ভারতে সামাজিক ধর্মীয় ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন

একাদশ শ্রেণির এডুকেশন দ্বিতীয় সেমিস্টার | Group – D:Historical Development of Indian Education| ভারতীয় শিক্ষার ঐতিহাসিক বিকাশ । এডুকেশন Group D Unit -2 এর  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-ভারতে শিক্ষার উন্নয়নে ভারতীয় সমাজ সংস্কারকের অবদান | এই অংশটি থেকে তোমাদের থাকবে 2 Marks এর একটি প্রশ্ন এবং 5 Marks এর একটি প্রশ্ন। অর্থাৎ মোট 7 Marks ।   

তোমাদের এই অধ্যায় থেকে suggestive কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন পত্র নিয়ে আজকের পর্ব । গত কয়েক কয়েক বছরের প্রশ্ন পত্র থেকে বাছাই করা কিছু প্রশ্নপত্র দিয়ে সাজানো আজকের এই পর্ব –social reformers of india and their contribution 2 marks-এর SAQ প্রশ্ন উত্তর। তোমরা নিজেরাই লক্ষ্য করবে তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে  ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন একাদশ শ্রেণী semester 2 প্রশ্ন গুলি কতটা Important । আশা করছি  আমাদের এই পরিশ্রম থেকে  তোমরা খুব উপকৃত হবে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতে শিক্ষার উন্নয়নে ভারতীয় সমাজ সংস্কারকের অবদান
ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতে শিক্ষার উন্নয়নে ভারতীয় সমাজ সংস্কারকের অবদান ।

 

 

Contents hide
1 ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতে শিক্ষার উন্নয়নে ভারতীয় সমাজ সংস্কারকের অবদান |

ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতে শিক্ষার উন্নয়নে ভারতীয় সমাজ সংস্কারকের অবদান |

একাদশ শ্রেণী এডুকেশন | দ্বিতীয় সেমিস্টার 

2 Marks-এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

  

১. কে বেদান্ত মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন ? বেদান্ত মহাবিদ্যালয় স্থাপনে উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ   রাজা রামমোহন রায় ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন।

ইংরেজি ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি হিন্দু  দর্শন ও সাহিত্য পড়ানোর উদ্দেশ্যে বেদান্ত মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ।

 

২. কাকে, কেন আধুনিক ভারতের পথিকৃৎ বলা হয় ?

উত্তরঃ  রাজা রামমোহনকে আধুনিক ভারতের পথিকৃৎ বলা হয়। রামমোহনই সর্বপ্রথম হিন্দুধর্মের বহু দেবদেবীর আরাধনা ও মূর্তিপূজা প্রভৃতির বিরুদ্ধে মত পোষণ করে একেশ্বরবাদকে প্রতিষ্ঠা করেন । বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, সতীদাহ প্রভৃতি অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। পাচ্যও পাশ্চাত্য শিক্ষার মেলবন্ধনে স্ত্রী শিক্ষা ও জনশিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন । তাই তাকে আধুনিক ভারতের পথিকৃৎ বলা হয়।

 

৩. সতীদাহ প্রথা কী ? 

উত্তর-  তৎকালীন সমাজে প্রচলিত একটি অমানবিক প্রথা , মনে করা হত যে এই প্রথার মাধ্যমে নারীর সতীত্ব বজায় রাখা যায় । হিন্দু ধর্মালম্বি কোন সদ্য বিধবা স্ত্রী অর্থাৎ“সতীকে” মৃত স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বাধ্য করা হত । জীবন্ত স্ত্রীকে জ্বলন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারা হত । সঙ্গে বাজানো হত টাক , টোল , করতাল, ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র । যাতে জীবন্ত স্ত্রীর আর্তনাদ শোনা না যায় । এই নৃশংস অমানবিক প্রথাকেই সতীদাহ প্রথা বলা হত ।

রাজা রামমোহন রায় লর্ড বেন্টিংকের সহায়তায় ১৮২৯ সালে আইন করে এই প্রথার বিলোপ সাধন করেন ।

 

৪.  রাজা রামমোহন রায় সম্পাদিত দুটি  সংবাদ প্ত্রের নাম লেখ।

উত্তরঃ রাজা রামমোহন রায় সম্বাদ কৌমুদী , ও মিরাৎ-উল-আখবার নামে দুটি সংবাদ পত্রের  সম্পাদনা করেছিলেন ।

 

৫. রাজা রামমোহন রায়ের  চারটি গ্রন্থের নাম লেখো ? 

