শিক্ষামনোবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি

একাদশ শ্রেণির এডুকেশন দ্বিতীয় সেমিস্টার | Unit – I: Education &Psychology | এডুকেশন Group C Unit -1 এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞান। এডুকেশন এই অধ্যায় থেকে বাছাই করা কিছু প্রশ্নপত্র দিয়ে সাজানো আজকের এই পর্ব –Education &Psychology  5 marks-এর descriptive questions আলোচনা করা হল। তোমরা নিজেরাই লক্ষ্য করবে তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শিক্ষামনোবিজ্ঞান একাদশ শ্রেণী semester 2 এই প্রশ্নপ্ত্র গুলি কতটা Important । আশা করছি , আমাদের এই পরিশ্রম থেকে তোমরা খুব উপকৃত হবে।

শিক্ষামনোবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি
শিক্ষামনোবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি

 

Contents hide
1 শিক্ষামনোবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি |

শিক্ষামনোবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি |

 

1. আগ্রহ কাকে বলে ? আগ্রহের  বৈশিষ্ট্য লেখ ?

উত্তরঃ  ব্যুৎপত্তিগত অর্থে ল্যাটিন ‘Interest’ কথার অর্থ হল ‘it matters’ বা ‘it concerns ‘ অর্থাৎ আমাদের অনুরাগ বা আগ্রহের বস্তু হল সেইসব যেগুলি আমাদের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। এক কথায় অনুরাগ বা আগ্রহ হল বাস্তব বা কাল্পনিক কোনো বস্তু ও তার অবস্থানের প্রতি আনন্দের অনুভূতি, যা ব্যক্তিকে কিছু করতে উদবুদ্ধ করে।

আগ্রহের বৈশিষ্ট্য গুলি হল-

আগ্রহের ধারাটি স্পষ্ট করতে এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল –

(i) আগ্রহ সম্পূর্নভাবে অর্জিত নয়, কারণ আগ্রহে বংশ ধারায় কিছু প্রভাব দেখা যায়। যেমন – সংগীতে অনুরাগী পরিবারের সন্তানদের শৈশব কাল থেকে সংগীতে অনুরাগ দেখা যায়।

(ii) একই পরিবেশে ব্যক্তিভেদে অনুরাগের ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

(iii) ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আগ্রহের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

(iv) আগ্রহ সৃষ্টির মূল কারণ হল চাহিদা। যখন কোনো ব্যক্তি কোনো বিষয়ে চাহিদা বোধ করে তখনই তার মধ্যে বিষয়টির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

(v) আগ্রহ ব্যক্তিত্বের একটি স্থায়ী মানসিক সংগঠন। বুদ্ধি ছাড়া অন্যান্য সব পরীক্ষার স্কোরের চেয়ে আগ্রহের স্কোরের স্থায়িত্ব বেশি।

(vi) অনেক সময় ব্যক্তি এমন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ দেখায় যার প্রতি তার সেন্টিমেন্ট যুক্ত থাকে। যেমন প্রবাসী বাঙালীদের বাংলা ও বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ থাকে।

 

2. শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের গুরুত্ব কী ?  

উত্তরঃ  শিখনের একটি আবশ্যিক শর্ত হল মনোযোগ, শিশুশিক্ষায় যে সমস্যা বেশি দেখা যায় তা হল মনোযোগ কেন্দ্রিক সমস্যা। শিশুমনোযোগী থাকে না বলেই শিখন যথার্থ হয় না। আর মনোযোগের অন্যতম ব্যক্তিনির্ভর শর্ত হল আগ্রহ। এই কথাটি মাথায় রেখে শিক্ষার্থীর বিষয় সম্পর্কে কীভাবে শিক্ষার্থীর মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা যায় , উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা যায়। সেই কারণে শিক্ষামনোবিজ্ঞান তত্ত্বে আগ্রহ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।

আগ্রহ বা অনুরাগ ছাড়া শিক্ষার্থী কোন বিষয়ই শিখতে পারে না। কারণ আগ্রহ তখনই জন্মায় যখন শিক্ষার্থীর ঐ বিষয়ে চাহিদা থাকে। এইজন্য মানসিক প্রক্রিয়াগুলির প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেমন – স্মৃতি, শিখন, প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই প্রথম ও উল্লেখযোগ্য পর্যায় হল শিক্ষার্থীর মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা।

আগ্রহ কাজে সক্রিয়তা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এইভাবে শিক্ষার জগতেও আগ্রহ সক্রিয়তা ও উদ্দীপনা হিসাবে কাজ করে। শিক্ষকের আগ্রহের প্রকাশ শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহী করে তুলতে সাহায্য করে। অর্থাৎ শিক্ষকের আগ্রহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। আবার শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ এজন্য শিক্ষালয়ে পাঠক্রমিক কার্যাবলীর সাথে সাথে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর জন্য শিক্ষার্থীর আগ্রহ বিশেষভাবে প্রয়োজন। একথায় বলা যায় যে, আগ্রহ শিক্ষণীয় উপাদানগুলি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই শিক্ষার্থী আগ্রহ নির্ভর শিক্ষণীয় উপাদানগুলিকে মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর সংগঠিত করা একান্ত প্রয়োজন।

 

3. শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের পরিধি আলোচনা করো ।

উত্তরঃ মনোবিদ্যার যে শাখা শিখন সামর্থ্য। শিক্ষণ প্দ্ধতি ও আচরণের উপর শিক্ষার প্রভাব ইত্যাদি নিরূপণের চেষ্টা করে তাকে শিক্ষা মনোবিদ্যা বলে। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি বলতে মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় গুলিকে বোঝানো হয়। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়গুলি হল –

  1. বুদ্ধি, স্মৃতি, কল্পনা, চিন্তা ইত্যাদি সহজাত মানসিক সামর্থ্য গুলি সম্পর্কে মনোবিদ্যায় বিশদে আলোচনা করা হয়।
  2. শিক্ষা মনোবিজ্ঞান শিশুর দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক বিকাশের জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন তার রূপরেখা তৈরি করে।
  3. ব্যক্তিগত পার্থক্যকে গুরুত্ব দিয়ে পাঠক্রম শিক্ষাদান , প্দ্ধতি মূল্যায়ন প্রভৃতির বিচার বিবেচনা করা শিক্ষার পরিধির অন্তগর্ত।
  4. শিখনের তত্ত্ব ও তার প্রয়োগ শিক্ষা মনোবিদ্যার অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
  5. শিক্ষা প্রযুক্তি কাকে বলে, কীভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ করা যায় এই সব বিষয়ের আলোচনা শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
  6. মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের পক্ষে প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য কী, মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণগুলি কি কি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী কীভাবে হওয়া যায় এই সবই শিক্ষা মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
  7. দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শিক্ষাবিদদের মনস্তাত্ত্বিক দিক উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা শিক্ষা মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।

 

4. শিক্ষা ও মনোবিদ্যার প্রকৃতি আলোচনা করো ? 

উত্তরঃ  শিক্ষা মনোবিদ্যার শুধুমাত্র মনোবিদ্যার জ্ঞানকে প্রয়োগের চেষ্টা করা হয় না। শিখন সামর্থ্য , শিক্ষণ প্দ্ধতি ও আচরণের উপর শিক্ষার প্রভাব ইত্যাদি নিরূপণের চেষ্টা করা হয়। তাই বলা হয় মনোবিদ্যার যে শাখা শিক্ষণ সামর্থ্য , শিক্ষণ প্দ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করে তাকে শিক্ষণ মনোবিদ্যা বলে।

শিক্ষা মনোবিদ্যাকে পৃথক জ্ঞানের ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর কারণ হল এই বিজ্ঞানের নিজস্ব অনুশীলন প্দ্ধতির প্রবর্তন হয়েছে। শিক্ষা মনোবিদ্যার নিজস্ব প্দ্ধতি কোনো বিশেষ সত্যের অনুসন্ধান সম্ভব এবং স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণও সম্ভব। সুতরাং যার নিজস্ব অনুশীলন প্দ্ধতি আছে। তা অন্য কোনো বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে না। তাই শিক্ষা মনোবিদগণ একে পৃথক বিজ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করেছেন।

শিক্ষা বিজ্ঞান তার নিজস্ব গবেষণা এবং অনুসন্ধান দ্বারা মানুষের আচরণ সম্পর্কে যে সব তথ্য সংগ্রহ করেছে, শুধুমাত্র তার থেকেই মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এই কারণে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানকে কেবলমাত্র প্রয়োজনমূলক বিজ্ঞান না বলে গবেষণামূলক বিজ্ঞান বলা যেতে পারে।

 

5. শিক্ষা ও মনোবিদ্যা কীভাবে শিক্ষার সমস্যা  সমাধানে কাজ করে ?   

উত্তরঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে মনোবৈজ্ঞানিক প্দ্ধতি অবলম্বন করে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা যায়।

প্রথমত,

শিশু মন অতিমাত্রায় সংবেদনশীল ও অনুভূতি প্রবণ। শিশুর জীবন মূলত সুখ সূত্র দ্বারা চলে। যা সুখকর নয়, তা শিশুর জীবনে কাম্য হতে পারে না। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাদান যদি শিশুর কাছে বেদনাদায়ক হয় তা হলে শিশুরা কখনই শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হতে পারে না। এটা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে একটি বড়ো সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য এমন মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যার মাধ্যমে শিক্ষার বিষয় বস্তু শিশুদের কাছে সুখকর হয়ে ওঠে। এর জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শাসন। তিরস্কার ও শাস্তিদান প্রভৃতি শিশুর শিক্ষনের সহায়ক হয়।

দ্বিতীয়ত,

শিক্ষাক্ষেত্রে সকল শিশুদের জন্য একই রকমের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন আছে। কিন্তু শিশুর সামর্থ্য ভিন্ন ভিন্ন এর ফলে শিক্ষণ প্রত্যেক শিশুর যথাযথ হতে পারে না। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে মনোবৈজ্ঞানিক প্দ্ধতি অবলম্বন করে শিশুর সামর্থ্যের  বিচার করে , যদি শিক্ষা দেওয়া যায় তাহলে সেই শিক্ষণ উত্তম হয়। এই জন্য শিক্ষা মনোবিদ্যার শিশুদের বুদ্ধ্যঙ্ক (IQ) নির্ণয় করে বিদ্যালয় নির্বাচন করা দরকার।

