কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো

সংস্কৃত সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রখ্যত  কবি ছিলেন জয়দেব  গোস্বামী । আজ এই পর্বে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-  কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো । 

আশা রাখি , আমাদের এই উপস্থাপনা B.A Sanskrit –এর ছাত্রছাত্রীদের এবং WBBSC class -11 এর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে খুবই উপযোগী হতে চলেছে।

কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো |
কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো |

 

কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো | 

ইংরাজীতে ‘Lyric Poetry’ কথার বাংলা অনুবাদ হল ‘গীতিকাব্য’ সাহিত্য দর্পনাকার বিশ্বনাথ এই জাতীয় কাব্যকে ‘খন্ডকাব্য ‘ নামে অভিহিত করেছেন। কিন্তু ইংরাজীতে Lyric বলতে যে জাতীয় রচনাকে বোঝায়, সংস্কৃত সাহিত্যে সেই জাতীয় রচনা নেই বললেই চলে।

সংস্কৃত এর ব্যাপকতা অনেক বেশি। এতে নীতি , স্তুুতি, ও ধর্ম বিষয়ক রচনা প্রধান স্থান অধিকার করেছে। সংস্কৃত গীতিকাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল – কবির হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি ও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত ভাবাবেগগুলির বর্ণময় রূপ।

গীতগোবিন্দ কাব্যঃ   

জয়দেবের গীতগোবিন্দ হল ভক্তিমূলক  গীতিকাব্য। জয়দেব বাংলার বীরভূম জেলার কেন্দুবিল্ব বা কেঁদুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ভোজদেব এবং মাতা বামাদেবী। এবং তাঁর পত্নী হলেন পদ্মাবতী।

জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যটি প্রেমবিষয়ক গীতিকাব্য হলেও আধ্যাত্মিকতায় ও ভক্তিরসে পূর্ণ। ভক্তিকবি জয়দেব তাই কাব্যে রাধা কৃষ্ণের অপার্থিব বসন্তকালীন লীলা বর্ণনা করেছেন। ‘ল্যাসেন’ এটিকে একটি নীতিধর্মী কাব্যও বলেছেন। গ্রন্থটি বারোটি স্বর্গে বিভক্ত, এর মধ্যে চব্বিশটি গীত ও চল্লিশটি শ্লোক আছে।

গীতগোবিন্দ কাব্যের বিষয়বস্তুঃ 

বসন্তকাল সমাগত। শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা উভয়ই পরস্পরের মিলন কামনায় ব্যাকুল। এমন সময় সখীর মুখে রাধা হৃদয়ের অবস্থা জানতে পেরে কৃষ্ণ তাকে কুঞ্জে আসতে বললেন কিন্তু রাধা তখন কৃষ্ণ বিরহে এতই কাতর যে চলনশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। তাই তিনি কৃষ্ণকে আসার জন্য অনুরোধ পাঠালেন।

কৃষ্ণ আসবে জেনে রাধা সরা রাত্রি প্রতীক্ষা করলেন। শেষে বিলাপের মধ্য দিয়ে রাত্রি অতিবাহিত হল। রাত্রি শেষে কৃষ্ণ এলে তখন অভিমানিনী রাধার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে কৃষ্ণের প্রতি তীক্ষ্ণ ভৎর্সনা বাক্য । শেষে সখীর চেষ্টায় অভিমানিনী রাধার অভিমান কিছুটা প্রশমিত হলে, শ্রীকৃষ্ণ দীর্ঘ সময় ধরে অনুণয় বিনয়ের দ্বারা রাধার প্রীতি উৎপাদনে সমর্থ হন। এরপর শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার শ্বাশত মিলন বর্ণনায় গ্রন্থের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের বৈশিষ্ট্যঃ     

জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দের’ কাব্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ নাট্যগীতির আকারে লেখা কাব্য। কাব্যের অমূল্য সম্পদ নাটকের হৃদয়কে আকৃষ্ট করে। কারণ ‘গীতগোবিন্দের’ সুর সংযোগে পাঠকের মনে যেমন অমৃত ধারা বর্ষিত হয় , তেমনি কৃষ্ণ ভক্তিতে মন রসালো হয়ে ওঠে।
  • শ্রীকৃষ্ণের অমৃত কথায় জীবন শান্ত স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে, মনের সন্তাপ দূর হয়ে যায়।
  • পরিপূর্ণ প্রেম ও সৌন্দর্যের কবি জয়দেব অপার্থিব প্রেমের উচ্চ সীমানায় আলোচ্য কাব্য গ্রন্থকে উপনীত করেছেন।
  • এই কাব্যটি সমালোচকদের কাছে অত্যন্ত আদরণীয়, শিল্পগুণ মন্ডিত এবং হৃদয়গ্রাহী।
  • ভাষায় বর্ণনায় অর্থের ব্যাঞ্জনায় কাব্যটি পাঠকের মনকে আনন্দ ঘন করে তোলে।
  • কাব্য সংস্কৃত রচিত হলেও কাব্যের ভাবধর্ম একান্ত ভাবে লৌকিক জীবনের অনুকূল। এই কারণেই কবি রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়েই মূল্যায়ন করেছেন।
  • জয়দেবের গীতিকাব্য একাধারে ভক্ত ও রসিক সমাজের রসতৃষ্ণা নিবারণে সমর্থ হয়েছে।

উপরিউক্ত কাব্য বৈশিষ্ট্যের গুনে ‘গীতগোবিন্দ’ ধর্ম ও সাহিত্যে উৎকৃষ্ট নিদর্শন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যথার্থই বলেছেন –

“বাংলার কবি জয়দেব কবি কান্ত কমল পদে।

করেছে সুরভী সংস্কৃতের কাঞ্চন কোকনদে।। ”

মূল্যায়নঃ

‘গীতগোবিন্দ’ কোন শ্রেণীর রচনা এই নিয়ে পন্ডিত মহলে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন পন্ডিতদের মতবাদ বিচার করে বলা যায় যে কাব্যটি ভক্তিমূলক গীতিকাব্য। কারণ এই কাব্যে আধ্যাত্মিক আবেদন সত্য সৌন্দর্য উজ্জ্বল। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে কাব্যটি উপনিষদ তুল্য। কারণ এই কাব্যপাঠে পাঠকের মনে ভক্তি সুর জাগ্রত হয়। শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু প্রতিদিন এই কাব্যটি পাঠ করতেন। কবিগুরুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে –

“ সত্য করে কহো মোরে, হে বৈষ্ণব কবি

কোথা তুমি পেয়েছিলে এই প্রেম ছবি

কোথা তুমি পেয়েছিলে এই প্রেম গান

বিরহ তাপিত হেরি কাহার নয়ন,

রাধিকার অশ্রুআঁখি পড়েছিল মনে ?”

W.R Frazer বলেছেন – The poem of Joydev marks the gradual development in the 12 century of the doctrine of faith, emotion and personal love to words a deity in human from. ” সুতরাং বলা যায় যে জয়দেব শুধু কবি নন কবিরাজ রাজরাজ চক্রবর্তী।


প্রশ্ন উত্তরঃ 

১. জয়দেব রচিত গ্রন্থের নাম কি  ?

উত্তরঃ জয়দেব রচিত গ্রন্থের নাম গীতগোবিন্দ ।

২. জয়দেব কোন যুগের কবি ? 

উত্তরঃ জয়দেব মধ্যযুগীয়ও কবি  ।

৩. গীতগোবিন্দ কোন ভাষায় রচিত ?

উত্তরঃ গীতগোবিন্দ সংস্কৃত ভাষায় রচিত ।

৪. গীতগোবিন্দ কাব্যে কটি সর্গ আছে ?

উত্তরঃ গীতগোবিন্দ কাব্যে ১২ টি সর্গ আছে ।

৫. জয়দেব কোন রাজার সভাকবি ছিলেন ?

উত্তরঃ জয়দেব রাজা লক্ষণ সেনের  সভাকবি ছিলেন ।

 ৬. গীতগোবিন্দের বিষয়বস্তু কি ? 

উত্তরঃ  জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যটি প্রেমবিষয়ক গীতিকাব্য হলেও আধ্যাত্মিকতায় ও ভক্তিরসে পূর্ণ। ভক্তিকবি জয়দেব  কাব্যে রাধা কৃষ্ণের অপার্থিব বসন্তকালীন লীলা বর্ণনা করেছেন।


আরো পড়ুন – 


 

 

Leave a comment