উত্তরঃ রাজা রামমোহন রায়ের  চারটি গ্রন্থের নাম হল – i) বেদান্তসার ii) উপনিষদের বিভিন্ন ভাগ,  iii) প্রথ্যপ্রদান  iv) গৌড়ীয় ব্যাকরণ ।

 

৬. রাজা রামমোহন রায় কার কাছ থেকে রাজা উপাধি পান  কে ?  রামমোহনকে ইংল্যান্ডের  রাজ দরবারে পাঠিয়ে ছিলেন ?

উত্তরঃ 1830 সালে, মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ ,রামমোহনকে “রাজা” উপাধি দেন   এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ একজন দূত হিসাবে তাকে ইংল্যান্ডের রাজ দরবারে পাঠিয়ে ছিলেন ।

 

৭.  নারী শিক্ষা ভাণ্ডার কি উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল ?

উত্তরঃ  স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র  বিদ্যাসাগর , ১৮৫৮ সালে হুগলিতে ২৩টি, বর্ধমানে ১১টি, মেদিনীপুরে ৩টি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তোলেন । এই বালিকা বিদ্যালয়গুলির আর্থিক সহায়তার জন্য তিনি বেসরকারি নারী শিক্ষা ভাণ্ডার গঠন করেছিলেন ।

 

 ৮.  সোম প্রকাশ পত্রিকা কে প্রকাশ করেন ?কত সালে  বর্ণ পরিচয়  প্রকাশিত হয় ?

উত্তরঃ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৮ খ্রিঃ দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের সম্পাদনায় সোমপ্রকাশ প্ত্রিকা  প্রকাশ করেন।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগরের রচিত বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হয় ।

 

৯. বিদ্যাসাগর রচিত দুটি শিক্ষা মূলক গ্রন্থের নাম লেখো ?

উত্তরঃ  বিদ্যাসাগর রচিত দুটি শিক্ষা মূলক গ্রন্থ – (i) হিতোপদেশ  (ii) সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা ।

 

১০. বিদ্যাসাগরকে পাচ্য ক্ষেত্রে আধুনিক বাঙালি বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন শিক্ষক,  লেখক , সমাজসংস্কারক , তিনি জনগণকে আধুনিক ও প্রগতিশীল  চিন্তাধারায় দীক্ষিত করতে চেয়েছিলেন । তিনি সব রকম ধর্মীয় গোঁড়ামি , ও কুসংস্কার  মুক্ত ছিলেন। তিনিই প্রথম মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের দাবী উত্থাপন করেন । বাংলা সাহিত্যের উন্নয়নের জন্য বাংলা ভাষার সরলীকরণের উপর গুরুত্ব দেন । এবং নারী শিক্ষার বিস্তারে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করেন । তাই তাঁকে পাচ্য ক্ষেত্রে আধুনিক বাঙালি বলা হয় ।

 

১১. হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের বর্তমান নাম কি ? কত সালে কে এটি স্থাপন করেন ?

উত্তরঃ  হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের বর্তমান নাম বেথুন বালিকা বিদ্যালয় ।

১৮৪৯ সালে বড়লাট পরিষদের  আইন সদস্য ও শিক্ষা কাউন্সিলের সভাপতি ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন কয়েকজন বাঙালির সহায়তায় মেয়েদের জন্য অবৈতনিক এই হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ।

 

১২. নরম্যাল স্কুল কি ? এটি কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ?

উত্তরঃ  ১৮৫০ সালের ১৭ ই জুলাই বিদ্যাসাগরের তত্বাবধানে এই নরম্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় । এই স্কুলের উদ্দেশ্য ছিল সুশিক্ষক তৈরি করা । এখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানসম্মত ও উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য  শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশলের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হত । অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন এই বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক ।

 

১৩. মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর লেখা কোন কাব্যগ্রন্থ ঈশ্বরচন্দ্রকে উৎসর্গ করেছিলেন ?

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর লেখা ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যগ্রন্থ ঈশ্বরচন্দ্রকে উৎসর্গ করেছিলেন  ।

 

১৪. কত সালে তত্ত্ববোধিনী সভা ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে মিশে যায় ?

উত্তরঃ ১৮৫৯ সালে তত্ত্ববোধিনী সভা ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে মিশে যায় ।

 

১৫. ব্রজ সূচী কি ?

উত্তরঃ ব্রজ সূচী হল হিন্দু জাতিভেদের বিরুদ্ধে লেখা একটি বৌদ্ধ গ্রন্থ । রাজা রামমোহন রায় এই গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন ।

 

১৬. বেগম রোকেয়াকে কেন নারী নবজাগরণের অগ্রদূত বলা হয় ?