তৃতীয়ত,

শিক্ষা গ্রহণের শেষে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নির্বাচন করে। বৃত্তি নির্বাচন করা হয় শিক্ষার্থীর বিষয়ের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। দক্ষতা আবার নির্ভর করে অনুশীলনের উপর। লেখাপড়ায় যার অনুরাগ নেই পরবর্তী জীবনে যে শিক্ষাকতার বৃত্তি গ্রহণ করলে কখনই সফল হতে পারে না। এটা জীবনের এক চরম সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীর অনুরাগ নির্বাচন করা দরকার। তাই কোনো ছাত্রছাত্রীর কোনো বিষয়ে অনুরাগ আছে তা শিক্ষা মনোবিদ্যার দ্বারা নির্বাচন করা যায়।

 

 6. পরিণমনের সঙ্গে এর সম্পর্কে কী ? 

উত্তরঃ  শিখন ও পরিণমন এই দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকলেও, এদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কখনও কখনও এটা নির্ধারণ করা সহজ হয় না যে, আচরণগত পরিবর্তন শিখন না পরিণমনের ফল। শিশু তখনই কথা বলতে শেখে যখন সে পরিণমনের বয়স স্তরে পৌঁছায়। আবার এ কথাও ঠিক যে বয়স স্তরে পৌঁছে গেলেই শিশুর ভাষা শিক্ষা হয়ে যায় না, তাকে ভাষা শেখাতে হয়। অর্থাৎ ভাষার ক্ষেত্রে শিশু যেটি শোনে সেটি শিশু বলতে পারে। এই আলোচনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে শিখন ও পরিণমন পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ।

শিখন প্রক্রিয়াকে কার্যকরী করার জন্য পরিণমের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির পরিণমন প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির পরিণমন তাঁর শিখনের সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। শিশু যা শিখতে চায় তা শেখার জন্য শিশুর দৈহিক ও মানসিক পরিণমন আবশ্যক। তা না হলে কার্যকর শিখন সম্ভব নয়। যেমন- সাঁতার কাটা শেখার জন্য বিশেষ কতকগুলি দৈহিক ও সঞ্চালনমূলক আচরণ সম্পূর্ণ করতে পারা, একান্ত প্রয়োজন এবং যতক্ষণ না শিশু স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার ফলে এই বিশেষ আচরণগুলি সম্পন্ন করার ক্ষমতা অর্জন করছে ততক্ষণ তার পক্ষে সাঁতার শেখা সম্ভব নয়।

অর্থাৎ নির্দিষ্ট বয়সে শিশুর মধ্যে বিশেষ বৃদ্ধি ও বিকাশ দেখা দেয়। এবং তার ফলে শিশু বিশেষ আচরণ সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়। অতএব,  এ থেকে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, প্রত্যেকটি আচরণ শেখার জন্য শিখন ও পরিণমন দুটি প্রক্রিয়া নিরবিচ্ছন্ন ভাবে কাজ করে।

শিখন যেমন পরিণমনের দ্বারা কার্যকরী হয়, একই ভাবে পরিণমন ও শিখনের দ্বারা কার্যকারী হতে পারে। যেমন জটিল, দৈহিক, সঞ্চালনমূলক কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে শিখনের প্রভাব দেখা যায়। শিখনের মাধ্যমে ব্যক্তির কর্মেন্দ্রীয় ও জ্ঞানেন্দ্রীয় গুলির মধ্যে সমন্বয় ঘটানো যায়। তবে এই সমন্বয় আসতে অনেক দেরি হয়। তাই মনোবিদগণ মনে করেন , পরিণমন সম্পূর্নভাবেই শিখনের উপর নির্ভরশীল না হলেও, সেই প্রক্রিয়াকে শিখনের মাধ্যমে তরান্বিত করা যায়।

শিশুর ক্রমাগত বিকাশ শিখন ও পরিণমন এই দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনটির প্রভাব বেশি এ বিষয়ে মনোবিদগণ সিদ্ধান্ত করেন যে, শিশুর আত্মবিকাশ ও শিশুকর্মে শিখন ও পরিণমন উভয়েরই মিলিত প্রভাব আছে। কোন বয়সে শিক্ষার্থীকে কোন বিষয়টি শিক্ষা দিতে হবে এবং কীভাবে শিক্ষা দিলে উপযুক্ত ফলাফল পাওয়া যাবে তা অনেকাংশে শিক্ষার্থীর জৈবিক পরিণমনের উপর নির্ভর করে। আবার এ জন্য শিখন প্রক্রিয়াকে উপযুক্ত সময়ে আরম্ভ করে উপযুক্ত সময়ে শেষ করতে হবে । আচরণ শিক্ষায় পরিণমনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুতরাং এই দুইয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

7. প্রচেষ্টা ও ভুল সংবেদন তত্ত্ব বলতে কী বোঝ ? প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন সম্পর্কিত তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো ?

