একাদশ শ্রেণির এডুকেশন দ্বিতীয় সেমিস্টার | Unit – I: Historical Development of Indian Education ভারতীয় শিক্ষার ঐতিহাসিক বিকাশ । এডুকেশন Group D Unit -1 এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-প্রাচীন, মধ্যযুগ এবং প্রাক-স্বাধীনতা সময়কালে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ।
ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাস এই অংশটি থেকে তোমাদের থাকবে 2 Marks এর একটি প্রশ্ন। তোমাদের এই অধ্যায় থেকে suggestive কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন পত্র নিয়ে আজকের পর্ব ।
ভারতীয় শিক্ষার ঐতিহাসিক বিকাশঃ
ক) প্রাচীন যুগ: বৈদিক ও বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা ।
খ) মধ্যযুগ: ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ।
এডুকেশন এই অধ্যায় থেকে বাছাই করা কিছু প্রশ্নপত্র দিয়ে সাজানো আজকের এই পর্ব –Ancient, Medieval & Pre-Independent Period of Indian Education System 2 marks-এর SAQ প্রশ্ন উত্তর , ও 8 marks-এর descriptive questions আলোচনা করা হল। তোমরা নিজেরাই লক্ষ্য করবে তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা একাদশ শ্রেণী semester 2 এই প্রশ্নপ্ত্র গুলি কতটা Important । আশা করছি , আমাদের এই পরিশ্রম থেকে তোমরা খুব উপকৃত হবে।
প্রাচীন মধ্যযুগ প্রাক স্বাধীনতা ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা
Marks – 2 এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
1. উপনয়ন বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ ব্রাহ্মণ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা শুরুর অনুষ্ঠানকে বলা হয় উপনয়ন। উপনয়নের অর্থ হল শিক্ষার জন্য শিষ্যকে গুরুর কাছে নিয়ে যাওয়া।
2. চর্তুরআশ্রম সম্পর্কে লেখো।
উত্তরঃ চর্তুর আশ্রম বলতে ব্রহ্মচর্চ , গ্রাহস্ত, বানপ্রস্ত, সন্ন্যাস জীবনের এই চারটি অধ্যায়কে বোঝায়। উপনয়নের ব্রহ্মচর্চ পালন করে গুরু গৃহে ছাত্ররূপে থাকতে হত। ছাত্র জীবন শেষ করে গ্রাহস্ত জীবন, তারপর ত্যাগের জীবন ও সর্বশেষে সত্য অনুসন্ধানের জন্য সন্ন্যাস গ্রহণ।
3. সমাবর্তন কী ?
উত্তরঃ পরবর্তী বৈদিক যুগে যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাপর্ব শেষ করা হত তাকে সমাবর্তন বলে। এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য শিষ্যকে আচার্যের অনুমতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক স্নান সমাপ্ত করে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করত।
4. পরাবিদ্যা ও অপরাবিদ্যা কী ?
উত্তরঃ যে জ্ঞানের সাহায্যে পরআত্মাকে লাভ করা যায় তাই হল পরাবিদ্যা অপরদিকে রিক, সাম, যজু, অর্থব এই চার প্রকার বেদ শিক্ষা কল্প, ব্যাকারন, নিরুক্ত, ছন্দ, জ্যাতিষ এই সমস্ত শ্রেণীর জাগতিকবিদ্যাকে অপরবিদ্যা বলে।
5. বৌদ্ধ শিক্ষায় অষ্ঠাঙ্গিক মার্ক বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ জীবন থেকে দুঃখকে চিরতরে বিনাশের উপায় হিসাবে বৌদ্ধ দর্শনে আটটি মার্গ বা পথের নির্দেশ করা হয়েছে, এই পথগুলিকে বলা হয় অষ্ঠাঙ্গিক মার্গ, আটটি মার্গ হল – সম্যক দৃষ্টি, সম্যক্ সংকল্প সম্যক বাক্, সম্যক কর্মান্ত, সম্যক্ আজীব, সম্যক ব্যায়ম, সম্যক্ স্মৃতি, সম্যক্ সমাধি।
6. বৌদ্ধ যুগের দুটি বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্রের নাম ও তাদের অবস্থান লেখো অবস্থান লেখো।
উত্তরঃ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। (বিহার) বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলাদেশ)
7. মক্তব কী ? এর পাঠক্রম সম্পর্কে লেখো।
উত্তরঃ ইসলামীর শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানকে মক্তব বলা হয়। এখানে পঠন, লিখন, গণিত ও কোরান পাঠ করা হত। এছাড়া কলমা , ধর্মীয় নীতি, কাব্যাংশ পাঠ করা হয়।
8. প্রবজ্জা কাকে বলে ?