উত্তরঃ বেগম রকেয়া ছিলেন একজন মহান মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব । তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং কুসংস্কার , অন্ধ বিশ্বাস গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হয়ে নারী শিক্ষার জাগরণ ঘটানো । তাই এই বাঙালি শিক্ষাব্রতী, ও নারীবাদী সাহিত্যিক বেগম রকেয়াকে নারী নবজাগরণের অগ্রদূত বলা হয় ।

 

১৭. বেগম রকেয়া কত সালে কোন স্কুল স্থাপন করেন এটি কোথায় গড়ে উঠে ?

উত্তরঃ ১৯০৯ সালে ১ লা অক্টোবর পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে তিনি ভাগল্পুরে “সাখাওয়াত হোসেন মেমরিয়াল গার্লস স্কুল “ প্রতিষ্ঠা করেন ।

 

১৮. নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে বেগম রকেয়ার কয়েকটি অবদান  উল্লেখ করো ?

উত্তরঃ নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে বেগম রকেয়ার কয়েকটি অবদান-

i) ১৯০৯ সালে ১ লা অক্টোবর পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে তিনি ভাগল্পুরে “সাখাওয়াত হোসেন মেমরিয়াল গার্লস স্কুল “ প্রতিষ্ঠা করেন ।

ii) ১৯১৯ সালে মুসলিম শিক্ষিকাদের ট্রেনিং এর জন্য সরকারি সহযোগিতায় মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ।

iii)  বেগম রকেয়ার ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে  আঞ্জুমান খাওয়াতিনে ইসলাম বা মুসলিম মহিলা সমিতি গঠন করেন। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের সচেতনতার বিকাশ ঘটানো ।

 

১৯. আঞ্জুমান খাওয়াতিনে ইসলাম কি ?

উত্তরঃ মুসলমান মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি  এবং তাদের অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত একটি মহিলা সমিতি যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বেগম রকেয়া । এই সমিতি বিধবা নারীদের অর্থ সহায়তা প্রদান করতেন , দরিদ্র মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থা করতেন , অভাবী মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা , ও অনাথ শিশুদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি কাজের সাথে যুক্ত ছিল এই সমিতি ।

 

২০. বেগম রকেয়ার লিখিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো ?

উত্তরঃ বেগম রকেয়ার লিখিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম -সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ , অবরোধবাসিনী  ।

 

২১. সুলতানার স্বপ্ন গ্রন্থের মূল ভাবনা কি ?

উত্তরঃ  ‘সুলতানার স্বপ্ন’- গ্রন্থটি একটি প্রতীকী রচনা । এই গ্রন্থটিতে তিনি নারীবাদী স্বপ্নরাজ্যের নারীর স্থান বর্ণনা করেছেন । যেখানে পুরুষেরা গৃহবন্দী এবং নারীরা সমাজের নানান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত । বেগম রকেয়ার এই কল্পিত সমাজ ছিল পুরোপুরি অপরাধ মুক্ত, সত্যতা ও ভালবাসায় মোড়া।

 

২২. পরাধীনতার মূল কারণ স্ত্রীশিক্ষার অভাব – এটি কার উক্তি ?

উত্তরঃ পরাধীনতার মূল কারণ স্ত্রীশিক্ষার অভাব- এটি বেগম রকেয়ার উক্তি ।

 

২৩. কবে কোথায় রকেয়া দিবস পালন করা হয় ?

উত্তরঃ ১৮৮০ সালের ৯ ই ডিসেম্বর রংপুরের পয়রাবন্দ গ্রামে একটি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রকেয়া , এবং ১৯৩২ সালে ৯ ই  ডিসেম্বর তারিখে মারা যান । তাই ওই ৯ ডিসেম্বর দিনটিকে রকেয়া দিবস হিসাবে পালন করেন রংপুর বাসী ।

 

২৪. সংক্ষিপ্তভাবে সাবিত্রী বাঈ ফুলের সমাজ সংস্কারের দিকগুলি আলোচনা করো ।

উত্তরঃ  সাবিত্রী বাই ফুলে ছিলেন একজন সমাজসংস্কারক , শিক্ষাবিদ ও কবি । তিনি সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন –

i) শিক্ষার ক্ষেত্রে দরিদ্র ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিতেন ।

ii) শিশুদের অপুষ্টি কমাতে তাদের খাবার সরবরাহ করতেন ।

iii) সাবিত্রী বাই ফুলের মতে শিক্ষা আত্ম নির্ভরশীলতার চাবি কাঠি , সামাজংস্কারের একটি কার্যকর হাতিয়ার । তাঁকে ভারতীয় নারীদের মা হিসাবে গণ্য করা হয় ।

 

২৫.  সত্যশোধক সমাজ কি ?এর উদ্দেশ্য কি ছিল ?

