নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার করো

একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টার, দর্শনশাস্ত্রের  unit-1: Introduction of logic অংশের  একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল –  নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার করো (Categorical Syllogism: Figure & Mood)& validity testing  । এই বিষয় নিয়ে  আজকের আমাদের আলোচনা ।

 WBCHSE Class 11 Philosophy- এর ছাত্রছাত্রীদের একেবারে নুতন সিলেবাস অনুযায়ী  মূর্তি ও সংস্থান উল্লেখ করে বৈধতা বিচার করো আজকের উপস্থাপনার  বিষয়বস্তু । ছাত্রছাত্রীরা মনোযোগের সহিত,  আমাদের এই উপস্থাপনাগুলি লক্ষ্য করলে, আশা করি খুবই উপকৃত হবে ।

সুতরাং একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে, তাদের পরীক্ষার পস্তুতির সহায়তায়,  আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়। নিরপেক্ষ ন্যায় এর উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা, দোষ এবং দোষ বিচার।

নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার করো
নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার করো

 

Contents hide
1 নিরপেক্ষ ন্যায়ের সংস্থান , মূর্তি ও বৈধতা বিচার করো
1.7 নিরপেক্ষ ন্যায়ের মূর্তি ও সংস্থান উল্লেখ করে বৈধতা বিচার করো |Categorical-Syllogism-Figure-Mood-validity-testing

নিরপেক্ষ ন্যায়ের সংস্থান , মূর্তি ও বৈধতা বিচার করো


১. মুর্তি (Mood) কাকে বলে ?

নিরপেক্ষ ন্যায়ের অন্তর্গত বচনগুলির গুণ ও পরিমাণ অনুসারে ন্যায়ের যে বিভিন্ন আকার গঠিত হয় তাকে ন্যায়ের মুর্তি বলে। ন্যায়ের চারটি সংস্থানে মোট 19 টি শুদ্ধ বা বৈধ মুর্তি পাওয়া যায়।

২. সংস্থান কাকে বলে ? সংস্থান কয় প্রকার ও কী কী ?

নিরপেক্ষ ন্যায়ের আশ্রয় বাক্য দুটিতে হেতু পদের বিভিন্ন অবস্থান অনুযায়ী ন্যায়ের যে ভিন্ন ভিন্ন আকার দেখা যায় তাকে সংস্থান বলে। যেমন –

A – সকল M হয় P

A – সকল S হয় M

অথএব,  A – সকল S হয় P

উপরিউক্ত ন্যায় যুক্তিটিতে হেতু (M) পদের অবস্থান অনুযায়ী ন্যায় যুক্তিটির যে আকার পাওয়া যায় তা হল –

ন্যায় যুক্তিতে হেতু পদের অবস্থান অনুযায়ী সংস্থান চার প্রকার।

১. প্রথম সংস্থান 

হেতু পদ প্রধান আশ্রয় বাক্য উদ্দেশ্য ও অপ্রধান আশ্রয় বাক্যে বিধেয় হয়। যেমন –

A – সকল M হয় P

A – সকল S হয় M

অথএব,  A – সকল S হয় P

 ২. দ্বিতীয় সংস্থান 

হেতু পদ প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয় বাক্যের বিধেয় স্থানে থাকে। যেমন –

A – সকল P হয় M

A – সকল S হয় M

অথএব,  A – সকল S হয় P

 

২.  তৃতীয় সংস্থান 

হেতু পদ প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে থাকে। যেমন –

A – সকল M হয় P

A – সকল M হয় S

অথএব,  A – সকল S হয় P

৩. চতুর্থ সংস্থান 

হেতু পদ প্রধান আশ্রয় বাক্যের বিধেয় স্থানে এবং প্রধান বাক্যে উদ্দেশ্য স্থানে থাকে। যেমন –

A – সকল P হয় M

A – সকল M হয় S

অথএব,  A – সকল S হয় P

৩. ন্যায়ের মূর্তি – (Moods of syllogism)।

দুটি আশ্রয়বাক্যের গুণ ও পরিমাণ অনুসারে ন্যায়ের যে বৈধ আকার পাওয়া যায়, সেগুলিকেই মূর্তি বলে।

চারটি সংস্থানের মোট19 টি বৈধ মূর্তি পাওয়া যায়।

১. প্রথম সংস্থানে – (4 টি মূর্তি)