উত্তরঃ বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় যে অনুষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা শুরু হত তাকে প্রবজ্জা বলে। প্রবজ্জার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষালয়ে প্রবেশ করত তাদের শ্রমণ বলা হয়।
9. বৌদ্ধ শিক্ষার চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো ?
উত্তরঃ বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যঃ
- বৌদ্ধ শিক্ষার মাধ্যম ছিল প্রকৃত ভাষা।
- বৌদ্ধ শিক্ষা সর্বজনীন।
- বৌদ্ধ শিক্ষা ছিল সমর্থন গণতান্ত্রিক।
- বৌদ্ধ শিক্ষা ছিল বিহার কেন্দ্রিক।
10. মাদ্রাসা কী ?
উত্তরঃ ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চ শিক্ষার স্থানকে বলা হয় মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় ব্যাকারন, যুক্তি বিজ্ঞান, সাহিত্য, চিকিৎসা, ভূগোল, ইতিহাস, দর্শন, জ্যার্তিশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে পাঠ দান করা হত। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান পাঠের ব্যবস্থা ছিল।
11. মধ্যযুগে মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমও শিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে লেখো।
উত্তরঃ
i) শিক্ষার মাধ্যম
মধ্যযুগে ইসলামীয়ও শিক্ষার মাধ্যম ছিল আরবী ও ফার্সি ভাষা। পরবর্তীকালে উর্দু ভাষাও প্রয়োগ দেখা যায়।
ii) শিক্ষণ পদ্ধতি
মক্তবের শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল মৌখিক ও যান্ত্রিক। মাদ্রাসায় শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল মূলত মৌখিক। ইসলামীয় শিক্ষায় সর্দার পড়ো প্রথার প্রচলন ছিল।
12.টোল ও মাদ্রাসার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
উত্তরঃ টোল ও মাদ্রাসার মধ্যে দুটি পার্থক্যঃ
- প্রাচীন ভারতের গুরু গৃহ কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা হল ঠোল। ওপর দিকে মাদ্রাসা হল ইসলামীয় শিক্ষার উচ্চশিক্ষাকেন্দ্র।
- টোল ব্যবস্থায় প্রধানত বেদ পাঠ করা হত অপরদিকে মাদ্রাসায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান পাঠ করা হয়।
13. সনদ আইন কত সালে প্রবর্তিত হয় ? দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তরঃ সনদ আইন পাশ 1813 সালে।
সনদ আইনের গুরুত্বঃ
- সনদ আইনের ফলে ভারতবর্ষের শিক্ষার উন্নতির ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যগ বেসরকারি উদ্যগ ও মিশনারিদের উদ্যগ গ্রহণের সূত্রপাত ঘটে।
- সনদ আইনের ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়।
14. 1854 সালে উডের ডেসপ্যাচে যে কোনো চারটি গুরুত্বপূর্ন সুপারিশ লেখো।
উত্তরঃ 1854 সালে উডের ডেসপ্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ-
- নারী শিক্ষার বিস্তার করতে হবে।
- শিক্ষক শিক্ষণ পদ্ধতি চালু করতে হবে।
- মুম্বাই, মাদ্রাস, কলিকাতায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
- মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করতে হবে।
15. হান্টার কমিশনে A কোর্স ও B কোর্স বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ হান্টার কমিশন বা মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমের দুটি অংশ একটি হল A কোর্স, B কোর্স। A কোর্সে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের পরীক্ষার পাঠের বিষয়। অপরদিকে B কোর্সে থাকবে কারিগরি ও বৃত্তিশিক্ষার জন্য পাঠের বিষয়।
16. ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশনের নাম কী ? এর দুটি গুরুত্ব লেখো ?
