কোষশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থগুলি সংক্ষিপ্ত আলোচনা

সংস্কৃত কোষশাস্ত্রগুলি সংস্কৃত সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে ।মনে করা হয় যে ,ব্যাকরণ ও অভিধান দক্ষ ব্যাক্তি বিপুল পাণ্ডিত্যের অধিকারী। তাই সংস্কৃত সাহিত্যে কোষশাস্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য । সুতরাং সংস্কৃত সাহিত্যের আজকের আলোচনার বিষয় – সংস্কৃত সাহিত্যে কোষশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো ।

আশা রাখি , আমাদের এই উপস্থাপনা B.A Sanskrit –এর ছাত্রছাত্রীদের এবং WBBSC class -11 এর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে খুবই উপযোগী হতে চলেছে।

সংস্কৃত সাহিত্যে কোষশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো ।
সংস্কৃত সাহিত্যে কোষশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

 

সংস্কৃত সাহিত্যে কোষশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা |

কোষশাস্ত্র বলতে কী বোঝঃ

যিনি যতবেশী ব্যাকরণ ও অভিধান দক্ষ তিনি তত বেশী পান্ডিত্যের অধিকারী। অভিধানকে বলা হয় কোষশাস্ত্র। বৈদিক যুগে নিঘণ্টু নামে বৈদিক শব্দ সমূহের কোষ বা অভিধান গ্রন্থ ছিল। যাস্কাচার্য নিরুক্ত নামে ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। সুতরাং নিরুক্তকে বৈদিক শব্দাভিধান বা মন্ত্র ভাষ্য বলা হয়।

অনেক মনে করেন নিরুক্তকার যাস্কাচার্য নিঘণ্টু গ্রন্থেরও রচনা করেছেন। নিঘণ্টু ও নিরুক্তকে ভারতীয় কোষ বা অভিধান শাস্ত্রের প্রাচীনতম রূপ তথা সংস্কৃত কোষশাস্ত্র রচনার অনুপ্রেরণা বলা যায়। সংস্কৃত কোষ শাস্ত্রগুলি শ্লোকে রচিত। নিম্নে কোষ সম্বন্ধীয় কয়েকটি গ্রন্থ সম্পর্কে অলোকপাত করা হল –

অমর কোষ বা নামলিঙ্গানুশাসনম্ঃ 

অমর সিংহ রচিত ‘অমরকোষ’ গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় বিরচিত অভিধান গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত। আনুমানিক খ্রিষ্ট্রীয় পঞ্চম শতকে অমর সিংহ  বিদ্যমান ছিলেন। অমর সিংহ রাজা বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভার অন্যতম রত্ন ছিলেন এইরূপ কথিত আছে। মগধের অধিবাসী অমর সিংহের পিতা ছিলেন আদিত্য দাস। তিনি গ্রন্থের প্রারম্ভে বুদ্ধদেবকে নমস্কার জানিয়েছেন বলে অনুমান করা হয়, তিনি বৌদ্ধ ছিলেন।

অমর সিংহ রচিত ‘অমরকোষ’ অভিধানটি তিনটি কান্ডে বিভক্ত। প্রথম কান্ডে – স্বর্গবর্গ, ব্যোমবর্গ, দিগবর্গ, কালবর্গ, ধীবর্গ, শব্দাদিবর্গ, নাট্যবর্গ, পাতালবর্গ, ভোগিবর্গ, নরকবর্গ ও বারিবর্গের অন্তর্গত বিভিন্ন শব্দের অজস্র প্রতিশব্দ ও বিভিন্ন শব্দের লিঙ্গ নির্দিষ্ট করেছেন।

দ্বিতীয় কান্ডে – ভূমিবর্গ, পুরিবর্গ, শৈলবর্গ, বনৌষধিবর্গ, সিংহাদিবর্গ, মনুষ্যবর্গ প্রভৃতি বর্গের অন্তর্গত শব্দ সমূহের বিস্তৃতি  বিবরণ দিয়েছেন।

তৃতীয় কান্ডে – তিনি বর্ণনা করেছেন বিশেষ্যনিঘ্ন, সংকীর্ণ, অব্যয়, লিঙ্গাদিসংগ্রহ, পুংলিঙ্গ সংগ্রহ, স্ত্রীলিঙ্গ সংগ্রহ ও ক্লীবলিঙ্গ সংগ্রহ ইত্যাদি। সমগ্র গ্রন্থটি শ্লোককারে রচিত। অমর কোষের উপর অজস্য টীকা রচিত হয়েছে। সর্বানন্দ রচিত টীকাসর্বস্ব এবং বৃহস্পতি রায়মুকটের ‘পদচন্দ্রিকা’ টীকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শব্দকল্পদ্রুমঃ