উত্তরঃ ১৮৭৩ খ্রিস্টব্দে মহারাষ্ট্রে জ্যোতিরাও ফুলে  সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।

সত্যশোধক সমাজের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –

i) জাতিভেদ প্রথার অবসান ঘটানো ।

ii) সমাজে নারীশিক্ষার বিস্তার ও দরিদ্র নিম্ন বর্ণের মানুষদের শিক্ষার আওতায় আনা  ।

iii) সমাজে নিম্ন বর্ণের মানুষদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ,  এবং ব্রাহ্মণদের আধিপত্য খর্ব করা ।

 

২৬. সাবিত্রী বাই ফুলের প্রাথমিক  জীবন সম্পর্কে লেখো ।

উত্তরঃ  সাবিত্রী বাই ফুলে মহারাষ্ট্রের নাইগাঁওতে এক দ্ররিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । প্রচলিত রীতি অনুযায়ী  তেরো বছর বয়সে জ্যোতিরাও ফুলের সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । তাঁর স্বামী তাঁকে শিক্ষা লাভের জন্য উৎসাহিত করেছিলেন । একটি স্কুল থকে তিনি তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে , শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষাদানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন । পরবর্তীকালে নির্যাতিতা নারীদের মুক্তির জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন ।

 

২৭. ভারতের প্রথম মহিলা বিদ্যালয় কোনটি ?এটি কে প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তরঃ  ১ লা  জানুয়ারি ১৮৪৮ সালে পুনের ভিদেওয়ারায় মেয়েদের জন্য ভারতের প্রথম মহিলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাবিত্রী বাই  ফুলে , এবং তিনিই এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার পদ গ্রহণ করেছিলেন ।

 

২৮. সাবিত্রী বাই ফুলের মতে  শিক্ষা কি হওয়া উচিত ?

উত্তরঃ সাবিত্রী বাই ফুলের মতে শিক্ষা আত্ম নির্ভরশীলতার চাবি কাঠি , সামাজংস্কারের একটি কার্যকর হাতিয়ার । তাঁকে  ভারতীয় নারীদের মা হিসাবে গণ্য করা হয় । তাঁর সমস্ত কাজ এবং উদ্যোগগুলি আজকের  নারীদের শক্তিশালী করার জন্য এক বিশাল ভূমিকা গ্রহণ করেছে ।

 

২৯. মহিলা সেবা মণ্ডল প্রতিষ্ঠার মূল উদেশ্য কি ছিল ?

উত্তরঃ সাবিত্রী বাই ফুলে ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে মহিলা সেবা মণ্ডল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।

এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল –

i) মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো ।

ii)  বিধবাদের অমানবিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ।

iii) বিধবা পুনর্বিবাহের সমর্থনে প্রচার চালিয়েছিলেন এই মহিলা সেবা মণ্ডল ।

 

৩০. সাবিত্রী বাই ফুলে কীভাবে মারা যান ?

উত্তরঃ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্টে ভয়াবহ প্লেগ মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে ,১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ১০ ই মার্চ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহান সমাজ সংস্কারক ও  শিক্ষাবিদ সাবিত্রী বাই ফুলে । তিনি তাঁর কার্যের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি কোণে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো পৌঁছে দিয়েছেন ।

 

৩১.  স্ত্রীশিক্ষার বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা লেখ।

উত্তরঃ  তৎকালীন কুসংস্কারগ্রস্থ সমাজের উন্নয়নের জন্য তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন । ধর্ম সংস্কার থকে শুরু করে সমাজ সংস্কার , অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করা , সহমরণ  বর্জন প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেন। তিনি বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে নারীদের শিক্ষা দেওয়া ধর্ম বিরোধী নয়। এছাড়াও নারী শিক্ষার জন্য তিনি অ্যাংলো হিন্দু স্কুল , শ্রীরামপুর মিশন, স্কটিশ চার্চ মিশন গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন


5 Marks-এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

 

১. ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ কাকে বলা হয়  এবং কেন বলা হয় ?