BARBARA             CELARENT            DARII          FERIO

(AAA)                      (EAE)                   (AII)            (EIO)

 ২. দ্বিতীয় সংস্থানে – (4 টি মূর্তি)

CESARE      CAMESTRES         FESTINO     BAROCO

(EAE)               (AEE)                 (EIO)            (AOO)

৩. তৃতীয় সংস্থানে – (4 টি মূর্তি)

DARARTI     DISAMIS      DATISI       FELAPTON          BOCARDO

(AAI)            (IAI)              (AII)             (EAO)                  (OAO)

 

৪. চতুর্থ সংস্থানে – (4 টি মূর্তি)

BRAMANTIP        CAMENES         DIMARIS       FESAPO           FRESISON

(AAI)                   (AEE)                 (IAI)           (EAO)                (EIO)

 

৪. নিরপেক্ষ ন্যায়ের সাধারণ নিয়মাবলী ।

১. গঠন সংক্রান্ত নিয়ম 

  1. প্রত্যেক বৈধ ন্যায় অনুমানে 3 টি মাত্র পদ থাকবে তার বেশিও নয় বা কমও নয়।
  2. প্রত্যেক ন্যায় অনুমানে কেবলমাত্র 3 টি বচন থাকবে।

 

২. বৈধতা সম্পর্কিত নিয়ম 

  1. হেতুপদকে দুটি আশ্রয় বাক্যের মধ্যে অবশ্যই একবার ব্যাপ্য হতে হবে।
  2. যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি, সে পদ কেনো মতেই সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না
  3. দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হবে না।
  4. একটি আশ্রয় বাক্য নঞ্চর্থক হলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই নঞর্থক হবে।
  5. যদি দুটি আশ্রয় বাক্যই সদর্থক হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সদর্থক হবে।

 

৩.সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত নিয়ম 

  1. দুটি বিশেষ আশ্রয় বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।
  2. একটি আশ্রয় বাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিশেষ হবে।
  3. প্রধান আশ্রয় বাক্য বিশেষ এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না।

উপরিউক্ত নিয়মগুলি যথাযথভাবে পালন না করলে এক বা একাধিক দোষ বা অনুপপত্তি দেখা দেয়।

 

৫. আদর্শ আকারের ন্যায়ের নিয়মগুলি ব্যাখ্যা করো।

আদর্শ আকারে নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতার কতক গুলি নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলি মানা হলে আদর্শ আকারে ন্যায়কে বৈধ বলি। আর যদি কোনো নিয়ম লঙ্খন করা হয় তাহলেই যুক্তিটি অবৈধ হয়। প্রচলিত যুক্তি বিজ্ঞানে নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা যে দশটি নিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলি আলোচনা করা যাক।

 ১. প্রথম নিয়ম 

একটি ন্যায়ে কেবল মাত্র তিনটি পদ থাকবে, এবং প্রতিটি পদ একই অর্থে দুবার ব্যবহৃত হয়। যেমন –

E –  কোনো মানুষ নয় পূর্ণ

A –  সকল দার্শনিক হয় মানুষ

অথএব,       E-   কোনো দার্শনিক নয় পূর্ণ

এখানে ‘মানুষ’, ‘পূর্ণ’, ‘দার্শনিক’ এই তিনটি পদ আছে এবং তিনটি পদ একই অর্থে দুবার করে ব্যবহৃত হয়েছে, এখানে মানুষ পদটি হল হেতু পদ, পূর্ণ কথাটি হল সাধ্য পদ এবং দার্শনিক কথাটি হল পক্ষপদ।

যদি কোনো ন্যায়ে তিনটির বেশি পদ থাকে তাহলে অনুমানটিতে ‘চারিপদ ঘটিত দোষ’ হয়। আর তিনটি কম পদ থাকলে মোট ন্যায় অনুমান হয়ে অমাধ্যম অনুমান হয়।

২.দ্বিতীয় নিয়ম 

একটি নিরপেক্ষ ন্যায় কেবলমাত্র তিনটি বচন দ্বারা গঠিত হয়। তিনটি বচনের মধ্যে একটি হল প্রধান আশ্রয় বাক্য এবং অপর দুটি হল যথাক্রমে অপ্রধান আশ্রয় বাক্য ও সিধান্ত বাক্য।