 

উত্তরঃ বারবার প্রচেষ্টা ও ভুলের মধ্যে থেকে নির্ভুল প্রতিক্রিয়াটি নির্দিষ্ট করা এবং ভুল প্রচেষ্টাগুলিকে বাতিল করাকেই প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্ব বলে।

প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন সম্পর্কিত তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য গুলি হল – 

থর্নডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন তত্ত্ব হল একটি যান্ত্রিক অনুশীলন নির্ভর প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে প্রাণীর প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে ভুল প্রচেষ্টা ক্রমশ নির্দিষ্ট হয়ে শিখন সম্পন্ন। হয়। থর্নডাইকের এই তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করলে হয়।

(i) প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন প্দ্ধতিটি শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার উপর নির্ভরশীল। শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা আবার শিক্ষার্থীর চাহিদার উপর নির্ভরশীল। যেমন- থর্নডাইকের পরীক্ষায় বিড়ালটি যদি ক্ষুধার্ত না থাকত , তাহলে খাদ্যের জন্য বিড়ালটি বাইরে আসতে সক্রিয় হত না।

(ii) প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখন প্রক্রিয়ায় চিন্তা, বুদ্ধি, পরিকল্পনা ইত্যাদির কোনো ভূমিকা নেই। সম্পূর্ণ যান্ত্রিক উপায়ে ভুল প্রচেষ্টাগুলি বাতিল হয় এবং সঠিক প্রচেষ্টা নির্দিষ্ট হয়।

(iii) প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বটি একটি ক্রমহ্রাসমান প্রক্রিয়া। কারণ এই প্রক্রিয়ার প্রচেষ্টার সংখ্যা এবং সময় ক্রমশ হ্রাস পায়।

(iv) এই প্দ্ধতিতে একটি সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে বারবার সংযোগ ঘটিয়ে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়াটি শনাক্ত করা হয়।

(v) প্রচেষ্টা ও ভুলের প্দ্ধতিতে শিখনের সময় প্রাণী একই পরিস্থিতিতে নানা রকমের আচরণ করে। অর্থাৎ বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

(vi) এই প্রকার শিখনে কোন প্রতিক্রিয়াগুলি বর্জিত হবে এবং কোন প্রতিক্রিয়াটি গৃহীত হবে তা প্রাণীর প্রচেষ্টার ফলের উপর নির্ভর করে।

(vii) এই প্রকার শিখনে প্রাণী সামগ্রিকভাবে প্রতিক্রিয়া করে না, আংশিকভাবে প্রতিক্রিয়া করে। যেমন থর্নডাইকের পরীক্ষায় বিড়ালটি প্রথমে খাঁচার বিভিন্ন অংশে লক্ষ্যহীনভাবে ছোটাছুটি করেছে। তারপর ক্রমশ নির্দিষ্ট অংশে হঠাৎই পা দিয়ে খাঁচার বাইরে এসে খেলছিল।

(viii) এই প্রকার শিখনে প্রাণীর বা শিক্ষার্থীর জৈব মানসিক প্রস্তুতির দরকার হয়।

(ix) এই প্দ্ধতি শিখনে প্রাণী যখন কোনো নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় তখন পূর্বের কোনো অবস্থার সঙ্গে মিল খুঁজে বার করে প্রাণী প্রতিক্রিয়া করে।

(x) এই প্দ্ধতির শিখনে প্রাণী জানা থেকে অজানার দিকে অগ্রসর হয়।

(xi) এই প্দ্ধতি সর্বজনীন কারণ সমস্যামূলক জটিল পরিস্থিতি যখনই দেখা দেয় তখনই প্রাণী এই প্দ্ধতির সাহায্য নেয়।

8. প্রচেষ্টা ও ভুল সংশোধন এর মূল সূত্রগুলি লেখ ।

উত্তরঃ শিখনের কৌশল বিভিন্ন পরীক্ষা করে থর্নডাইক শিখন প্রণালীকে তিনটি ক্ষুদ্র বা নীতির দ্বারা ব্যাখা করেছেন। এই সূত্রগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

(i) ফল লাভের সূত্র

ফল লাভের সূত্র অনুসারে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যে সংযোগটি সুখজনক বা তৃপ্তিদায়ক সেটি ক্রমশ দৃঢ়তর হয়, আর যে সংযোগটি কষ্টদায়ক বা বিরক্তিকর তা ক্রমশ দুর্বলতর হয়। যেমন – থর্নডাইকের পরীক্ষায় বিড়াল খাঁচা থেকে বেরিয়ে এলে প্রত্যেকবারই খাদ্য পায়। তাই প্রত্যেকবার যতদূর সম্ভব বিড়ালটি সহজ পথে খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। যদি খাদ্য পাওয়ার তৃপ্তি না থাকত, তাহলে যে সঠিক প্রতিক্রিয়া গুলিতে গ্রহণ করত না।

(ii) অনুশীলনের সূত্র

এই নীতি অনুসারে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে বারবার সংযোগ ঘটলে সংযোগটি দৃঢ়তর হয়, আর উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে কিছুকাল সংযোগের অভাব ঘটলে তাদের মধ্যে সংযোগ দুর্বলতর হয়, থর্নডাইকের অনুশীলনের সূত্রে দুটি অংশ আছে। প্রথমটি হল ব্যবহারের নীতি যে নীতিতে বলা হয়েছে, উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়া বারংবার করা হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়াটি শক্তিশালী হয়। আর দ্বিতীয় অংশটা হল অব্যবহারের সূত্র এই সূত্রে বলা হয়েছে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়া কিছুকাল ব্যবহার না করা হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়াটি দূর্বল হয়ে পড়ে।