উত্তরঃ ভারতের প্রথম শিক্ষার নাম হল হান্টার কমিশন (1882) খ্রিস্টাব্দ।
প্রথম শিক্ষা কমিশনের গুরুত্বঃ
মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিতে A কোর্স ও B কোর্স চালু করার মাধ্যমে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়। প্রতিটি জেলা মডেল সরকারি স্কুল স্থাপনের উদ্যগ নেওয়া হয়।
17. লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি কতসালে পাশ হয় ? এই শিক্ষা নীতির নাম কী ছিল ?
উত্তরঃ লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি 1902 সালে পাশ হয়। এই শিক্ষা নীতির নাম ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন।
18. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন কতসালে গঠিত হয় ? UGC পুরো নাম কী ?
উত্তরঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন 1917 সালে গঠিত হয়। UGC পুরো নাম University Grand Commission.
19. সার্জেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমিক শিক্ষার সুপারিশগুলি লেখো ?
উত্তরঃ সার্জেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমিক শিক্ষার সুপারিশগুলি
- মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যপ্তি হবে 6 বছর।
- মাধ্যমিক শিক্ষার হবে স্বয়ং সম্পূর্ন।
- দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান করতে হবে।
- মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে পঠন পাঠনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাক বেতন দিতে হবে।
20. CABE –এর পুরো নাম কী ?
উত্তরঃ Central Advisory Board of Education. স্যার জন সার্জেন্টের সভাপতিতে CABE গড়ে ওঠে।
21. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের দুজন ভারতীয় সদস্যের নাম লেখো।
উত্তরঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের দুজন ভারতীয় সদস্যের নাম – স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, ডঃ জিয়াউদ্দিন আহমেহ।
22. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের দুজন বিদেশী সদস্যের নাম লেখো।
উত্তরঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের দুজন বিদেশী সদস্যের নাম- স্যার ফিলিপ হার্টগো, অধ্যাপক রামজেম্যুর।
23. DPI -এর পুরো নাম কী ? এর কাজ কী ?
উত্তরঃ DPI -এর পুরো নাম হল – Department Public of Instruction.
DPI -এর কাজ হল-
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের আর্থিক বরাদ করা এবং শিক্ষাক্ষেত্রের উপর সরকারি কর্তৃত্ব আরোপ করা।
24. চুঁইয়ে পড়া নীতি কী ?
উত্তরঃ চুঁইয়ে পড়া নীতির প্রবক্তা হলেন লর্ডমেকলে। এই নীতির মূল কথা হল সমাজের উঁচুস্তরের মানুষজনকে শিক্ষিত করে তুলতে পারলে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষেরা আপনা থেকেই শিক্ষিত হয়ে উঠবে।
25. উডের ডেসপ্যাচকে ম্যাগনাকার্টা বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ 1854 সালে উডের ডেসপ্যাচকে ভারতীয় ইংরেজি শিক্ষার ম্যাগনাকার্টা বলা হয়। উডের ডেসপ্যাচে শিক্ষার বিষয়বস্তু শিক্ষার মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার শিক্ষণ বৃত্তিশিক্ষা নারীশিক্ষা ইত্যাদি সমস্ত দিকের উন্নতির সুপারিশ করা হয়।
26. অনুদান প্রথা কী ?