৩. তৃতীয় নিয়ম 

একটি বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ে হেতুপদ অন্তর্ভুক্ত একটি আশ্রয় বাক্য অবশ্যই ব্যাপ্য হবে। হেতু  পদ যদি কোনো আশ্রয় বাক্যে ব্যপ্য না হয় তাহলে যুক্তিটিতে ‘অব্যপ্য হেতু দোষ’ ঘটে। কোনো নিরপেক্ষ ন্যায়ে সিদ্ধান্ত বাক্যে পক্ষপদ ও সাধ্য পদের মধ্যে যে সম্পর্কের কথা বলা হয় তা সম্ভব হয় হেতু পদের দ্বারা এখন যদি হেতুপদ কোনো আশ্রয় বাক্যে ব্যপ্য না হয় তাহলে তার পক্ষে পক্ষ পদ ও সাধ্য পদের মধ্যে সম্মন্ধ স্থাপন করা সম্ভব হবে না। সুতরাং পক্ষপদ ও সাধ্য পদের মধ্যে অন্তত কোনো একটিকে হেতুপদ নির্দেশিত সমগ্র শ্রেণীর সাথে সম্পর্ক যুক্ত হতে হবে। উদাহরণ –

A – সকল মানুষ হয় সৎব্যক্তি

A –  সকল কবি হয় সৎব্যক্তি

অথএব,  A –  সকল কবি হয় মানুষ

৪.চতুর্থ নিয়ম 

যে পদ আশ্রয় ব্যপ্য হয় সে পদ সিদ্ধান্তে ব্যপ্য হতে পারে না। বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ে সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্য থেকে অনিবার্য ভাবে নিঃসৃত হয়। তাই সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্যের থেকে কখন ব্যপক হয় না। সাধ্যপদ যদি আশ্রয় বাক্যে ব্যপক না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যপক হয় তাহলে ‘অবৈধ সাধ্য দোষ ’ দেখা দেয়। আবার পক্ষ পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যপক না হয়ে যদি সিদ্ধান্তে ব্যপক হয় তাহলে ‘অবৈধ পক্ষ দোষ’ দেখা দেয়। উদাহরণ –

  1. A – সকল মানুষ হয় প্রাণী

E – কোনো দেবতা নয় মানুষ

অথএব,      E – কোনো দেবতা নয় প্রাণী

অথএব,  এই অনুমানটিতে, এখানে সাধ্যপদ (P) ‘প্রাণী’ আশ্রয়বাক্যে A বচনে বিধেয় হওয়ার জন্য ব্যাপ্য হয়নি, কিন্তু সিদ্ধান্তে E বচনে বিধেয় হওয়ার জন্য ব্যাপ্য হয়েছে। কিন্তু তা ন্যায়ের নীতি বিরুদ্ধ। কাজেই অনুমানটি ভ্রান্ত।

  1.     E –  কোনো পাখি নয় মানুষ

A –  সকল পাখি হয় প্রাণী

অথএব,      E –  কোনো প্রাণী নয় মানুষ

অথএব, এই অনুমানটি ‘অবৈধ পক্ষ দোষে’ দুষ্ট। এখানে ‘পক্ষ’ পদ (S) প্রাণী E বচনে উদ্দেশ্য হওয়ার জন্য ব্যাপ্য হয়েছে, কিন্তু অপ্রধান আশ্রয় বাক্যে A বচনের বিধেয় হওয়ার জন্য ব্যাপ্য হয়নি। সুতরাং অনুমানটি ন্যায় নীতি বিরুদ্ধ এবং সেহেতু ভ্রান্ত।

৫. পঞ্চম নিয়ম 

দুটি নঞর্থক আশ্রয় বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। নঞর্থক আশ্রয় বাক্যের মধ্যে উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। তাই দুটি নঞর্থক আশ্রয় বাক্যের মধ্যে পক্ষপদ ও সাধ্য পদের মধ্যে কোনো প্রকার সম্মন্ধ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। যে নিরপেক্ষ ন্যায়ে এই পঞ্চম নিয়ম লঙ্ঘন করা হয় সেখানে ‘নঞর্থক যুক্তি বাক্য জনিত দোষ’ ঘটে।  উদাহরণ –