উত্তরঃ বিপিন চন্দ্র পাল  রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ” বলেছেন।

ভারতবর্ষ যখন ধর্মীয়  ও সামাজিক কুসংস্কারের অন্ধকারে আচ্ছাদিত ঠিক তখন নবজাগরণের ঝোড় তুলে ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। ভারতের নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ রূপে রামমোহনই সর্বপ্রথম হিন্দুধর্মের বহু দেবদেবীর আরাধনা ও মূর্তিপূজা প্রভৃতির বিরুদ্ধে মত পোষণ করেন।

তিনি বহু দেব দেবতার বিরুদ্ধে গিয়ে একেশ্বরবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘ব্রাহ্মধর্ম’ নামক একটি সার্বভৌম ধর্মমত ঘোষণা করেন। তিনি “তুহফাৎ-উল-মুহদ্দীন” নামক একটি গ্রন্থ রচনা করে জানিয়েছিলেন যে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রসম্মত। প্রকৃতপক্ষে হিন্দুধর্মের সংরক্ষণে সমাজ-সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তিনিই উপলব্ধি করেন।

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেও তিনি তৎকালীন কুসংস্কার ও সমাজ সংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধনের প্রচেষ্টা দেখান। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, সতীদাহ প্রভৃতি অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনি নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এবং হিন্দু বিধবা বিবাহের সপক্ষে তাঁর মতামত জানিয়েছেন।

নবজাগরণ হল পুরাতন প্রন্থার বিরুদ্ধে গিয়ে নব সূর্যের উদয়।সমাজের উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়িতকরণের জন্য তিনি নানান ভূমিকা  গ্রহণ করেন এবং  তাঁর হাত ধরেই নবযুগের সূচনা ঘটে, তাই তাকে ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ বলে  অভিহিত করা হয় ।

 

২.  ভারতবর্ষে রামমোহন রায়  আধুনিক শিক্ষার অগ্রদূত – আলোচনা করো ?

উত্তরঃ মধ্যযুগে অন্ধকারাছন্ন জগতের ঠিক পরে যে নতুন আলোকময় চিন্তাভাবনা নিয়ে আধুনিকাতার আন্দোলন দেখা  দেয়  তাতে যে সকল  মনীষীদের  প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব  দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা রামমোহন রায় ।

আধুনিক শিক্ষা সংস্কার

আধুনিক শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহনের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি সংস্কৃত, আরবি , ফারসি , বাংলা , ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় পারদর্শী ছিলেন  এবং বিভিন্ন  ধর্ম তত্ত্বে সুপণ্ডিত  ছিলেন ।  তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের পাশাপাশি বেদান্তের মূলবাণী প্রচারে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি একদিকে যেমন পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যম হিসাবে ইংরেজি ভাষাকে গ্রহণ করেছিলেন, তেমনি অন্যদিকে  আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

শিক্ষার মাধ্যমে তিনি মানুষের যুক্তিবাদী মননের যথাযত বিকাশে সচেষ্ট হয়ে ছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বেদান্ত শিক্ষা অসঙ্গতিপূর্ণ নয় তা প্রমাণ করেন ১৮২৫ সালে বেদান্ত কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে। শুধু এই কৃতিত্বের জন্যই তাঁকে নব ভারতের স্রষ্টা হিসাবে গণ্য করা হয়।

স্ত্রী শিক্ষার প্রসার

মিশনারিরা স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের পথ প্রদর্শক হলেও ভারতবর্ষে স্ত্রী শিক্ষার বিস্তারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে নারীদের শিক্ষা দেওয়া ধর্ম বিরোধী নয়। এ বিষয়ে তাঁর ‘ব্রাহ্মসমাজের’ অবদান অর্নস্বীকার্য।

হিন্দু কলেজ স্থাপন

ডেভিড হেয়ার যখন হিন্দু কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা  উপস্থাপিত করেছিলেন তখন তিনি উৎসাহের সাথে তাঁর সঙ্গে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু পরে এই কলেজ স্থাপনের ব্যাপারে তিনি যুক্ত থাকতে পারেননি, কারণ গোঁড়া হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী ভারতীয়রা তাঁর যুক্তিবাদী মতবাদকে কটাক্ষ করেছিল।

ভারত প্থিক  রাজা রামমোহন রায়ই  সর্ব প্রথম শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতবর্ষের প্রাচীন মানবিক গুণাবলী ফিরিয়ে এনে ভারতীয় শিক্ষাকে নতুন আলোতে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বলে তাকে ভারতের আধুনিক শিক্ষার অগ্রদূত বলা হয়।

 