উত্তরঃ উড সাহেব জনশিক্ষার দ্রুতগতী আনার জন্য যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন তাকে অনুদান প্রথা বলে। এক্ষেত্রে যেসব বেসরকারি বিদ্যালয় সরকারি অনুদান চাইবি তাদের শিক্ষাদানের উপকরণ ও পরিচালন ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারি নির্দেশপালন করতে হয়।
27. GCPI – এর পুরো নাম কী ? এটি কেন গঠন করা হয়েছিল ?
উত্তরঃ GCPI – এর পুরো নাম হল -General Committee of Public Instruction . 1813 সালে ভারতীয় সাহিত্যের পুনজীবন ও উন্নয়নের জন্য সনদ আইনে বরাদ্দ 2 লক্ষ টাকা ব্যায় করার জন্য GCPI গঠিত হয়।
28. প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ 1813 সালে সনদ আইনে বরাদ্দ 2 লক্ষ টাকা ব্যবহার করার জন্য GCPI কমিটি গঠন হয় এবং এর সদস্যরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে একদল শিক্ষা বিস্তারে ভারতীয় শিক্ষাকে সমাবর্তন করে, এবং আরেকদল পাশ্চাত্য শিক্ষাকে সমর্থন করে যা ভারতীয় ইতিহাসে পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।
29. বিসমিল্লাহ অনুষ্ঠান কাকে বলে ?
উত্তরঃ ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু হত তাকে বিসমিল্লাহ বলে। শিশুর বয়স যখন 4 বছর 4 মাস 4 দিন এখন এই অনুষ্ঠান শুরু হয়।
30. ইসলামীয় শিক্ষার দুটি সীমাবদ্ধতা লেখো।
উত্তরঃ ইসলামীয় শিক্ষার দুটি সীমাবদ্ধতা হল-
- ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশীয় ভাষাকে গুরুত্বদেওয়া হয়নি।
- ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় মক্তব ও মাদ্রাসাগুলি স্বল্প মেয়াদি হওয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম ছিল।
31. ত্রিশরণ মন্ত্রটি কী ?
উত্তরঃ বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বশেষে শিক্ষার্থীদের গুরুর চরণে প্রণাম করে জোর হাত করে যে মন্ত্র পাঠ করতে হত তাকে ত্রিশরণ মন্ত্র বলে। ত্রিশরণ মন্ত্রটি হয় বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি। ধর্মং শরনং গচ্ছামি, সংযমং শরণং গচ্ছামি।
32. বিদ্যারম্ভ কী ?
উত্তরঃ ব্রাহ্মণ শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীর শিক্ষাপর্ব শুরু হত তাকে বিদ্যারম্ভ বলা হত। শিশুর দু বছর বয়সে এই শিক্ষাপর্ব শুরু হত।
32. সমাবর্তন ও উপনয়ন / উপসম্পদ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ
সমাবর্তনঃ ব্রাহ্মণ্যকুলে যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম শেষ হত তাকে সমাবর্তন বলা হত। সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা অনুযায়ী শংসাপত্র দেওয়া হত। যেমন – বিদ্যাস্নাতক, ব্রতস্নাতক, ও বিদ্যাব্রতস্নাতক। এছাড়া সমাবর্তনের সময় গুরু শিষ্যকে আর্শীবাদ দিতেন।
সত্য বলা , কর্তব্য পালন , বেদ অধ্যায়ন ও দেবঋণ, ঋষিঋণ, পিতৃঋণ পরিশোধ করা ছিল আর্মীবচনের মূল কথা। এই সময় গুরু শিষ্যকে বিনয়ী , কর্তব্যনিষ্ঠা , চরিত্রবান ও বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া উদ্দেশ্য দিতেন। এছাড়া আরো উপাদানবানী হল – মাতৃদেবোভাব, পিতৃদেবোভব, আচার্যদেবোভব, অতিথিদেবোভব।
Marks – 8 এর ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন
1. ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার সঙ্গে বৌদ্ধ শিক্ষার পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ
প্রাচীন ভারতে দীর্ঘ সময় ধরে ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা একই সঙ্গে অবস্থান করেছে। ব্রাহ্মণ শিক্ষার মধ্যে থেকেই বৌদ্ধ শিক্ষার জন্ম হয়েছে । এই সহঅবস্থান ভারতীয় মনের সহনশীলতা, সহধর্মিতা ও চিরন্তন ধৈর্য্যের বার্তা বহন করে। এই দুই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই প্রতিফলিত হয়েছে।
ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্যঃ
সাদৃশ্যের মধ্য দিয়ে আমরা ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক উপাদানগুলির ধারণা লাভ করতে পারি।
প্রথমত ,
মানুষের শিক্ষা ধর্মভিত্তিক হওয়া উচিৎ এটা ছিল ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাচীনতম ঐতিহ্য। ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ এই উভয় শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ধর্মভিত্তিক, ধর্মকে কেন্দ্র করে ধর্মের নীতি ও আচরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উভয় শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হত।
দ্বিতীয়ত,
ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের জাগতিক ভোগ সুখের বন্ধন থেকে মুক্তি দান। মোক্ষ লাভ করলে মনুষ্য জীবনের সমস্ত জাগতিক দুঃখের অবসান হয় এই চরম লক্ষ্যকে সামনে রেখে দুই শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হত।
তৃতীয়ত,
প্রাচীন ভারতে মানুষের জীবনে প্রয়োজনের অধিকার সম্পর্কে যে ধারণা ছিল তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই দুই শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যক্রমের মধ্যে কারণ উভয় শিক্ষাব্যবস্থা পাঠ্যক্রমে মানুষের জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজনগুলিকে অস্বীকার না করে পরাজ্ঞান লাভের উপায় স্বরূপ পাঠক্রম নির্বাচিত হত।
চতুর্থত,
এই উভয় শিক্ষাব্যবস্থা ছিল আবসিক চরিত্রের লোহাকে চুম্বকে পরিণত করতে হলে দীর্ঘ সময় ধরে যেমন – লোহাকে চুম্বকের সংস্পর্শে রাখতে হয়, তেমনি উভয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষকের সংস্পর্শে থাকতেন।
পঞ্চমত,
আত্মার উপলব্ধি ছাড়া প্রকৃত জ্ঞানের সঞ্চালন সম্ভব নয়। এটা ছিল উভয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য। এই কারণে গুরু ও শিষ্য মধ্যে সম্পর্ক ছিল পিতা পুত্রের সম্পর্কের মতো। শিক্ষা জীবনে কোঠর নিয়ম পালন করা ছিল উভয় প্রকার শিক্ষা ক্ষেত্রেই ছিল ।
ষষ্ঠত,
উভয় শিক্ষা ব্যবস্থাতে শিক্ষা শুরুর সময় অনুষ্ঠান হত , উপনয়ন ও প্রব্রজ্যা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হত । শিক্ষার্থীকে শিক্ষার জন্য কোন বেতন দিতে হত না । এমনকি শিক্ষার্থীর সমস্ত প্রকার দায়িত্ব যেমন- খাদ্য, বস্ত্র , বাসস্থানের দায়িত্ব ছিল গুরুর । সাধারণত এই দুই শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠন ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দান করা হত ।
ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে সাদৃশ্যঃ
উভয় শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক বিষয়ে মিল থাকলেও অনেক বিষয়েই উভয় শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য ছিল। পার্থক্যের উপাদানগুলি হল –
প্রথমত,
প্রাচীন ভারতীয় সমাজ চারটি আশ্রমে বিভক্ত ছিল। এই চতুরাশ্রম ব্যবস্থা ব্রাহ্মণ শিক্ষা ব্যবস্থায় খুব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় চতুরাশ্রম ব্যবস্থার কোনো প্রভাব দেখা যায় না।
দ্বিতীয়ত,
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভাবে বেদ নির্ভর। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল বেদ বিরোধী। তাই বৌদ্ধ দর্শনকে বেদ বিরোধী দর্শন বলা হয়। বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্মের কর্মফল ও জন্মান্তরবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও, বেদ অপৌরুষেয় ও অভ্রান্ত তা বৌদ্ধরা স্বীকার করেননি।
তৃতীয়ত,