(iii) প্রস্তুতির সূত্র

কোনো কাজ করার জন্য যদি প্রাণীর প্রস্তুতি থাকে, তাহলে সেই কাজ সম্পাদন করতে পারলে প্রাণের তৃপ্তিবোধ হয়, আর যে কাজ করার জন্য প্রাণীর প্রস্তুতি থাকে না সে কাজ সম্পাদন করতে প্রাণীর বিরক্তি বোধ হয়। অতএব প্রস্তুতি শিখন প্দ্ধতিকে সহজতর করে তোলে। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে থর্নডাইক ‘প্রস্তুতি’ বলতে বিশেষ করে দেহের অর্থাৎ ‘নার্ভতন্ত্রের’ প্রস্তুতিকে ইঙ্গিত করেছেন।

 

9. প্রচেষ্টা ও ভুল সংশোধন তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য ব্যাখা করো ?

উত্তরঃ

প্রচেষ্টা ও ভুল সংশোধনের তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্যঃ  

থর্নডাইকের শিখন সূত্রগুলির শিক্ষাক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে –

(i) উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে বাঁধন সুদৃঢ় করার জন্য অভ্যাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শিক্ষার্থী কোনো বিষয় যদি বারবার অভ্যাস করে তাহলে বিষয়টি শিক্ষার্থীর কাছে আয়ও গড়া সম্ভব হয়। অন্যদিকে অনভ্যাসের ফলে পাঠ্যবিষয়বস্তু আয়ত্তাধীন থাকে না।

(ii) শিক্ষাক্ষেত্রে ও প্রতিক্রিয়ার যথাযথ সম্বন্ধ স্থাপনের ক্ষেত্রে তৃপ্তিদায়ক বা বিরক্তিকর এই দুই অনুভূতি নির্ভর করে শিক্ষার্থীর প্রস্তুতির উপর এই শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে তবে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে দৈহিক প্রস্তুতি ছাড়াও মানসিক প্রস্তুতি দরকার।

(iii) শিখন তখনই সম্ভব হয় যখন এর ফল তৃপ্তিদায়ক হয় অর্থাৎ তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করে এবং শিক্ষার্থীর তুলনামূলকভাবে সহজে শিক্ষা অর্জনে সামর্থ্য হয়।

 

10. অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে শিখন বলতে কি বোঝ ?

উত্তরঃ  সমস্যামূলক পরিস্থিতির সামগ্রিকরূপ উপলব্ধি হওয়ার ফলে প্রাণীর সমস্যা সমাধান করতে পারে। এই উপলব্ধি শিক্ষার্থীর মধ্যে হঠাৎ আসে এই ধরনের প্রত্যাক্ষণকে গেস্টাকট মনোবিদগণ অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে শিখন বলেছেন। এই মতবাদের প্রবক্তরা হলেন ওয়ার দাইমার কফকা ও কোহলার।

পরীক্ষা

অন্তদৃষ্টিমূলক শিখনের ক্ষেত্রে কোহোলারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হল সুলতান নামে এক বুদ্ধিমান শিম্পাঞ্জিকে নিয়ে। এর পরীক্ষার জন্য সুলতানকে তিনি একটি খাঁচার মধ্যে রেখে এবং দুটি বাঁশের লাঠি তার মধ্যে রাখেন। লাঠি দুটি এমনভাবে তৈরি যে একটি লাঠির প্রান্ত অপর লাঠির মধ্যে ঢুকিয়ে জোর দেওয়া যায়। খাঁচার বাইরে এমন দূরত্বে খাদ্যবস্তু রাখা হয় যাতে দুটি লাঠি জোড়া দিলে খাদ্যবস্তুটিকে কাছে টেনে আনা যায়।

এমত অবস্থায় সুলতান প্রথমে আলাদা আলাদা ভাবে দুটি লাঠি দিয়ে খাদ্যবস্তু টানার চেষ্টা করল কিন্তু তাতে কোনো লাঠি খাদ্যবস্তুর কাছে ঠেলে দিল বটে কিন্তু খাদ্য পেল না, এভাবে বহু চেষ্টা করার পর যখন কিছুই ফল হল না তখন সুলতান খাদ্য পাওয়ার আশা ছেড়ে হতাশ হয়ে বসে রইল এবং কিছুক্ষণ পর সুলতান বাঁশের লাঠি দুটি নিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ দুটি লাঠিকে জোড় দিয়ে লম্বা লাঠিতে পরিণত করল তখন সঙ্গে সঙ্গে ওই জোড়া লাঠি দিয়ে সুলতান খাবারটিকে টেনে নেয়।

 

11. এই শিখনের পরীক্ষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ আলোচনা করো ? অথবা  শিখনের গেস্টাল্ট তত্ত্বটি আলোচনা করো ।

 

উত্তরঃ এই পরীক্ষা থেকে কোহোলের সিদ্ধান্ত করেন সুলতান অর্ন্তদৃষ্টির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে, প্রচেষ্টা ও ভুল সংশোধনের মাধ্যম নয় আর সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সামগ্রিক রূপটি হঠাৎ- ই উপলব্ধি হয় যাকে বলে অর্ন্তদৃষ্টি ।