৩. জন শিক্ষা ও নারী শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহনের অবদান লেখো ।

উত্তরঃ আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে আধুনিক ভারত গড়ে তোলা অর্থাৎ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংশ্লেষণের মাধ্যমে নবীন ভারত গঠন করায় ছিল রাজা রামমোহনের উদ্দেশ্য । এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেন ।কুসংস্কারগ্রস্থ সমাজের উন্নয়নের জন্য তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা  অনুভব করেছিলেন । ধর্ম সংস্কার থকে শুরু করে সমাজ সংস্কার , অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করা , সহমরণ  বর্জন প্রভৃতি বিষয়ে তিনি আন্দোলন করেন ।

রামমোহনের সংস্কৃত, আরবী, ফারসী, বাংলা, ইংরেজি সমাজসংস্কারে অন্যান্য ভাষায় পারদর্শিতা ছিল এবং তিনি বিভিন্ন ধর্মতত্ত্বে সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের পাশাপাশি বেদান্তের মূলবাণী প্রচারে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি একদিকে যেমন পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যম হিসাবে ইংরেজি ভাষাকে গ্রহণ করেছিলেন, তেমনি অন্যদিকে  আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

জন শিক্ষা প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি মনে করতেন এই কুসংস্কার গ্রস্থ সমাজে শিক্ষায় মানুষকে প্রকৃত পথের সন্ধান দিতে পারে । জন শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি বিভিন্ন সংবাদপ্ত্রের সাহায্য নেন ।  ১৮২০ সালে তিনি “appeal to the christian public” প্রকাশ করেন, ১৮২১ সালে তিনি  “The Brahmanical magazine” পরিচালনা করেন , ১৮২১ সালে  সম্বাদ  কৌমুদী নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন  এবং ১৮২২ সালে তিনি ফরাসিতে মিরাৎ -উল-আকবর” নামক একটি  সাপ্তাহিক  প্ত্রিকা  প্রকাশ করেন , যার মাধ্যমে রাজা রামমোহন রায় মানবধিকারের  ধ্বজা উত্তোলন করেন ।

তাঁর প্রকাশিত পত্র প্রত্রিকা মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ।১৮৮৭ সালে তিনি হিন্দু স্কুল স্থাপনেও সহযোগিতা করেন। তিনি ডেভিড হেয়ারের সহযোগিতায় হিন্দু কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা করেন এবং এ ব্যপারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যার হাইড-এর সম্মতি আদায় করেন।

 

৩. নারী শিক্ষা বিস্তারে বেগম রেকেয়ার ভূমিকা লেখো।

উত্তরঃ সমাজের উন্নতির জন্য বেগম রোকেয়া নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। নারী জাতির উন্নয়নের মূল হাতিয়ার হল শিক্ষা। তাই শিক্ষার অগ্রগতি ঘটাতে পারলেই নারী জাতির অধিকার ও স্বাধীনতা স্বীকৃতি পাবে। বেগম রোকেয়া নিজের শিক্ষা ও জীবন দর্শন থেকে নারী জাতিকে শিক্ষিত করার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। নারী শিক্ষায় তাঁর ভূমিকা গুলি হল –

১. সচেতনতা বৃদ্ধি 

তৎকালীন সমাজে মুসলমান মেয়েরা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, ও গোঁড়ামিতার অন্ধকারে আবদ্ধ ছিল। বেগম রোকেয়া শিক্ষার মাধ্যমে মুসলিম নারীদের সচেতন করার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন।

২. নারী স্বাক্ষরতা 

সমাজে পুরুষের মতে নারীদেরও সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে সমান অধিকার ছিল, কিন্তু নারীরা সেই অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিল না।  বেগম রোকেয়া শিক্ষার মাধ্যমে নারীদের স্ব – অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলে ছিলেন।

৩. ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা 

মুসলিম মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষিকারও প্রয়োজন ছিল।  এর জন্য  শিক্ষিকাদের ট্রেনিং স্কুলের প্রয়োজন ছিল। সরকারী সহযোগিতায় তিনি 1919 খ্রীঃ কলকাতায় “মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল“ প্রতিষ্ঠা করেন।

৪. সাহিত্য চিন্তা 

বেগম রোকেয়ার নারী জাগরণের আর একটি উল্লেখযোগ্য ছিল সাহিত্য কার্যে আত্ম নিয়োগ। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল – সুলতানার স্বপ্ন, মুতিচুর, পদ্মরাগ প্রভৃতি। এইসব গ্রন্থগুলির মাধ্যমে তিনি মুসলিম নারী সমাজের করুন অবস্থার ছবি তুলে ধরে ছিলেন।

সুতরাং বেগম রোকেয়ার জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম নারীদের জাগরন  ও সমাজে অধিকার প্রতিষ্ঠা। তাই নারী শিক্ষার ইতিহাসে বেগম রোকেয়া একজন উজ্জ্বল মুখ।

 

৪. বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগর যে অবদান রেখে গেছেন তা আলোচনা করো ?

