্রবন্ধ রচনা

৭.একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৮. বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা

৯.পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা


 

Leave a comment