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব

অর্ন্তদৃষ্টি শিখন কৌশলকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গেলে নিম্নলিখিত উপায় গুলি অবলম্বন করতে হবে।

(i) সামগ্রিকতাবোধ ও শিক্ষা

বিদ্যালয়ে শিখনের পরিস্থিতির সামগ্রিকতার উপর নির্ভরশীল এই কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের কাছে সমস্যা বা বিষয়বস্তু ক্ষুদ্র অংশে উপস্থাপন না করে সামগ্রিকভাবে ও অর্থপূর্ণভাবে উপস্থাপিত করতে হবে। যেমন – বীজগণিতের অঙ্ক করানোর সময় শুধুমাত্র মান নির্ণয় কর x+7=8 এই ধরনের সাংকেতিক সমস্যা দিলে চলবে না সমস্যাকে তার প্রকৃত তাৎপর্যের পরিপেক্ষিতে উপস্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ বলে দিতে হবে কোন সংখ্যার সাথে 7 যোগ করলে 8 হয় তবে ছাত্ররা সমস্যা সামগ্রিকতা বুঝতে পারবে।

(ii) সম্পর্ক স্থাপন ও শিক্ষা 

এই সংবাদ অনুযায়ী শিখন অর্ন্তদৃষ্টির জন্য ঠিকই, কিন্তু সেই অর্ন্তদৃষ্টি আসে সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে অংশগুলির মধ্যে যথার্থ সম্বন্ধ স্থাপনের মধ্যে , সুতরাং শিক্ষকের কর্তব্য হবে এই সম্পর্ক স্থাপনের উপর গুরত্ব দেওয়া। অর্থাৎ বিষয়বস্তু এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যার ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে নিজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা গ্রহণ করতে পারে তাই শিক্ষককে বিষয়বস্তু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে।

(iii) শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা ও শিক্ষা 

সামগ্রতাবাদের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা ও আগ্রহ এই মতবাদ অনুযায়ী শিক্ষার্থী নিজেও শিখন পরিস্থিতির সক্রিয় অঙ্কন তাই শিক্ষকের বিশেষ কর্তব্য হল শিক্ষার্থীকে সমস্যামুখী করা এবং সমস্যা সমাধানে আগ্রহ করে তোলা।

(iv) সামান্যীকরণ ও পৃথকীরণ 

সমগ্রতাবাদীগণ শিখনের ক্ষেত্রে সামান্যীকরণ ও পৃথকীকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে শিখনীয় বিষয়বস্তুর অন্তর্গত অপ্রয়োজনীয় সাধারণধর্মী বৈশিষ্ট্য গুলিকে পৃথক করে একটি সাধারণ ধারণা গঠন করতে পারে। সে বিষয় শিক্ষকদের যত্নবান হতে হবে।

 

12. অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখনের ধারণাটি কী ?

উত্তরঃ জার্মান ‘গেস্টাল্ট’(gestalt) শব্দের অর্থ হল অবয়ব, আকৃতি বা রূপরেখা (Structure, configuration)। উল্ফগ্যাং কোহলার (Wolfgang Kohler), কার্ট কফ্‌কা (Kurt koffka), ম্যাক্স ওয়ার্দিমার (Max Wertheimer) এই তিন জার্মান মনোবিজ্ঞানীর পরীক্ষালব্ধ ফল হল গেস্টাল্ট মতবাদ (Gestalt theory)।

গেস্টাল্টবাদীদের বা সমগ্রতাবাদীদের মতে, আমরা যখন কোনো জিনিস প্রত্যক্ষ করি তখন সমগ্রভাবে করি, খন্ডাংশের ওপর বা বিচ্ছিন্নভাবে করি না। গেস্টাল্টবাদীরা সমগ্রতাভিত্তিক প্রত্যক্ষণের পক্ষপাতী, তাঁদের অনুরাগ বিচ্ছিন্নধর্মী নয়, তাঁদের অনুরাগ সমগ্র বিষয়টিতে পরিব্যপ্ত। যেমন কালী প্রতিমার মুন্ডমালা ভিন্ন ভিন্ন মুন্ডের সমাহার হলেও আমাদের প্রত্যক্ষণের সমগ্র মালাটিই আসে, মুন্ডগুলিকে পৃথক পৃথকভাবে দেখি না। অর্থাৎ মুন্ডমালটি খন্ডাংশগুলির সুসংহতরূপ।

গেস্টাল্টবাদী মতে, সমগ্র বস্তুটির বৈশিষ্ট্য অংশগুলির বৈশিষ্ট্য থেকে পৃথক। অর্থাৎ সমগ্রটির বৈশিষ্ট্য অংশগুলির বৈশিষ্ট্যের সমাহারের ওপরে আরও কিছু।

গেস্টাল্টবাদীদের মতে, শিখন কোনো যান্ত্রিক বা পরস্পর সম্পর্কহীন প্রক্রিয়া নয়। তাঁদের মতে, খন্ডাংশের সঙ্গে সমগ্র সমস্যার পূর্ণরূপের সমন্বয়সাধনে গড়া উপলব্ধি হল অন্তর্দৃষ্টি (Insight)।

