ভাস হলেন সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র । প্রাচীন ভারতীয় বিখ্যাত নাট্যকারদের মধ্যে একজন।তাঁর লেখা নাটক সংখ্যা ১৩ টি । আজ এই পর্বে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যে ভাস সমস্যা বলতে কী বোঝ ।
আশা রাখি , আমাদের এই উপস্থাপনা B.A Sanskrit –এর ছাত্রছাত্রীদের এবং WBBSC class -11 এর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে খুবই উপযোগী হতে চলেছে।

সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যে ভাস সমস্যা বলতে কী বোঝ |
সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যঃ
সংস্কৃত সাহিত্যকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। শোভ্য কাব্য ও দৃশ্য কাব্য। দৃশ্য কাব্যের রচয়িতা হিসাবে ভাস উল্লেখযোগ্য। ভাসের নাম প্রথম শুনতে পাওয়া যায় কালিদাসের ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম’ নাটকে।
“প্রথিতযশসাং ভাসসৌমিল্লকবিপুত্রাদীনাং
প্রবন্ধানাতিক্রমা বস্তমানকবেঃ
কালিদাসস্য কৃতো কিং কৃতো বহুমানঃ ।”
কিন্তু বিংশ শতাব্দীর প্রথম ধাপ পর্যন্ত ভাসের নামের সঙ্গেই কেবল আমাদের পরিচয় ছিল, তার গ্রন্থের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল না। সৌভাগ্য এটাই ছিল, ১৯০৯ থেকে ১৯১১ খ্রীঃ পর্যন্ত পন্ডিত টি.গণপতি শাস্ত্রী তার ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টার দ্বারা দক্ষিণ ভারতের পদ্মনাভপুরম নামক স্থান থেকে দুখানি তালপাতার পুঁথিতে মালয়ালম হরফে লেখা ১৩ টি সংস্কৃত নাটকের পান্ডুলিপি আবিষ্কার করেন। ১৯২২ খ্রীঃ সেগুলি ভাসের নামে প্রকাশিত হয়। ভাসের ব্যক্তিজীবন সম্বন্ধে জানা যায় না। তবে তিনি কালিদাস ও অশ্বঘোষের পূর্ববর্তী কবি। তাঁর লেখা ১৩ টি নাটক হল –
- রামায়ণমূলক – প্রতিমা ও অভিষেক।
- মহাভারতমূলক – কর্ণভার, দূতবাক্য, পঞ্চরাত্র, দূত ঘটোৎকচ, ঊরুভঙ্গ,মধ্যমব্যায়োগ, বালচরিত।
- প্রাচীন কাহিনী অবলম্বনে – প্রতিজ্ঞাযৌগন্ধরায়ন ও স্বপ্নবাসবদওম্ ।
- কল্পিত কাহিনী অবলম্বনে – অবিমারক ও চারুদত্ত।
ভাস সমস্যা বলতে কি বোঝঃ
১৯০৯ থেকে ১৯১১ খ্রীঃ পর্যন্ত পন্ডিত টি.গণপতি শাস্ত্রীর আবিস্কৃত নাটক গুলির কোথাও ভাসের নাম উল্লেখিত না থাকায় নাটকগুলির রচয়িতা ভাস না অন্য কেউ এই নিয়ে সাহিত্য মহলে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাই ভাস সমস্যা নামে পরিচিত। কী টমাস, ওয়েবার, দেবধর প্রমুখ পন্ডিতেরা নাটকগুলিকে ভাসের লেখা বলেই মনে করেন। কিন্তু বার্নেট, ডনেস্টন, র্যান্ডি প্রমুখরা এর বিপক্ষে মতদেন।
পক্ষেযুক্তিঃ
(i) ১৩ টি নাটকের রচনাশৈলী অশ্বঘোষ, কালিদাস প্রমুখ নাট্যকারগণের নাটক অপেক্ষা এক স্বতন্ত্র ধারায় রচিত।
(ii) অধিকাংশ নাটকে অপানিনীয় পদের প্রয়োগ রয়েছে।
(iii) নাটক গুলিতে প্রাচীনত্বের ছাপ খুব স্পষ্ট।
(iv) কোনো নাটকেই নান্দীর শ্লোক বা মঙ্গলাচারণ শ্লোক নেই। প্রতিটি নাটকেই শুরু হয়েছে এইভাবে –
“নান্দ্যন্তে ততঃ প্রবিশ্যতি সূত্রধারকঃ। ”
(v) প্রতিটি নাটকেই প্রস্তাবনা, স্থাপনা নামে অভিহিত হয়েছে।
(vi) প্রায় একই জাতীয় ‘ভরত বাক্য’ প্রতিটি নাটকে লক্ষ্য।
(vii) একাধিক নাটকে ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্রের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে।
(viii) বানভট্টের উল্লেখিত ‘সূত্রধারোঃ কৃতারম্ভৈ’ সমস্ত নাটকেই রয়েছে।
(xi) সমস্ত নাটকেই ঘটনার গতিবেগ বৃদ্ধির জন্যে নিষকর্ম প্রবিশ্য পদের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়।