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন উচ্চবর্ণের মানুষেরা শিক্ষার অধিকার পেলেও, শূদ্ররা ছিল এই শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য। এই বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক, বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক।
চতুর্থত,
বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠানিক। তাই এই শিক্ষাব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। অপরদিকে ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা ছিল গুরু পরিবেশ কেন্দ্রিক। তাই এই শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।
পঞ্চমত,
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে শিক্ষা আরম্ভকালে সন্ন্যাস গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষায় শিক্ষার আরম্ভে শিক্ষার্থীকে সন্ন্যাস গ্রহণ করতে হত।
ষষ্ঠত,
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার প্রধান মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা। বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার মাধ্যম ছিল সর্বসাধারণ বোধগম্য ভাষা। এছাড়াও , উভয় শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে আচার, অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল , তার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য ছিল ।
আবার দেখা যায় যে , উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায় নারী শিক্ষার প্রচলন থাকলেও , বৌদ্ধ শিক্ষার তুলনায় ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় নারী শিক্ষার যথেস্থ প্রসার ঘটে ছিল ।
ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে উপরিউক্ত পার্থক্যগুলি লক্ষ্য করা গেলেও উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায় একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিপুষ্ট করেছিল।
2. ভারতে ইসলামীয় শিক্ষা ব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো |
উত্তরঃ
ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
দ্বাদশ শতকের শুরুতে ভারতবর্ষের বহুবার মুসলিম শাসকের আক্রমণ ঘটে । ক্রমাগত মুসলিম শাসকের কারণে হিন্দু যুগের অবসান ঘটে । এবং ধীরে ধীরে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলামিক জীবনাদর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয় । এই শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বলা হয় ।
ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি হলঃ
ভারতে এই শিক্ষা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য গুলি হল –
(i) শিক্ষার লক্ষ্যঃ
আধ্যাত্মিক , নৈতিক , চারিত্রিতিক ও পার্থিব , শ্রীবৃদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীর অন্তরের সুপ্ত গুণগুলিকে বিকশিত করা , অন্ধকুসংস্কার দূর করে সত্যের অনুসন্ধান এবং মনবতা ও পরধর্ম সহিষ্ণুতা হল ইসলামিক শিক্ষা লক্ষ্য ।
(ii) শিক্ষার সুযোগঃ
ব্রাহ্মণ্য ,বৈদিক শিক্ষার মতো এই শিক্ষাগত ব্যবস্থায় সমাজের বিশেষ শ্রেণীর মানুষকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্ছিত করা হত না । এছাড়াও এই যুগে পর্দাপ্রথার প্রচলন থকালেও নারী শিক্ষার যথেষ্ট প্রচলন ছিল ।
(iii) শিক্ষার কালঃ
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মতই এই যুগে শিক্ষার তিনটি স্তর ছিল-
- i) প্রাথমিক স্তর
- ii) মাধ্যমিক স্তর
- ii) উচ্চমাধ্যমিক স্তর ।
শিক্ষার প্রারম্ভে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কাল শুরু হত । চার বছর বয়সে শিক্ষাকাল শুরু হত এবং কুড়ি বছর বয়সে শেষ হত ।
(iv) শিক্ষালয়ঃ
এই যুগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হল ‘মক্তব’ এবং মাদ্রাসা। ছেলেমেয়ে উভয়ই এই প্রতিষ্ঠান গুলি একই সঙ্গে পড়াশোনা করত ।
