আকার ও উপাদান সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য

অ্যারিস্টটলের দর্শনে “উপাদান”(matter) এবং ‘আকার’(Form) -এমন দুটি প্রত্যয় যাদের সাহায্যে তিনি সমগ্র বিশ্বকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ উপাদান ও আকারকে সংযুক্ত করেই আমাদের বাহ্যবিষয়ের জ্ঞান হয়। উপাদান ব্যতিরেক আকারকে যেমন পাওয়া যায়না, তেমনি আবার আকার ব্যতিরেক উপাদানকে পাওয়া যায় না।

আকার ও উপাদান সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য
আকার ও উপাদান সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য

 

আকার ও উপাদান সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য | Aristotle’s view on Form & Matter 

উপাদান ও আকারের উদাহরণ দিতে গিয়ে অ্যারিস্টটল বলেন ধরাযাক, কেউ একটি ব্রোঞ্জের গোলক তৈরি করল। এখানে ব্রোঞ্জ হল উপাদান, আর গোলাকার রূপ হল আকার। উল্লেখ্য যে, “গোলাকার”-আকারটি স্বয়ং কেউ যথা – মানুষ তৈরি করেনি,  ব্রোঞ্জকে মাধ্যম করে কেউ আকারটি তৈরি করেছে। কারণ আকার যদি স্বয়ং কেউ তৈরি করে তাহলে কোন কিছু থেকে অর্থাৎ কোন আকার সৃষ্টি বলতে হবে এবং সেই আকারটি আবার তৃতীয় কোন আকার থেকে সৃষ্ট বলতে হবে। এমন বললে অনাবস্থা দোষ দেখা দেবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে উপাদান ও আকারের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আছে। এদের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করার পূর্বে আমাদের দেখা দরকার যে, অ্যারিস্টটল উপাদান ও আকার বলতে কী বুঝিয়েছেন।

অ্যারিস্টটল ‘উপাদান’ বলতে জড়বস্তুকে বোঝাননি অর্থাৎ লোহা, কাঠের মতো জড়বস্তু বা ভৌতবস্তুকে বোঝাননি। আবার  আকার বলতে ‘আকৃতিকে’ বোঝাননি। অ্যারিস্টটলের উপাদান ও আকারের ধারণা সাধারণ ধারণায় থেকে সম্পর্ন ভাবে আলাদা।

সাধারণ অর্থে যখন উপাদান শব্দটি ব্যবহার করা হয় তখন তা হল চরম অর্থে অর্থাৎ যাকে আমরা matter বলি তা প্রত্যেক সম্ভাব্য অবস্থায় সকলের কাছে জড়বস্তু বলে জ্ঞান হয়, অন্য কিছু নয়। অর্থাৎ এটি এমন নয় যে, কোন  এক দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি জড় এবং অন্য এক দৃষ্টিভঙ্গিতে তা অজড়। কিন্তু অ্যারিস্টটল উপাদান ও আকার শব্দ দুটিকে সাপেক্ষ (Relative) অর্থে গ্রহণ করেছেন। সাপেক্ষ অর্থে গ্রহণ করলে বলা যায় যা এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ‘উপাদান’, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাই আবার ‘আকার’, । ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাই আবার ‘উপাদান।’ কাজেই একই জিনিস এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপাদান, অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আকার।

বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যাকে আশ্রয় করে পরিবর্তন সাধিত হয় তাই হল উপাদান এবং যাকে লক্ষ্য করে বা লাভ করার জন্য পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে আকার বলে। অর্থাৎ যেটা পরিবর্তিত হয় তা উপাদান, আর যা হয়ে ওঠে তা আকার। যেমন – খাটের পরিপেক্ষিতে কাঠ হল উপাদান, কারণ কাঠ পরিবর্তিত হয়ে খাটে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ঐ কাঠকে যখন বর্ধিষ্ণু গাছের পরিপেক্ষিতে ব্যবহার করা হয় তখন তা হল আকার, কেননা গাছের নানা পরিবর্তনই কাঠে রূপান্তরিত হয়। তেমনি আবার বীজের পরিপেক্ষিতে গাছটি আকার, বীজটি গাছের উপাদান, কারণ বীজের নানবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বীজটি গাছে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে।

এমন কথা বললেও উপাদান ও আকারের ধারণা যেন সঠিক অর্থে স্পষ্ট হয় না। তাই অ্যারিস্টটল আরো বলেন যে, matter হল আধার স্বরূপ সমস্ত কিছুরধারক। যে ধারক সম্পূর্নভাবে গুণহীন, বৈশিষ্ট্যহীন, অনির্দিষ্ট। কিন্তু Form হল গুনবাচক, সংগঠন মূলক বলা যায় একটি অংশের সঙ্গে অন্য অংশের সংযোগ এবং কোথায় যেন সমগ্রতার সঙ্গে সংযুক্ত।

উপাদানের উপরে যতক্ষন না Form মুদ্রিত হয় ততক্ষণ উপাদান নির্দিষ্টতা পায়না। আকার আরোপিত হলে তবে আমরা ‘এই জিনিসটি’ বা ‘ঐ বিষয়টি’ – এমন নির্দিষ্টতা দান করতে পারি। উপাদান হল সমস্ত কিছু হবার সম্ভাবনা মাত্র, আর সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করে আকার।

Thanks For Reading: আকার ও উপাদান সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য | Aristotle’s view on Form & Matter 


আরো পড়ুন –

অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব

জৈনদের অনেকান্তবাদ সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো

চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?

ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ


 

Leave a comment