E – কোনো মানুষ নয় সৎব্যক্তি

E – অশোক নয় সৎব্যক্তি

অথএব,       E – অশোক নয় মানুষ

 

৬. ষষ্ঠ নিয়ম 

দুটি আশ্রয় বাক্যের কোনো একটি নঞর্থক হলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই নঞর্থক হবে। দুটি নঞর্থক আশ্রয় বাক্য থেকে যেহেতু কোনো সিদ্ধান্ত টানা যায় না সেহেতু একটি আশ্রয় বাক্য নঞর্থক হলে অপর আশ্রয় বাক্যটি সদর্থক হবে। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে ‘নঞর্থক আশ্রয় বাক্য থেকে সদর্থক সিদ্ধান্ত নিঃসরণ জনিত দোষ’ ঘটে।

E – কোনো মানুষ নয় পূর্ণ জীব

A – সকল দেবতা হয় পূর্ণ জীব

অথএব,       E – কোনো দেবতা নয় মানুষ

৭. সপ্তম নিয়ম 

দুটি আশ্রয় বাক্য সদর্থক হলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই সদর্থক হবে। প্রধান আশ্রয় বাক্য ও অপ্রধান আশ্রয় বাক্য উভয়েই যদি সদর্থক হয় তাহলে উভয় বাক্যের উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদের মধ্যে সম্মন্ধ স্থাপিত হয়। এরপরে সিদ্ধান্তে হেতু পদের দ্বারা পক্ষ ও সাধ্যের মধ্যে সম্মন্ধ স্থাপিত হয়। অথয়েব দুটি যুক্তি বাক্য সদর্থক হলে সিদ্ধান্ত বাক্য সদর্থক হবে।

৮. অষ্ঠম নিয়ম 

দুটি বিশেষ যুক্তি বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। যদি দুটি বিশেষ যুক্তি বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় তাহলে তা অবশ্যই বিশেষ বচন হবে। কারণ ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্যের থেকে কখনো ব্যাপক হয় না। ইএ নিয়ম লঙ্ঘন করলে ‘দুটি বিশেষ যুক্তি বাক্য জনিত দোষ ঘটে। ’

৯. নবম নিয়ম 

দুটি আশ্রয় বাক্যের কোনো একটি বিশেষ বচন হলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিশেষ বচন হবে। কোনো ন্যায়ের একটি যুক্তি বাক্য বিশেষ হলে অপর যুক্তি বাক্য সামান্য হয়। কারণ দুটি বিশেষ যুক্তি বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায় না।

১০.দশম নিয়ম 

প্রধান আশ্রয় বাক্য বিশেষ এবং অপ্রধান আশ্রয় বাক্য নঞর্থক হলে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।

৬. সংক্ষিপ্ত ন্যায় কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ ন্যায়ে তিনটি বচন থাকে। কিন্তু এমন অনেক ন্যায় আছে যেখানে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে না। সেই অসম্পূর্ণ ভাবে ব্যক্ত নিরপেক্ষ ন্যায়কে সংক্ষিপ্ত ন্যায় বলে। যেমন – “সকল কবি হয় মানুষ” – এই একটি মাত্র আশ্রয় বাক্য থেকে আমরা ন্যায় সম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত করতে পারি ‘কোন কবি নয় পূর্ন। ’ এই যুক্তিটি অসম্পূর্ণ অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত ন্যায়।

সংক্ষিপ্ত ন্যায় বিভিন্ন আকারের হতে পারে। যেমন –

  1. কোন কোন সংক্ষিপ্ত ন্যায়ে শুধুমাত্র আশ্রয় বাক্য উহ্য থাকে।
  2. কোন কোন সংক্ষিপ্ত ন্যায়ে প্রধান আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকে, কিন্তু অপ্রধান আশ্রয়বাক্য উহ্য থাকে।
  3.   কোন কোন সংক্ষিপ্ত ন্যায়ে প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয় বাক্য উল্লেখ থাকলেও, সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকে না।

সংক্ষিপ্ত ন্যায়ের বৈধতা বিচারের ক্ষেত্রে দুটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

প্রথমত,

যুক্তির অনুক্ত অংশটিকে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়।

দ্বিতীয়ত,

নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম সমূহ মান্য হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