অন্তর্দৃষ্টি (Insight) অভিজ্ঞতালব্ধ ক্ষমতা, সহজাত নয়। অতীত অভিজ্ঞতা অর্থাৎ, পশ্চাৎদৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ চিন্তন অর্থাৎ সম্মুখ দৃষ্টি এই দুইয়েব প্রয়োজন হয়। সুতরাং Insight = Hind Sight for sight. গেস্টাল্টবাদীদের মতানুযায়ী, অন্তর্দৃষ্টি জাগরণের জন্য পৃথকীকরণ (Abstraction) এবং সামান্যীকরণ (Generalization) উভয়ই প্রয়োজন। পৃথকীকরণ (Abstraction) প্রক্রিয়া হল গ্রহণ – বর্জনের প্রক্রিয়া, যেখানে প্রাণী কর্তৃক শিখন উপযোগী বৈশিষ্ট্যগুলি গৃহীত হয় এবং অপ্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলি বর্জিত হয়।

 

13. সংবেদন কাকে বলে ? সংবেদনের বৈশিষ্ট্য লেখো ।

উত্তরঃ  কোন ইন্দ্রিয় উদ্দীপিত হলে সেই উদ্দীপনা অন্তর্বাহী স্নায়ু দ্বারা মস্তিষ্কে পৌছায় এবং মস্তিষ্কের একটি বিশেষ স্থানকে উত্তেজিত করার ফলে যে প্রাথমিক চেতনার সৃষ্টি হয় তাঁকে সংবেদন বলে ।

সংবেদনের বৈশিষ্ট্যগুলি হলঃ  

জ্ঞানের প্রাথমিক ধাপ হিসাবে সংবেদনের বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল

(i)  জ্ঞানের প্রক্রিয়ার তিনটি স্তরের মধ্যে প্রাথমিক স্তর হল সংবেদন । পরবর্তী দুটি স্তর প্রত্যক্ষণ ও ধারণা , সংবেদনের উপর নির্ভরশীল ।

(ii)  সংবেদনকে বিশ্লেষণ করলে পাঁচটি উপাদানের অস্তিত্ব দেখা যায় । যথা – উদ্দীপক , ইন্দ্রিয় , সংজ্ঞাবাহ স্নায়ু , স্নায়ু কেন্দ্র ও প্রতিক্রিয়া ।

(iii) সংবেদন উদ্দীপক নির্ভর , অভ্যান্তরীণ বা বাহ্যিক কোন না কোন উদ্দীপকের সঙ্গে জ্ঞানেন্দ্রীয় সংযোগ হলে উদ্দীপকের সৃষ্টি হয় ।

(iv) সংবেদন খুবই ক্ষণস্থায়ী , প্রত্যক্ষণ ও অনুভূতি মুহূর্তের মধ্যে সংবেদনের সঙ্গে যুক্ত হয় ।

(v) সংবেদন হল বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা । যখন সংবেদন গুলি একত্রিত হয় তখন তাঁকে র সংবেদন বলা যায় না ।

(vi) সংবেদনে মন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থাকে না খুব কম মাত্রায় হলেও সক্রিয় থাকে ।

(vii) সংবেদন হল ভৌত ধারণা ও মানসিক প্রতিক্রিয়ার মিথস্ক্রিয়ার ফল ।

14. শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের গুরুত্ব আলোচনা করো ।

উত্তরঃ  সংবেদন জ্ঞান ও শিক্ষার  তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধারণাকে নানান দিক থেকে প্রভাবিত করে , এই প্রভাবের কয়েকটি দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হল

(i) আধুনিক কালে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ব্যাবহার করে থাকে ।এর মূল ধারণা হল ইন্দ্রিয়গুলিকে বেশী করে কাজে লাগিয়ে সংবেদনকে শক্তিশালী করা ।

(ii) সক্রিয়তা নীতি শিক্ষা বিজ্ঞানে একটি পরিক্ষীত সত্য । সংবেদন গ্রহণে ছাত্রছাত্রীরা সক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করলে শিক্ষা অনেক বেশী ফল্প্রসূত হয় ।

(iii) আধুনিক শিক্ষার মতে শিক্ষার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ গঠনই শিক্ষার লক্ষ্য । সঠিক ও শক্তিশালী সংবেদন শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সাহায্য করে ।

(iv) কোন বস্তুকে বিভিন্ন ইন্দ্রিয় জাত সংবেদনের মাধ্যমে উপস্থিত করলে সেই বস্তু জ্ঞান আরও স্থায়ী ও সঠিক হবার সম্ভবনা থাকে । এই কারণে আধুনিক শিক্ষাবিদরা ‘teach through the senses’ এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন ।

 

15. ধারণা কাকে বলে ? ধারণার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো ?

