সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

সংস্কৃত ভাষায় রচিত অসংখ্য় নাটক আজও পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।  ভাস , কালিদাস ,অশ্ব ঘোষ প্রমুখ নাট্যকার, সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যেকে আলোকিত করে তুলেছেন । এই পর্বে আমাদের আলোচ্য বিষয়, সংস্কৃত নাট্য সাহিত্য। আজকের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করো।      

আশা রাখি , আমাদের এই উপস্থাপনা B.A Sanskrit –এর ছাত্রছাত্রীদের এবং WBBSC class -11 এর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে খুবই উপযোগী হতে চলেছে।

সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করো।   
সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করো।

 

সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করো |

Origin and Development Of Sanskrit Drama In  Literature |  

সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যের বা দৃশ্য কাব্যের উৎপত্তির ইতিহাস রহস্য মন্ডিত। নাট্য সাহ্যিত্যের উৎপত্তি নিয়ে পন্ডিত মহলে মতবিরোধ আছে। সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যের উৎপত্তি সম্পর্কে বিতর্কিত বিভিন্ন মতবাদগুলির আলোচনা করা য়ায়।

বৈদিক উৎপত্তিবাদঃ  

ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র সংস্কৃত নাট্যকলার প্রাচীনতম গ্রন্থ। ভরত মুনি তার নাট্যশাস্ত্রে বলেছেন ব্রহ্মা, ঋক বেদ থেকে পাঠ্যাংশ, সামবেদ থেকে গীত, যজুবেদ থেকে অভিনয় ও অথর্ববেদ থেকে রস ও অনুভূতি গ্রহণ করে নাটক রচনা করেন। সর্ব বর্ণের লোকের চিত্র বিনোদনের জন্য ইহা পঞ্চম বেদ নামে পরিচিত।

পাশ্চাত্য পন্ডিত ম্যাকস মুলার , প্রভৃতি পন্ডিতদের মতে বৈদিক যুগে বিভিন্ন ধরনের ধর্ম মূলক নাট্যানুষ্ঠান ছিল। সেইসব নাট্যানুষ্ঠান থেকেই হয়তো নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তি হয়েছিল অধ্যাপক কীথ এই মতবাদটিকে সমর্থন করেন।

ধর্মানুষ্ঠানঃ 

ফিচল প্ল্যান, স্ট্রেন প্রমুখের মতে ধর্ম অনুষ্ঠানের মধ্যে নাটকের বীজ নিহিত আছে। একথা সত্য, কিন্তু নাটকের প্রকৃত মূল্য নিহিত আছে মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে। আনন্দ ,অনুভূতি, রস, ক্রোধ, মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তিগুলি থেকেই নাট্যলীলা যাত্রার আবির্ভাব।

পুতুল নাচ বিষয়ক মতবাদঃ 

অধ্যাপক পিশেল পুতুল নাচকে নাটকের মূল বলে বিবেচনা করেছেন। কারণ তার মতে নাটকের সূত্রধার, স্থাপক প্রভৃতি শব্দের মধ্যে এর স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। তবে কেউ কেউ পুতুল নাচ থেকে নাটকের উৎপত্তি মেনে নেননি, কারণ তারা বলেছেন নাটক থাকলে তবেই পুতুল নাচের উৎপত্তি হতে পারে।

গ্রিক প্রভাবঃ   

ওয়েবার, প্রথম বলেন যে ভারতের নাট্যসাহিত্যের উপর গ্রিক প্রভাব আছে। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় অনেক গ্রিক অভিনেতা ভারতবর্ষে এসেছিলেন। এবং ভারতের গ্রিক নরপতিদের রাজসভায় গ্রিক নাটকের অভিনয় হত। এই নাটকের প্রভাব সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যের উৎপত্তি বলে স্বীকার করা হয়েছে। তাছাড়া সংস্কৃত নাটকে যবনি ও যবনিকা শব্দের ব্যবহারও গ্রিক প্রভাব প্রমাণ করেন।

গ্রিক নাটকের সাথে সংস্কৃত নাটকের নাটকীয় ঘটনারও সাদৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু উক্ত যুক্তিগুলির কোনোটাই গ্রিক প্রভাবে সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তির পক্ষে নিশ্চিত প্রমাণ নয়। কারণ অনেক পন্ডিত যুক্তি দিয়েছেন গ্রিক নাটকের অভিনয়ে যবনিকার ব্যবহার ছিল না। গ্রিক সাহিত্যে ট্র্যাজেডি প্রধান। কিন্তু সংস্কৃত নাটকের ট্র্যাজেডি নেই। তাই গ্রিক প্রভাবই সংস্কৃত নাটকের উৎপত্তি এই যুক্তি সর্বসিদ্ধ নয়।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে নাট্যসাহিত্যের উদ্ভব ঠিক কেমন করে ও কীভাবে হয়েছিল সেই রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয়। তবে একথা বলা যে, প্রাচীন কালেই ভারতের অনুকূল পরিবেশে স্বাভাবিক ভাবেই সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল।

আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে তৃতীয় শতকের মধ্যে পাণিনির অষ্ট্যাধয়ীতে নাট্যসূত্রের উল্লেখ আছে। তাছাড়া পতঞ্জলির মহাভাস্যের মহাভারতের হরিবংশে, রামায়ণমূলক নাটকে স্পষ্ট বিবরণ আছে। সুতরাং বলা যায় যে, কোনো একক ভারতীয় মনিষীর পক্ষে নাট্যসাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়। বিভিন্ন মনিষী গ্রিক নাট্যসাহিত্যের কিছু বিষয়, বেদের কিছু উপাদান, সমস্ত কিছু মিলিয়ে ভারতীয় নাট্যসাহিত্যের সৃষ্টি।


প্রশ্ন উত্তরঃ 

১. সংস্কৃত ভাষার বিশিষ্ট নাট্যকারের নাম কি ?

উত্তরঃ সংস্কৃত ভাষার বিশিষ্ট কয়েকজন নাট্যকারের নাম হল-  অশ্ব ঘোষ, ভাস ।

২. কালিদাসের লেখা তিনটি নাটকের নাম লেখ ।

উত্তরঃ কালিদাসের লেখা তিনটি নাটকের নাম হল- i) মালবিকাগ্নিমিত্র ii) বিক্রমোর্বশীয় iii) অভিজ্ঞান শকুন্তলম ।

৩. ভাসের লেখা দুটি নাটকের নাম লেখ ।

উত্তরঃ ভাসের লেখা দুটি নাটক হল- i)স্বপ্নবাসবদওম্‌  ii) কর্ণভার ।


আরো পড়ুন – 


 

Leave a comment