“সাধুরা মানুষ হওয়ার ভুল করে” – এই সংক্ষিপ্ত ন্যায়ের আদর্শ রূপটি হল –

A –   সকল মানুষ হয় এমন যারা ভুল করে।
A –  সকল সাধু হয় মানুষ।

অথএব,       A –  সকল সাধু হয় এমন যারা ভুল করে।


নিরপেক্ষ ন্যায়ের মূর্তি ও সংস্থান উল্লেখ করে বৈধতা বিচার করো |Categorical-Syllogism-Figure-Mood-validity-testing

1.  সে কাপুরুষ, কেননা সে মিথ্যাবাদী এবং মিথ্যাবাদীরা সর্বদাই কাপুরুষ।

উত্তর। উক্ত যুক্তিটির তর্কবিজ্ঞানসম্মত আকার হবে –

A – সকল মিথ্যাবাদী হয় কাপুরুষ

A- সে হয় মিথ্যাবাদী

ஃ A- সে হয় কাপুরুষ

দোষ- নেই

বৈধতা বিচার:

আলোচ্য যুক্তিটি বৈধ। কারণ নিরপেক্ষ ন্যায়ের দশটি নিয়মের কোনটি আমান্য করা হয়নি। যুক্তিটির মূর্তি – AAA, এবং সংস্থান -প্রথম হয়েছে। বৈধ মূর্তিটির নাম- BARBARA।


2.  সব চকচকে বস্তু সোনা নয়, হীরে সোনা নয়, সুতরাং হীরে চকচক করে না।

উত্তর। উক্ত যুক্তিটির তর্কবিজ্ঞানসম্মত আকার হবে –

O- কোনো কোনো চকচকে বস্তু নয় সোনা

E- হীরে নয় সোনা

ஃ E- হীরে নয় চকচকে বস্তু

দোষ- নঞর্থক আশ্রয়বাক্য জনিত দোষ

বৈধতা বিচার: আলোচ্য যুক্তিটি অবৈধ। যুক্তিটিতে দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য জনিত দোষ ঘটেছে। কারণ যুক্তিটির দুটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক এবং সিদ্ধান্ত নঞর্থক হয়েছে। কিন্তু বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম আনুজায়ী সিদ্ধান্ত নঞর্থক হলে দুটি আশ্রয়বাক্যের যে কোন একটিকে নঞর্থক হতে হয়। যুক্তিটির মূর্তি – OEE এবং সংস্থান – দ্বিতীয় হয়েছে।

 


3.  কোনো কবিই অমর নয়; যেহেতু যে কোনো কবি মানুষ এবং মানুষ অমর নয়।

উক্ত যুক্তিটির তর্কবিজ্ঞানসম্মত আকার হবে –

উত্তর। E- কোনো মানুষ নয় অমর

A- সকল কবি হয় মানুষ

ஃ E- কোনো কবি নয় অমর

দোষ- নেই

বৈধতা বিচার: আলোচ্য যুক্তিটি বৈধ।কারণ নিরপেক্ষ ন্যায়ের দশটি নিয়মের কোনটি আমান্য করা হয়নি। যুক্তিটির মূর্তি – EAE, এবং সংস্থান প্রথম হয়েছে। বৈধ মূর্তির নাম – CELARENT।

 


4.  যেহেতু কোনো জ্ঞানী নয় সুখী এবং সব নির্বোধ হয় সুখী, সেহেতু সব নির্বোধ নয় জ্ঞানী।

উক্ত যুক্তিটির তর্কবিজ্ঞানসম্মত আকার হবে –

ত্তর  O- কোনো কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি নয় সুখী

A- সকল নির্বোধ ব্যক্তি হয় সুখী

ஃ O- কোনো কোনো নির্বোধ ব্যক্তি নয় জ্ঞানী

দোষ- অবৈধ সাধ্য দোষ

বৈধতা বিচার: আলোচ্য যুক্তিটি অবৈধ। যুক্তিটিতে অবৈধ সাধ্য দোষ ঘটেছে। কারণ যুক্তিটির প্রথম আশ্রয় বাক্যের  সাধ্য পদটি (জ্ঞানী ব্যক্তি) আব্যাপ্য হয়ে সিদ্ধান্তে তা ব্যাপ্য হয়েছে। কিন্তু, বৈধতার নিয়ম অনুযায়ী যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয় সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না।   যুক্তিটির মূর্তি – OAO এবং সংস্থান – দ্বিতীয় হয়েছে।