(x) ‘স্বপ্নবাসবদওম্’ নাটকটি ভাসের রচিত এরূপ কথিত আছে । টি. গণপতি শাস্ত্রী নাটকগুলি স্বপ্নবাসবদত্তের লক্ষণযুক্ত। তাই এগুলি ভাসের রচিত।
বিপক্ষেযুক্তিঃ
(i) নাটকগুলি দক্ষিন ভারতের নাট্য শৈলীযুক্ত।
(ii) নাট্যবিধি লঙ্ঘন ও অপানিনীয় পদের প্রয়োগ পরবর্তী কালের নাটকেও দেখা যায়।
(iii) অন্যত্র প্রাপ্ত স্বপ্নবাসবদত্তের উদ্ধৃতির সঙ্গে টি. গণপতি শাস্ত্রের আবিষ্কৃত স্বপ্নবাসবদত্তের উদ্ধৃতি সর্বত্রভাবে মেলে না।
(iv) নাটকগুলি অভিনয়ের উপযুক্তরূপে সম্ভবত ভ্রাম্যমান নাট্য সম্প্রদায়ের রচনা।
(v) সুকণ্ঠর, উইন্টার নিৎস প্রমুখ মহোদয়গণ ভাস সমস্যা সম্পর্কে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। এরা বলেন যতদিন সমালোচকেরা প্রমাণ করতে না পারেন যে নাটকগুলির রচয়িতা ভাস ব্যাতিত অন্যকোনো কবি ততদিন পর্যন্ত এই নাটকগুলিকে ভাসের লেখা বলে মেনে নিতে হবে।
মূল্যায়নঃ
নাট্যসাহিত্যে ভাসের স্থান সকলের উর্ধ্বে দৃশ্য কাব্যে রূপ নাটকগুলি সর্বাধিক উপধেয় রামায়ণ মহাভারত প্রভৃতি থেকে কাহিনী সংগ্রহ করলেও ভাস স্বপ্রতিভায় নাট্যরসে সঞ্জীবিত করে নাটকগুলিকে নবরূপ দান করেছেন।
নাটকগুলি সহজ সরল ভঙ্গিতে লেখা –”নাহি বর্ণনার ছটা , নাহি ঘটনার ঘনঘটা” চরিত্র চিত্রনে তিনি যথেষ্ট নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন। ছন্দ ও অলঙ্কার প্রয়োগেও তার দক্ষতা লক্ষণীয়। তার নাট্য রচনার প্রভাব, অনুভূতি প্রমুখদের উপর পড়েছে। তাই বলা হয় – ‘ভাসো হাসঃ সরস্বত্যা। ’
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. ভাস সমস্যা কি ?
উত্তরঃ ১৯০৯ থেকে ১৯১১ খ্রীঃ পর্যন্ত পন্ডিত টি. গণপতি শাস্ত্রী দক্ষিন ভারতের পদ্মনাভপুরম নামক স্থান থেকে দুখানি তালপাতার পুঁথিতে মালয়লম হরফে লেখা ১৩ টি সংস্কৃত নাটকের পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেন। নাটক গুলির কোথাও ভাসের নাম উল্লেখিত না থাকায় নাটকগুলির রচয়িতা ভাস না অন্যকেউ এই নিয়ে সাহিত্য মহলে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাই ভাস সমস্যা নামে পরিচিত।
২. ভাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটকের নাম কি ?
উত্তরঃ উরু-ভঙ্গ এবং কর্ণ-ভার হল প্রাচীন ভারতে ভাসের রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক ।
৩. ভাসের নাটকের সংখ্যা কত ?
উত্তরঃ ভাসের নাটকের সংখ্যা ১৩ টি ।
৪. স্বপ্নবাসবদত্তা কে রচনা করেছিলেন ?
উত্তরঃ স্বপ্নবাসবদত্তা রচনা করেছিলেন কালজয়ী নাট্যকার ভাস ।
৫. মহাভারত অবলম্বনে ভাসের নাটক গুলি কি কি ?
উত্তরঃ মহাভারত অবলম্বনে ভাসের নাটক গুলি – কর্ণভার, দূতবাক্য, পঞ্চরাত্র, দূতঘটোৎকচ, ঊরুভঙ্গ প্রভৃতি ।
আরো পড়ুন –
- ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যে রামায়ণের প্রভাব আলোচনা করো । B.A Sanskrit |
- মহাভারতের রচনাকাল সম্পর্কে আলোচনা করো । B.A Sanskrit
- রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে আলোচনা | B.A Sanskrit
- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে আলোচনা করো | B.A Sanskrit
- সংস্কৃতগল্প সাহিত্যে পঞ্চতন্ত্রের স্থান আলোচনা করো | B.A Sanskrit
- গল্পসাহিত্যে পণ্ডিত নারায়ণ শর্মার ভূমিকা আলোচনা করো । B.A Sanskrit
- কথাসরিৎসাগর টীকা লেখ | পন্ডিত সোমদেব | B.A Sanskrit
- কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো ।B.A Sanskrit