Class 11 Second Semester WBCHSE দর্শন সিলেবাস 2024-25 অনুযায়ী দর্শন শাস্ত্রের Unit –২ এ রয়েছে Introduction to Ethics -এর Topic No : 2 গীতাকে অনুসরণ করে নিষ্কাম কর্মের ধারণা ব্যাখ্যা কর
আলোচনার এই পর্বে একাদশ শ্রেণি দর্শন ২য় সেমিস্টার -এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ভারতীয় নীতিবিদ্যা নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব । এই অংশটি থেকে তোমাদের Total 2 marks এর রয়েছ।
WBCHSE XI 2nd Semester সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই Topic থেকে কিছু সংক্ষিপ্ত ও ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করেছি । একাদশ শ্রেণি দর্শন ভারতীয় নীতিবিদ্যার suggestion স্বরূপ এই প্রশ্ন গুলো তোমরা ভালোভাবে প্রস্তুত করলেই ,পরীক্ষায় নিশ্চয় সফল হবে ।
গীতাকে অনুসরণ করে নিষ্কাম কর্ম | একাদশ শ্রেনীর দর্শন semester-2
২-Marks
1.কর্তব্যের জন্য কর্তব্য করার অর্থ কী?
বিবেকের নির্দেশ অনুসারে কাজ করাই হল কর্তব্যের জন্য কর্তব্য করা। মানুষ যে কর্ম ইন্দ্রিয় জনিত জাগতিক বাসনাগুলিকে জয় করে করেন তা কর্তব্যের জন্য কর্তব্য সম্পাদনে যোগ্য হয়। জগতের মঙ্গল করাই হবে মানুষের কর্তব্য। যে কাজ এই লক্ষ্যাভিমুখী সেই কাজই মঙ্গলজনক কাজ।
2.গীতায় কেন্দ্রীয় ধারণাটি কী?
গীতায় কেন্দ্রীয় ধারণাটি হল নিষ্কাম ভাবে কর্ম করে যাওয়া। কর্ম করবে কিন্তু কর্মের ফলের আশা রখবেনা – এমন ভাবে কর্ম করাই হল নিষ্কাম কর্ম। সকাম কর্মই বন্ধনের হেতু। মুক্তি হল এই বন্ধন থেকে স্বাধীনতা। নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমেই এই স্বাধীনতা অর্জন করা যায়। কর্ম এবং কর্মফল ঈশ্বরে সমর্পণ করে অনাসক্তভাবে নিষ্কাম কর্ম করলে মুক্তি পাওয়া যায়।
3.গীতায় প্রচারিত আদর্শটি কী?
গীতায় প্রচারিত আদর্শের নাম ‘নিষ্কাম কর্মের আদর্শ’। কর্মযোগের মাধ্যম হল নিষ্কাম কর্ম। কর্ম করবে কিন্তু কর্মের ফলের আশা রখবেনা – এমন ভাবে কর্ম করাই হল নিষ্কাম কর্ম। কর্ম এবং কর্মফল ঈশ্বরে সমর্পণ করে অনাসক্তভাবে নিষ্কাম কর্ম করলে মুক্তি পাওয়া যায়।
4. কর্ম কত প্রকারের হতে পারে?