 


5. অনেক সরকারি অফিসারই অধ্যাপক কেননা, তাঁরা এম. এ. পাশ আর সকল অধ্যাপক অবশ্যই এম.এ.পাশ।

উত্তর। উক্ত যুক্তিটির তর্কবিদ্যাসম্মত আদর্শ আকার হবে –

A- সকল অধ্যাপক হয় এম.এ.পাশ

I- কোনো কোনো সরকারি অফিসার হয় এম.এ.পাশ

ஃ I- কোনো কোনো সরকারি অফিসার হয় অধ্যাপক

দোষ– অব্যাপ্য হেতুদোষ

বৈধতা বিচারঃ আলোচ্য ন্যায় যুক্তিটি অবৈধ। যুক্তিটিতে অব্যাপ্য হেতুদোষ ঘটেছে। কারণ যুক্তিটির প্রথম আশ্রয় বাক্যের হেতু পদটি (এম.এ.পাশ) A বচনের বিধেয় হওয়ায় আব্যাপ্য এবং দ্বিতীয় আশ্রয় বাক্যের হেতু পদটি (এম.এ.পাশ) I বচনের বিধেয় হওয়ায় আব্যাপ্য হয়েছে। কিন্তু, বৈধতার নিয়ম অনুযায়ী হেতু পদটিকে দুটি আশ্রয় বাক্যের যে কোন একটিতে ব্যাপ্য হতে হবে।  যুক্তিটির মূর্তি – AII, এবং সংস্থান দ্বিতীয় হয়েছে।

 


6. কেবলমাত্র সত্যবাদী ব্যক্তিরাই সৎ এবং সকল সত্যবাদী ব্যক্তি হন শ্রদ্ধেয়। সুতরাং, সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিই হন সৎ।

উত্তর। উক্ত যুক্তিটির তর্কবিদ্যাসম্মত আকার হবে।

A- সকল সৎ ব্যক্তি হয় সত্যবাদী ব্যক্তি

A- সকল সত্যবাদী ব্যক্তি হয় শ্রদ্ধেয়ব্যক্তি

ஃ A- সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হয় সৎব্যক্তি

দোষ– অবৈধ পক্ষ দোষ

বৈধতা বিচার : আলোচ্য যুক্তিটি অবৈধ। যুক্তিটির অবৈধ পক্ষ দোষ ঘটেছে ।কারণ যুক্তিটির দ্বিতীয় আশ্রয় বাক্যের পক্ষ পদটি (শ্রদ্ধেয়ব্যক্তি) আব্যাপ্য হয়ে সিদ্ধান্তে তা ব্যাপ্য হয়েছে। কিন্তু, বৈধতার নিয়ম অনুযায়ী যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয় সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না। যুক্তিটির মূর্তি – AAA এবং সংস্থান চতুর্থ হয়েছে।


7. কলকাতা ভারতের অন্তর্গত, দুবাই ভারতের অন্তর্গত নয়, সুতরাং দুবাই কলকাতায় অন্তর্গত নয়।

উক্ত যুক্তিটির তর্কবিদ্যা সম্মত আকার হবে –

A- কলকাতা হয় ভারতের অন্তর্গত

E- দুবাই নয় ভারতের অন্তর্গত

ஃ E – দুবাই নয় কলকাতার অন্তর্গত

দোষ– চারিপদ ঘটিত দোষ

বৈধতা বিচার : আলোচ্য যুক্তিটি অবৈধ। যুক্তিটিতে চারিপদ ঘটিত দোষ ঘটেছে ।কারণ যুক্তিটির প্রথম আশ্রয় বাক্যের সাধ্য পদটি (কলকাতা )  এবং দ্বিতীয় আশ্রয় বাক্যের সাধ্য পদটি (কলকাতার অন্তর্গত) একই আর্থে ব্যাবহার হয়নি। কিন্তু, বৈধতার নিয়ম অনুযায়ী যে কোন পদ দুবার করে থাকবে এবং দুবারই একই অর্থ প্রকাশ করবে।  যুক্তিটির মূর্তি – AEE এবং সংস্থান চতুর্থ হয়েছে।