উত্তরঃ  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষক, লেখক, সমাজসংস্কারক এবং মানবপ্রেমিক ছিলেন। তাঁর এই বহুবিধ গুণই জনগণকে আধুনিক প্রগতিশীল চিন্তাধারায় দীক্ষিত করেছিল। সারা জীবন শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিযুক্ত করেছেন।

বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতি

১৮৫৩ সালে বিদ্যালয় শিক্ষা প্রসারের জন্য অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

তিনি  বাংলাদেশের তৎকালীন লেফটেন্যান্ট ফ্রেডারিক হ্যালিডেকে সহায়তা করেছিলেন। এই পরিকল্পনায় বলা হয় যে-

(ক) বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।

(খ) বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করতে হবে। বাংলায় ভূগোল, ইতিহাস, জীবনচরিত, গণিত, পদার্থবিদ্যা, শারীরবিদ্যা প্রভৃতি শেখাতে হবে।

(গ) পর্যাপ্ত সংখ্যায় স্কুল স্থাপন ও শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

১৮৫৬ সালে জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিদ্যাসাগর তাঁর এলাকায় প্রতিটি জেলায় ৫টি করে বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা প্রথম ছ-মাস বিনা বেতনে পড়ার পরে তাদের কিছু বেতন দিতে হবে। বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমান ও নদীয়া জেলায় একটি করে মডেল স্কুল গড়ে তোলা হয় যেখানে ৩-৫টি শ্রেণি, দুজন শিক্ষক এবং একজন প্রধান পন্ডিত থাকবেন।

১৮৫০ সালের ১৭ই জুলাই বিদ্যাসাগরের তত্ত্বাবধানে একটি ‘নম্যাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠিত হয়  ১৮৫৭ সালে উদ্দেশ্য ছিল সুশিক্ষক তৈরি করা। সংস্কৃত কলেজে সকালে দু-ঘন্টা করে ক্লাস করানো হত। এই বিদ্যাসাগর স্ত্রী- কলেজে উচ্চশ্রেণি ও নিম্নশ্রেণি থাকত। এখানে প্রথমে ৭০ জন ছাত্রের মধ্যে ৬০ জন ছাত্রকে রেন, যে সকলে মাসিক ৫ টাকা করে বৃত্তি দান করা হত ।

পাঠ্যপুস্তক

বিদ্যাসাগর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের অভাব পূরণের জন্য নিজেই  ১৮৫৫ সালের ১৩ই এপ্রিল তাঁর রচিত বর্ণপরিচয়ের প্রথম খণ্ড এবং ওই বছরের ১৪ই জুন দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। তিনি ছাত্রদের নীতিবোধকেই জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে ১৮৫৬ সালে ‘কথামালা’ প্রকাশ করেন।

সুতরাং বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগরের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে।

 

৫. স্ত্রী – শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো।

উত্তরঃ ভারতে নারী মুক্তির ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অগ্রদূত। স্ত্রী শিক্ষার বিস্তারে তিনি রক্ষণশীল মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে নারী মুক্তির কজে আত্ম নিয়োগ করেন।

 স্ত্রী – শিক্ষা বিস্তারে

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৯ সালে শিক্ষা কাউন্সিলের সভাপতি বেথুন কয়েকজন  বাঙালির সহযোগিতায় মেয়েদের জন্য একটি অবৈতনিক স্কুল ,প্রতিষ্ঠা করেন । এই স্কুলটি কলকাতা ফিমেল স্কুল, হিন্দু ফিমেল স্কুল, নেটিভ ফিমেল স্কুল প্রভৃতি নামে  পরিচিত হওয়ার পর অবশেষে ‘বেথুন বালিকা বিদ্যালয়’ নামে পরিচিতি পায়। ১৮৫০ সালে  তাঁর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি নারীশিক্ষার প্রধান শিক্ষায়তনরূপে প্রসিদ্ধ হয় । এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন কাদম্বিনী বসু ও চন্দ্রমুখী বসু।