উত্তরঃ 

ধারণা

ধারণা হল একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা ভাবের মধ্যে সাদৃশ্য চিহ্নিত করে । এবং অন্যদের থেকে তাঁকে পৃথক করে বিশেষ শ্রেনিভুক্ত করে । যেমন-একটি লাল গোলাপের ধারণা ।

ধারণার বৈশিষ্ট্য 

ধারণা গঠনের ফলে আমরা সহজে কোন বস্তুকে চিনতে পারি , ধারণার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(i) প্রত্যক্ষণ জাত

কতকগুলি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণের মধ্য দিয়ে ধারণার সৃষ্টি হয় । যেমন- কোন প্রাণীর বৈশিষ্ট্য গুলি যথাযথভাবে প্রত্যক্ষণ করলেই তবে প্রাণীটি সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট্য ধারণা করা সম্ভব ।

(ii) জটিল প্রক্রিয়া

ধারণা গঠনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এই প্রক্রিয়ার স্তরগুলি হল , পর্যবেক্ষণ , বিশ্লেষণ , তুলনা , পৃথকীকরণ , সামাণ্যীকরণ, নামকরণ ।

(iii) ধারণার প্রকার

ধারণা দুই প্রকার , যথা – মূর্ত ধারণা ও বিমূর্ত ধারণা । ঘর , বাড়ি , চেয়ার , টেবিল , ইত্যাদি মূর্ত ধারণা । আর স্নেহ , ভালোবাসা ,আকাশ কুসুম , পরী , ফুলেরবৃষ্টি ইত্যাদি হল বিমূর্ত ধারণার উদাহরণ ।

(iv) ব্যক্তিভেদে পৃথক

ব্যক্তিভেদে একই বস্তুর ধারণা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে । যেমন- একই পাত্রের রান্না ভিন্ন জনের কাছে ভিন্ন স্বাদের হতে পারে ।

(v) যথার্থতা 

কোন ধারণার যথার্থতা নির্ভর করে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ সেই ধারণার অর্থ ও সংজ্ঞার ক্ষেত্রে কতখানি একমত হয়েছেন ।

 

16. শিক্ষা ক্ষেত্রে ধারণার গুরুত্ব লেখ ।

উত্তরঃ  শিক্ষাক্ষেত্রে ধারণার প্রভাবগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-

প্রথমত , 

নতুন কিছু শিখতে গেলে শেখনীর বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীর প্রাথমিক আছে কিনা নেই তা কি পরিমাণে আছে তা জানা একান্ত প্রয়োজন ।

দ্বিতীয়ত,  

ধারণা শিখন পরিস্থিতিকে সহজ করে তোলে , জ্ঞান ,বোধ , দক্ষতা , ইত্যাদি যেকোনো ধরনের শিখনে ধারণা বিশেষভাবে সাহায্য করে ।

তৃতীয়ত,

বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা যে কোন শিক্ষার্থীর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো এক পরিস্থিতি থেকে অন্য পরিস্থিতিতে ধারণা স্থানান্তরিত করতে পারে ।

চতুর্থত,

বিভিন্ন ধরেনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারণার সংমিশ্রণে জটিল ধারণা উপস্থিত করার পূর্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারণা গুলি গঠন করা প্রয়োজন ।

পঞ্চমতম,  

ধারণা আমাদের শক্তি ও পরিশ্রমকে সাশ্রয় করে , অর্থাৎ ধারণা প্রয়োগ করে কম পরিশ্রমের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে ।

 

17. থর্নডাইকের শিখনের সূত্রগুলির তাৎপর্য লেখো ।

উত্তরঃ  থর্নডাইকের শিখনসূত্রগুলির শিক্ষা ক্ষেত্রে যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে –

প্রথমত ,

অনুশীলন বা বার বার অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের শিখন দৃঢ় হয় । শ্রেণী কক্ষে শিক্ষা দানের সময় এই সুত্র মনে রেখে শিক্ষক যদি শিক্ষাদানের বিষয় গুলিকে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা করেন তাহলে শিখন ভালো হবে । এমনকি বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনেক ভুলের সংশোধন হবে ।

দ্বিতীয়ত ,

শিখন তখনই সম্ভব হয় যখন শিখনের ফল তৃপ্তিদায়ক হয় । উপযুক্ত ফল লাভ না হলে শিখন বাঁধাপ্রাপ্ত হয় । তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি শিক্ষা কর্মীদের শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করে ।

তৃতীয়ত ,

শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের পূর্বে শিক্ষক যদি পূর্ব দিনের বিষয় গুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করে তবে তা শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করে দেয় । তাহলে শিক্ষার্থীর শিখন সামগ্রিক অর্থে সম্পন্ন হয় ।

চতুর্থত , 

শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন সমস্যার সমাধান করতে দিলে তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং ভুল গুলিকে সংশোধন করে নিতে পারে । যে শিক্ষার্থী খুব তাড়াতাড়ি ভুল সংশোধন করে নিতে পারে তার শিক্ষার প্রতি আরও আগ্রহ বৃদ্ধি পায় ।

 

18. শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো ? Click Here

19. শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের  পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো। Click Here

20. শিক্ষা মনোবিজ্ঞানকে একটি পৃথক শাখা বলা হয় কেন ? Click Here

21. শিখন কাকে বলে ?  শিখনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ ? Click Here

22. প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্য। সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো । Click Here

23. মনোবিজ্ঞানকে আচরণ বিজ্ঞান বলা হয় কেন ? Click Here

24. থর্নডাইকের শিখন তত্ত্বের মূল সূত্র গুলি কি কি। Click Here 

 

Thanks For Reading :  শিক্ষামনোবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি |


Read More Subject:


 

 

Leave a comment