8. এই ন্যায়টি অবশ্যই বৈধ , কেননা সকল বৈধ ন্যায়ের মতো এটিও তিনটি পদ বিশিষ্ট।

উক্ত যুক্তিটির তর্কবিদ্যাসম্মত আকার হবে –

A – সকল বৈধ ন্যায় হয় তিনপদ বিশিষ্ট

A – এই ন্যায়টি হয় তিনপদ বিশিষ্ট

ஃ A – এই ন্যায়টি হয় বৈধ -ন্যায়

দোষ– অব্যাপ্য হেতুদোষ

বৈধতা বিচারঃ আলোচ্য ন্যায় যুক্তিটি অবৈধ। যুক্তিটিতে অব্যাপ্য হেতুদোষ ঘটেছে। কারণ যুক্তিটির প্রথম আশ্রয় বাক্যের হেতু পদটি (তিনপদ বিশিষ্ট) A বচনের বিধেয় হওয়ায় আব্যাপ্য এবং দ্বিতীয় আশ্রয় বাক্যের হেতু পদটি  (এম.এ.পাশ) A বচনের বিধেয় হওয়ায় আব্যাপ্য হয়েছে। কিন্তু, বৈধতার নিয়ম অনুযায়ী হেতু পদটিকে দুটি আশ্রয় বাক্যের যে কোন একটিতে ব্যাপ্য হতে হবে।  যুক্তিটির মূর্তি – AII, এবং সংস্থান দ্বিতীয় হয়েছে।

 


9. সব সফল ব্যক্তি পরিশ্রমী সুতরাং সব ছাত্র সফল নয় যেহেতু সব ছাত্র পরিশ্রমী নয়।

উক্ত যুক্তিটির তর্কবিদ্যাসম্মত আকার হবে

A- সকল সফল ব্যক্তি হয় পরিশ্রমী ব্যক্তি

O- কোনো কোনো ছাত্র নয় পরিশ্রমী ব্যক্তি

ஃ O- কোনো কোনো ছাত্র নয় সফল ব্যক্তি

দোষ–  নেই                          

বৈধতা বিচার: আলোচ্য ন্যায় যুক্তিটি বৈধ,কারণ নিরপেক্ষ ন্যায়ের দশটি নিয়মের কোনটি আমান্য করা হয়নি। যুক্তিটির মূর্তি AOO এবং সংস্থান – দ্বিতীয় হয়েছে।

 


10. কেবলমাত্র অসৎ লোকেরাই ভীরু; তিনি তীরু নন, অতএব, তিনি অসৎ নন।

উক্ত যুক্তিটির তর্কবিদ্যা সম্মত আকার হবে –

A- সকল ভীরু ব্যক্তি হয় অসৎ লোক

E- তিনি নন ভীরু ব্যক্তি

ஃ E- তিনি নন অসৎ লোক

দোষ- অবৈধ সাধ্য দোষ

বৈধতা বিচার: আলোচ্য যুক্তিটি অবৈধ। যুক্তিটিতে অবৈধ সাধ্য দোষ ঘটেছে। কারণ যুক্তিটির প্রথম আশ্রয় বাক্যের  সাধ্য পদটি (অসৎ লোক  ) A বচনের বিধেয়  হওয়ায়  আব্যাপ্য কিন্তু সিদ্ধন্তের E বচনের বিধেয় হওয়ায় তা ব্যাপ্য হয়েছে। কিন্তু, বৈধতার নিয়ম অনুযায়ী যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয় সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না। যুক্তিটির মূর্তি AEE এবং সংস্থান প্রথম হয়েছে।


11. রবীন্দ্রনাথ একজন দার্শনিক, কেননা তিনি হলেন কবি আর সব কবিরাই দার্শনিক।

উক্ত যুক্তিটির তর্কবিদ্যা সম্মত আকার হবে-

A- সকল কবি হয় দার্শনিক

A- রবীন্দ্রনাথ হন কবি

A – রবীন্দ্রনাথ হন দার্শনিক

দোষ–  নেই                          

বৈধতা বিচার: আলোচ্য ন্যায় যুক্তিটি বৈধ,কারণ নিরপেক্ষ ন্যায়ের দশটি নিয়মের কোনটি আমান্য করা হয়নি। যুক্তিটির মূর্তি AAA এবং সংস্থান – প্রথম হয়েছে।


 আরো পড়ুনঃ 


 

Leave a comment