কর্ম প্রধানত দুপ্রকার: নিষ্কাম কর্ম ও সকাম কর্ম।
সকাম কর্ম আবার দুপ্রকার: প্রারব্ধ কর্ম ও অনারব্ধ কর্ম। অনারব্ধ কর্ম আবার দুপ্রকার: সঞ্চিত কর্ম ও সঞ্চীয়মান কর্ম।
মীমাংসকগণ কর্মকে দুটি ভাগে ভাগ করেন: কাম্য কর্ম ও নিষিদ্ধ কর্ম। কাম্য কর্ম দুপ্রকার: নিত্য কর্ম ও নৈমিত্তিক কর্ম।
5. সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
যে কর্ম ফল লাভের জন্য করা হয়, যে কর্ম সম্পাদনকালে ফল কামনা থাকে, তাকে সকাম কর্ম বলে। যেমন – পুত্র কামনায় পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞ একপ্রকার সকাম কর্ম। তাছাড়া আমাদের দৈনন্দিক জীবনে আমরা যেসব কর্ম করি তা সবই সকাম কর্ম, কারণ এইসব কর্মগুলি ফললাভের আশায় করা হয়।
অপরদিকে ফললাভের কামনা না করে অনাসক্ত হয়ে যে কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করা হয় তাই নিষ্কাম কর্ম। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিষ্কাম ভাবে কর্ম সম্পাদনের উপদেশ দিয়েছেন।
6-Marks
১.নিষ্কাম কর্মের ধারণাটি ব্যাখা করো এবং মোক্ষ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা
যুদ্ধ ইত্যাদি হিংসাত্মক ঘটনা নিশ্চিতভাবে পাপ কর্ম, আততায়ী হলেও হত্যা করলে পাপ ভোগ করতে হবে- অর্জুনের এই এক প্রধান আপত্তি। আত্মতত্ব ও স্বধর্ম মাহাত্ম্য শ্রবণের পরেও অর্জুনের সন্দেহের অবসান হয়না ,কারণ আত্মতত্ত্ব শ্রবণ করলেও আত্মজ্ঞানী হওয়া যায় না। শাস্ত্রে স্বধর্ম পালনের বিধান থাকলেও কর্তার যদি তা পাপজনক বলে মনে হয় তবে কেবল শাস্ত্রবাক্যের দ্বারা তার মনের পরিবর্তন হয়না, এই হল অর্জুনের কর্তৃতাভিমান, সুতরাং কামনা ও কর্তৃত্বাভিমান বর্জনপূর্বক কীভাবে কর্তব্য কর্ম করলে পাপ হয়না ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই উপদেশই দিয়েছেন অর্জুনকে। সেই উপদেশটি হল – ‘যুদ্ধ কর, কর্ম কর কিন্তু ফলা শক্তি ত্যাগ করো, লাভ – অলাভ, সিদ্ধি – অসিদ্ধি সমজ্ঞান করে কর্ম করে ’। সিদ্ধ্বি লাভে অনাসক্ত হয়ে কামনা – বাসনা ত্যাগ করে সমবুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে কর্তব্যকর্ম করলে তা যুদ্ধাদি হিংসাত্মক কর্ম হলেও তাতে পাপ স্পর্শ করে।
কামনা – বাসনা যদি কর্মের প্রবর্তক হয়, ফলাকাঙ্খা যদি কর্মের প্রবর্তক হয়, তাহলে কামনা – বাসনা ফলাকাঙ্খা ইত্যাদি ত্যাগ করলে কর্মসাধন কীভাবে সম্ভব ? এ প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, তুমি (ধনঞ্জয়) যোগে অবস্থিত থেকে ফলাশাক্ত বর্জন করে সিদ্ধি অসিদ্ধিকে সমজ্ঞান করে কর্ম করো অর্থাৎ ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হয়ে ঈশ্বর তুষ্টির জন্য কর্ম করো।
গীতোক্ত অর্থে বলা যায় নিষ্কাম কর্ম যোগ স্থিত হয়ে কর্ম করা, অর্থাৎ ফলাকাঙ্খা বর্জনপূর্বক সিদ্ধ -অসিদ্ধিতে সমত্ত্ববুদ্ধি হয়ে কর্ম করাই কর্মযোগ। নিষ্কাম কর্ম তাই কামনা শূন্য হলেও উদ্দেশ্যহীন নয়। নিষ্কাম কর্মের উদ্দেশ্য ভগবানের সৃষ্টিরক্ষা ,নিষ্কাম কর্ম ভগবানেরই কর্ম । এই জন্য নিষ্কাম কর্মযোগী সমস্ত কর্মফল জগতের হিতসাধনায় কৃষ্ণকে তথা ভগবানকে সমর্পন করে, যা আসলে ভগবানেরই আরাধনা, প্রকারন্তরে বিশ্ববাসীর সেবা।
কর্মনিয়ম অপ্রতিরুদ্ধ ও অলঙ্খনীয় হলেও কর্মমাত্রই তার ফল প্রসব করলে ভারতীয় নীতিবিদ্যাকে একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। প্রশ্নটি হল মুক্তি বা মোক্ষ প্রাপ্তি কীভাবে সম্ভব ? যারা কর্মবাক্য মানেন তারা চতুবর্গ পুরুষার্থের মধ্যে মোক্ষকে পরম পুরুষার্থ বলেছেন। তাই স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন ওঠে মোক্ষ প্রাপ্তির ধারণার সঙ্গে কর্মবাদের সংগতি কোথায় ?
