ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য

শিক্ষার মূল লক্ষ্য মানুষের জীবনের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন । শিক্ষা মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ । বৈদিক যুগ থেকেই নানা  শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন প্রচলন রয়েছে । প্রাচীন যুগ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল ।

আমরা সহজ ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বরূপ বিষয় গুলি উপস্থাপন করে থাকি । যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক হবে ,বলেই আশা রাখি ।

Class 11 Education , Semester 2 এর যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছ তাদের জন্য এই পোস্টগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন।Education -এর প্রয়োজনীয় সব Notes তোমরা এই পেজে পাবে ।

আলোচনার এই পর্বে একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের আলোচ্য বিষয়ঃ ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করো ।  

ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করো ।  
ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করো ।

 

ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য 

 

প্রাচীন ভারতে দীর্ঘ সময় ধরে ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা একই সঙ্গে অবস্থান করেছে। ব্রাহ্মণ শিক্ষার মধ্যে থেকেই বৌদ্ধ শিক্ষার জন্ম হয়েছে । এই সহঅবস্থান ভারতীয় মনের সহনশীলতা, সহধর্মিতা ও চিরন্তন ধৈর্য্যের বার্তা বহন করে। এই দুই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই প্রতিফলিত হয়েছে।

ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্যঃ

সাদৃশ্যের মধ্য দিয়ে আমরা ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক উপাদানগুলির ধারণা লাভ করতে পারি।

প্রথমত ,

মানুষের শিক্ষা ধর্মভিত্তিক হওয়া উচিৎ এটা ছিল ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাচীনতম ঐতিহ্য। ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ এই উভয় শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ধর্মভিত্তিক, ধর্মকে কেন্দ্র করে ধর্মের নীতি ও আচরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উভয় শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হত।

দ্বিতীয়ত,

ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের জাগতিক  ভোগ সুখের বন্ধন থেকে মুক্তি দান। মোক্ষ লাভ করলে মনুষ্য জীবনের সমস্ত জাগতিক দুঃখের অবসান হয় এই চরম লক্ষ্যকে সামনে রেখে দুই শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হত।

তৃতীয়ত,

প্রাচীন ভারতে মানুষের জীবনে প্রয়োজনের অধিকার সম্পর্কে যে ধারণা ছিল তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই দুই শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যক্রমের মধ্যে কারণ উভয় শিক্ষাব্যবস্থা  পাঠ্যক্রমে মানুষের জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজনগুলিকে অস্বীকার না করে পরাজ্ঞান লাভের উপায় স্বরূপ পাঠক্রম নির্বাচিত হত।

চতুর্থত,

এই উভয় শিক্ষাব্যবস্থা ছিল আবসিক চরিত্রের লোহাকে চুম্বকে পরিণত করতে হলে দীর্ঘ সময় ধরে যেমন – লোহাকে চুম্বকের সংস্পর্শে রাখতে হয়, তেমনি উভয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষকের সংস্পর্শে থাকতেন।

পঞ্চমত,

আত্মার উপলব্ধি ছাড়া প্রকৃত জ্ঞানের সঞ্চালন সম্ভব নয়। এটা ছিল উভয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য। এই কারণে গুরু ও শিষ্য মধ্যে সম্পর্ক ছিল পিতা পুত্রের সম্পর্কের মতো। শিক্ষা জীবনে কোঠর নিয়ম পালন করা ছিল উভয় প্রকার শিক্ষা ক্ষেত্রেই ছিল ।

ষষ্ঠত,  

উভয় শিক্ষা ব্যবস্থাতে শিক্ষা শুরুর সময়  অনুষ্ঠান  হত , উপনয়ন ও প্রব্রজ্যা অনুষ্ঠান  সম্পন্ন হত ।  শিক্ষার্থীকে শিক্ষার জন্য কোন বেতন দিতে হত না । এমনকি শিক্ষার্থীর সমস্ত প্রকার দায়িত্ব যেমন- খাদ্য, বস্ত্র , বাসস্থানের দায়িত্ব ছিল গুরুর । সাধারণত এই দুই শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক  শিক্ষা ও  চরিত্র গঠন ইত্যাদির উপর গুরুত্ব  দান করা হত ।


আরোও পড়ুনঃ


ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্যঃ  

উভয় শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক বিষয়ে মিল থাকলেও অনেক বিষয়েই উভয় শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য ছিল। পার্থক্যের উপাদানগুলি হল –

প্রথমত,

প্রাচীন ভারতীয় সমাজ চারটি আশ্রমে বিভক্ত ছিল। এই চতুরাশ্রম ব্যবস্থা ব্রাহ্মণ শিক্ষা ব্যবস্থায় খুব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় চতুরাশ্রম ব্যবস্থার কোনো প্রভাব দেখা যায় না।

দ্বিতীয়ত,

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভাবে বেদ নির্ভর। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল বেদ বিরোধী। তাই বৌদ্ধ দর্শনকে বেদ  বিরোধী দর্শন বলা হয়। বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্মের কর্মফল ও জন্মান্তরবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও, বেদ অপৌরুষেয় ও অভ্রান্ত তা বৌদ্ধরা স্বীকার করেননি।

তৃতীয়ত,

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন উচ্চবর্ণের মানুষেরা শিক্ষার অধিকার পেলেও, শূদ্ররা ছিল এই শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য। এই বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক, বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক।

চতুর্থত,

বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠানিক। তাই এই শিক্ষাব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। অপরদিকে ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা ছিল গুরু পরিবেশ কেন্দ্রিক। তাই এই শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।

পঞ্চমত,

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে শিক্ষা আরম্ভকালে সন্ন্যাস গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষায় শিক্ষার আরম্ভে শিক্ষার্থীকে সন্ন্যাস গ্রহণ করতে হত।

ষষ্ঠত,

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার প্রধান মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা। বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার মাধ্যম ছিল সর্বসাধারণ বোধগম্য ভাষা। এছাড়াও , উভয় শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে আচার, অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল , তার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য ছিল ।

আবার দেখা যায় যে , উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায় নারী শিক্ষার প্রচলন থাকলেও , বৌদ্ধ শিক্ষার তুলনায়  ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায়  নারী শিক্ষার যথেস্থ প্রসার ঘটে ছিল ।

ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে উপরিউক্ত পার্থক্যগুলি লক্ষ্য করা গেলেও উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায় একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিপুষ্ট করেছিল।


একাদশ শ্রেণীর অন্যান্য আরো বিষয় পড়ুনঃ


 

 

Leave a comment