গ্রামীন এলাকায় নারীশিক্ষা

বিদ্যসাগর শুধুমাত্র শহরে নারী শিক্ষার কাজে উদ্যোগ নেননি, তিনি গ্রামীন এলাকায় নারী শিক্ষার কাজে অংশগ্রহণ করে ছিলেন। তিনি ১৮৫৭ সালে বর্ধমানের জৌগ্রামে বিদ্যাসাগর একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে লেফটেন্যান্ট গভর্নর হ্যালিডের সহায়তায় পরিকল্পনা করেন যে সকল গ্রামের অধিবাসীরা স্কুলের জন্য ঘর দেবেন, সেখানে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থ হবে। সেই মতো ১৮৫৮ সালে হুগলিতে ২৩টি, বর্ধমানে ১১টি, মেদিনীপুরে ৩টি, এবং নদিয়ায় ১ টি বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয় ।

নারী শিক্ষা ভাণ্ডার

বিদ্যসাগর  ভেবে ছিলেন যে, নরীদের শিক্ষার জন্য সরকার আর্থিক সহায়তা করবে, কিন্তু কোন রকম সাহায্য পাওয়া যায় না।  এই সব স্কুলের আর্থিক  সহায়তার জন্য বিদ্যাসাগর বেসরকারি  নারী শিক্ষা ভাণ্ডার গঠন (১৮৫৪)করেন । বিদ্যালয়ের ব্যায়ভার এই ভাণ্ডার থেকে বহন করা হত।

নরমাল স্কুল স্থাপন 

বিদ্যসাগর  উপলব্ধি করে ছিলেন যে, নারীদের যথাযথ শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষিকা প্রয়োজন। এর জন্য তিনি বেথুন স্কুলে স্ত্রী নরমাল স্কুল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে ছিলেন।

সুতরাং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলার মেয়েদের শিক্ষিত করে আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে নারী জাতিকে আধুনিক করে তুলে ছিলেন।

 

৬. প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ  বর্তমান যুগে অন্যতম বিচক্ষণ শিক্ষা অনুরাগী হিসাবে বিদ্যাসাগরের নাম সর্বজন স্বীকৃত প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদান অবশ্যই ইতিহাসের বিচারে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ।

 প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদানঃ  

বিদ্যাসাগরের সময় প্রাথমিক শিক্ষা প্রায় অবহেলিত ছিল । দেশীয় বিদ্যালয়গুলির অবস্থা উপলদ্ধি করে , সেগুলির সংস্কারের জন্য সংস্কারের জন্য তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তৎকালীন বড়লাট লর্ড ডালহৌসির একটি প্রতিবেদন পেশ করেন এবং প্রতিবেদনের সুপারিশগুলি  সমর্থনযোগ্য হয় সুপারিশের মূল বিষয়গুলি হল –

(i) পাঠ্য বিষয়

প্রাথমিক স্তরে পড়ানো হবে , ভূগোল , ইতিহাস , জ্যামিতি  , পাটিগণিত , প্রকৃতি বিজ্ঞান, নীতি বিজ্ঞান, শরীর তত্ত্ব , জীবন বৃত্তান্ত ইত্যাদি ।

(ii) শিক্ষার মাধ্যম

তিনিই প্রথম সুপারিশ করেন শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা ।

(iii) মডেল স্কুল

প্রতিটি জেলায় ৩-৫ টি মডেল স্কুল স্থাপনের সুপারিশ করেন । এই বিদ্যালয়ের  কমপক্ষে একজন প্রধান শিক্ষক ও দুই জন সহকারী শিক্ষক থাকবে।

(iv) প্রসাশনিক ব্যবস্থা

বিদ্যালয়ের প্রসাশনিক কাজের উদ্দেশ্যে সার্কেল প্রথা চালু করার সুপারিশ করা হয় ।

(v) পরিদর্শক ব্যবস্থা 

দুটি করে জেলা একজন পরিদর্শকের অধীনে থাকবে , তিনি আরও বলেন সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ  প্রধান পরিদর্শক হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব বহন করবে ।

এই সমস্ত সুপারিশগুলি অনুমোদিত হওয়ায় পর বর্ধমান ,হুগলী , নদীয়া, ও মেদনীপুর জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির কিছু দূরে মডেল স্কুল স্থাপনের সিধান্ত নেওয়া হয় । প্রত্যকটি জেলাতেই ৫ টি করে মোট ২০ টি মডেল স্কুল স্থাপিত হয় ।

 

Thanks For Reading : ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতে সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন একাদশ শ্রেণী |


Read More Subject:


 

Leave a comment