উনবিংশ শতকে বাঙালী রাজা রাধাকান্তদেবের অনুপ্রেরণায় ও তাঁর আর্থিক সাহায্যে কয়েকজন বাঙালী সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত বহু বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ‘শব্দকল্পদ্রুম’ নামে বিশাল অভিধান সংকলন করেন। এই গ্রন্থটির প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে এবং শেষ খন্ডটি প্রকাশিত হয় ১৮৫১ খ্রীঃ।

গ্রন্থটিতে সাতটি খন্ড আছে। এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে শব্দসমূহের প্রকৃতি প্রত্যয় ও লিঙ্গনির্ণয়। এখানে শব্দের সংস্কৃত অর্থে এবং প্রয়োজনবোধ বাংলা প্রতিশব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। অ থেকে ক্ষ পর্যন্ত বর্ণানুক্রমিক যাবতীয় শব্দের অর্থ, প্রতিশব্দ ব্যুৎপত্তি প্রভৃতির সন্নিবেশে গ্রন্থটি সমৃদ্ধ।

অনেকার্থসংগ্রহ ও অভিধান চিন্তামণিঃ

জৈনাচার্য হেমচন্দ্র অনেকার্থসংগ্রহ ও অভিধান চিন্তামণি নামক দুটি কোষ গ্রন্থের প্রণেতো। অনেকার্থসংগ্রহ নামক অভিধান গ্রন্থটি ছয়টি কান্ডে বিভক্ত। এছাড়া একটি পরিশিষ্ট কান্ড আছে।

একস্বর কান্ড, দ্বিস্বরকোষ, ত্রীস্বরকান্ড, চতুঃস্বরকান্ড, পঞ্চস্বরকান্ড ও ষট্‌স্বরাদি কান্ডে নামে ছয়টি কান্ড চিহ্নিত। এই গ্রন্থে একস্বর থেকে ষষ্টস্বর বিশিষ্ট বিভিন্ন শব্দ সংগৃহীত হয়েছে। গ্রন্থকার একস্বর থেকে পঞস্বরবিশিষ্ট অব্যয় সমূহের অনেকার্থ নির্দেশ করেছেন। গ্রন্থকার নিজেই এই গ্রন্থের উপর ‘অনেকার্থকৈ ব্যাকারণ কৌমুদী’ নামক টীকা গ্রন্থ রচনা করেছেন।

হেমচন্দ্র রচিত আরেকটি কোষগ্রন্থ হল ‘অভিধান চিন্তামণি’। গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে বিভিন্ন শব্দের অসংখ্য প্রতিশব্দ এবং প্রকাশিত হয়েছে হেমচন্দ্রের বিবিধ শাস্ত্রে পান্ডিত্য প্রগাঢ় , পান্ডিত্যের জন্য হেমচন্দ্র ‘কালিকালসর্বজ্ঞ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

উক্ত গ্রন্থগুলি ছাড়া কাত্যায়ন রচিত নাম মালা বাচস্পতি রচিত শব্দার্ণব, বিক্রমাদিত্য রচিত সংসারবর্ত, ব্যাড়ি রচিত উৎপালিনী প্রভৃতি কোষগ্রন্থগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


আরো পড়ুন – 


প্রশ্ন উত্তরঃ

১. কোষশাস্ত্র বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ  যিনি যতবেশী ব্যাকরণ ও অভিধান দক্ষ তিনি তত বেশী পান্ডিত্যের অধিকারী। অভিধানকে বলা হয় কোষশাস্ত্র।সংস্কৃত কোষ শাস্ত্রগুলি শ্লোকে রচিত ।

২.  ‘অমরকোষ’ কি ?

উত্তরঃ অমর সিংহ রচিত সংস্কৃত ভাষায় বিরচিত অভিধান গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত গ্রন্থটি হল ‘অমরকোষ’ ।

৩. অমরকোষ কি জাতীয় গ্রন্থ ?

উত্তরঃ অমরকোষ  আকধরনের অভিধানিক গ্রন্থ । যেখানে  সরল পদ্যে রচিত  ১৫০০ শ্লোক রয়েছে ।

৪. শব্দকল্পদ্রুম গ্রন্থের লেখক কে ?

উত্তরঃ শব্দকল্পদ্রুম গ্রন্থের লেখক  রাধাকান্ত দেব ।

৫. ‘অভিধান চিন্তামণি’  গ্রন্থটি  কার লেখা ? 

উত্তরঃ ‘অভিধান চিন্তামণি’ জৈনাচার্য হেমচন্দ্রের প্রণীত গ্রন্থ ।


 

 

Leave a comment