ফলাকাঙ্খাসহ কর্ম সকাম এবং ফলাকাঙ্খা বর্জিত কর্ম নিষ্কাম। সকাম কর্ম যেহেতু বিষয়ের প্রতি অনুরাগ থেকে দেখা দেয় এবং জীবকে সেই অনুরাগবশত পূর্নজন্ম নিতে হয়। তাই বলা যায় সকর্মে কর্ম করলে মোক্ষ বা মুক্তিলাভ করা যায় না।
২.সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় ২ প্রকার কর্মের কথা বলা হয়েছে সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিষ্কাম কর্মকে সকাম কর্ম অপেক্ষা উন্নত মানের বলেছেন। তবে সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
প্রথমত,
যে কর্ম ফল লাভের জন্য করা হয়, যে কর্ম সম্পাদনকালে ফল কামনা থাকে, তাকে সকাম কর্ম বলে। যেমন – পুত্র কামনায় পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞ একপ্রকার সকাম কর্ম। তাছাড়া আমাদের দৈনন্দিক জীবনে আমরা যেসব কর্ম করি তা সবই সকাম কর্ম, কারণ এইসব কর্মগুলি ফললাভের আশায় করা হয়।
অপরদিকে ফললাভের কামনা না করে অনাসক্ত হয়ে যে কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করা হয় তাই নিষ্কাম কর্ম। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিষ্কাম ভাবে কর্ম সম্পাদনের উপদেশ দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত ,
সকাম কর্মের ফল ভোগ করতে হয়। তাই সকাম কর্ম বন্ধনের কারণ।
অপরদিকে, নিষ্কাম কর্ম বন্ধনের কারণ হয় না। নিষ্কামভাবে কর্ম করলে কর্মযোগী মুক্তিলাভের অন্তরায় আর ভোগ করতে হয়না।
তৃতীয়ত,
সকাম কর্মে বুদ্ধি বহিমুর্খী হওয়ার বুদ্ধি পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। ফলত আমাদের অন্তরে অনন্ত কামনা – বাসনার উদ্ভব হয়।
অপরদিকে, নিষ্কাম কর্মের ক্ষেত্রে বুদ্ধিকে পরমাত্মা বা ঈশ্বরের সাথে যুক্ত করার ফলে বুদ্ধি একনিষ্ঠ হয়, এক্ষেত্রে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছাতে একনিষ্ঠভাবে কর্ম করে।
চতুর্থত,
সকাম কর্মে নানা আয়োজনের প্রয়োজন হয়। এই জন্য অনেক ক্ষেত্রে কর্মটি অসম্পূর্ণতার জন্য কর্মকতা ভীত হয়।
অপরদিকে নিষ্কাম কর্মে কোন আয়োজনের প্রয়োজন হয়না। এইজন্য কর্মটি আংশিকভাবে নিষ্পন্ন হলেও কর্মকর্তার কোন ভয় থাকে না।
thanks for reading: গীতাকে অনুসরণ করে নিষ্কাম কর্ম | একাদশ শ্রেনী
অরো পড়ুন