(v) পাঠক্রমঃ
ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে ছিল ‘কোরান’ , মহম্মদের বাণী , ইসলামীয় ইতিহাস , ইত্যাদি । এছাড়াও আরবি ,ব্যাকরণ, দর্শন, গণিত , ভূগোল , অর্থনীতি , রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়েও পাঠদান করা হত ।
(vi) সহপাঠ্যক্রমঃ
শিক্ষার্থীকে ইসলামিক চারুশিল্প ও হস্তশিল্পে পরিণত করার ব্যবস্থা ছিল ।
(vii) শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ
আধুনিক আত্মশিখন পদ্ধতির সাহায্যে মুসলিম যুগে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা হত। উচ্চশিক্ষার জন্য সর্দার পড় বা monitorial system প্রথার প্রচলন ছিল ।
(viii) শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্কঃ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল আবাসিক , সেহেতু গুরু সেবা আবাসিক কর্তব্য ছিল । পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়ার প্রচলন ও ছিল নিয়ম কানুন বজায় রাখার জন্য নানা রকম দৈহিক শাস্তি প্রদান করা হত ।
(ix) উচ্চশিক্ষার অভাবঃ
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ‘মক্তব’ এবং ‘মাদ্রাসার মতো প্রতিষ্ঠান থাকলেও । মুসলিম শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব ছিল । তাই এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থিরা উচ্চ শিক্ষার জন্য তেমন সুযোগ পেত না ।
(x) শিক্ষার মাধ্যমঃ
মুসলিম শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষার তুলনায় ,আরবি , ফারসি ভাষায় শিক্ষা দানের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হত ।
পরিশেষে বলা যায় যে, এই শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত শাসক শ্রেণী নির্ভর হওয়াই নিজস্ব দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি ।
3. প্রাচীন ভারতবর্ষের বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ।
উত্তরঃ
প্রাচীন পাটলিপুত্র নগরীর বা বর্তমানে বিহার রাজ্যের পাটনা শহরের রাজগিরির কাছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত ছিল । আনুমানিক খ্রিষ্টিয় চতুর্থ শতকের শেষ দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল । প্রায় তিনশো বর্গ মাইল জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । কেন্দ্রীয় অংশে সাতটি বড় বড় হল ঘর তিনশোটি পাঠকক্ষ ও তেরোটি ছাত্রবাস ছিল । ১৫০০ শিক্ষক ৮৫০০ ছাত্রকে ১০০ টি বিষয়ে বিভিন্ন পাঠকক্ষে নিঘন্ট অনুসারে পড়াতেন।
এখানে থাকা খাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কোন অর্থ দিতে হত না । একশোটি গ্রামের রোজগার থেকে , বিভিন্ন রাজাদের আর্থিক অনুকুল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ভার নির্বাহ হত । নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচলন ব্যবস্থা ছিল গণতান্তিক প্রকৃতির । মুখ্য পরিচালককে বলা হত ভিক্ষু মহস্থবির । বহু শিক্ষক ও ছাত্রের সমাবেশে যৌথ পরিচলনায় সংবিধান সম্মত প্রন্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত হত ।
নালন্দা শিক্ষা মূলত ধর্ম ভিত্তিক হলেও পাঠক্রমে ব্রাহ্মণ্য – বৌদ্ধ , দর্শন , ভাষাতত্ব , শল্য বিদ্যা, ন্যায় শাস্ত্র , চিকিৎসা বিদ্যা, আইন, যোগ শাস্ত্র , ব্যাকরণ , জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হত । অর্থাৎ তত্বগত ও ব্যবহারিক উভয় প্রকার শিক্ষারই ব্যবস্থা ছিল ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান তিনটি পদ্ধতিতে করা হত ।
- i) মৌখিক
- ii) ব্যাখামূলক
- iii) বক্তৃতা ও বিতর্ক
নালন্দা তিনটি বৃহৎ অট্টালিকায় তিনটি সুবৃহৎ গ্রন্থাগার ছিল – রত্নসাগর , রত্নদৃষ্টি ও রত্নরঞ্জক , রত্নসাগর অতি সমৃদ্ধ ছিল । গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও অর্ন্ত দ্বদ্ধে অষ্টম শতকের শেষ ভাগ থেকেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব অস্তমিত হতে থাকে । মুসলিম আধিপত্যের সাথে সাথে নালন্দার ইতিহাসও শেষ হয় ।
4. ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থার যে কোন দুটি অনুষ্ঠান ও তার গুরুত্ব উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হল- i) উপনয়ণ ii) সমাবর্তন
i) উপনয়ণঃ
প্রাচীন ভারতে বা বৈদিক সমাজের শিক্ষার্থীর বিদ্যারম্ভের পরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আচার্য নবাগত শিক্ষার্থীকে শিষ্যরুপে বরণ করে নিতেন । সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে বলা হত ‘উপনয়ণ’ । অর্থাৎ উপনয়ণ নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী গুরু গৃহে প্রবেশ করত । সমাজে আশ্রম ভেদে উপনয়ণ অনুষ্ঠানের সময়ভেদ ছিল ।
ব্রাহ্মণ সন্তানের জন্য উপনয়ণ হত ৮ বছর বয়সে , ক্ষত্রিয়দের ক্ষেত্রে ১১ বছর বয়সে , এবং বৈশ্য সন্তান্ দের ক্ষেত্রে এই সময় ছিল ১২ বছর । শূদ্রদের শিক্ষার অধিকার ছিল না । তাই তাদের ক্ষেত্রে উপনয়ণের প্রশ্ন উঠে না ।
উপনয়ণের গুরুত্বঃ
উপনয়ণ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না । প্রাচীন ঋষিদের কাছে এর তাৎপর্য ছিল অনেক । উপনয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থী দ্বিজত্ব লাভ করত । এখানে দ্বিতীয়বার জন্ম হল আধ্যত্মিক জন্ম । উপনয়ন নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ব্রত , সংযম, বেদ ,নিয়ম, গুরু ও দেবতার সংস্পর্শে আসতেন ।
ii) সমাবর্তনঃ
ব্রাহ্মণ্যকূলে যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম শেষ হত তাকে বলা হত সমাবর্তন । অর্থাৎ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃচ্ছসাধন শেষ হত ।
সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের ‘স্নাতক’বলে ঘোষণা করা হত । স্নাতক আবার তিন প্রকার ছিল ,জেমন-বিদ্যাস্নাতক , ব্রতস্নাতক ও বিদ্যাব্রত স্নাতক । এই অনুষ্ঠানের শিক্ষার্থী তার সাধ্যমত গুরুদক্ষিণা দিয়ে গৃহে ফিরতেন ।
সমাবর্তনের গুরুত্বঃ
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের গুরু শিষ্যকে আশীর্বাদ স্বরূপ ভবিষ্যৎ জীবনের চলার পাথেয় বলে দিতেন । সত্য কথা বলত , ন্যায় আচরণ করত । বেদ অধ্যায়ণ এবং ঋষিগণ পিতৃধন পরিশোধ করাই ছিল আশীর্বচনের মূল কথা । এই সময় গুরু শিষ্যকে কায়িক পরিশ্রমী কর্তব্যনিষ্ট ও চরিত্রবান হওয়ার উপদেশ দিতেন ।
5. বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার মুখ্য বিশিষ্ট্য গুলি লেখ ।
উত্তরঃ
প্রাচীন ভারতবর্ষের ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্বরূপ বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে । বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় যেমন উপনিষদের মৌলিক নীতি গুলি সহজ সরল্ভাবে প্রাকৃতজনের ভাষায় প্রকাশ করা হত । তেমনিভাবে ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যাবস্থায় কুসংস্কারগুলিকে পরিত্যাগ করা হত । এই শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট গুলি হল –
ক) শিক্ষার লক্ষ্যঃ
বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র লক্ষ্য ও আদর্শ পরিনিধান অর্থাৎ সংসার বন্ধন থেকে চূড়ান্ত মুক্তির মাধ্যমে নির্বান লাভ । এছাড়াও ছিল ত্যাগ ও মানব সেবা ।
খ) সর্বাজনীন শিক্ষা
বৌদ্ধ ধর্মে জাতিভেদ প্রথা ছিল না । সকল ব্যাক্তিই শিক্ষার সুযোগ পেত । অর্থাৎ শিক্ষা ছিল সর্বা জনীন । নারীদের শিক্ষা গ্রহনে বাঁধা ছিল না ।
গ) শিক্ষা কালঃ
বৌদ্ধ শিক্ষা শিক্ষার্থীর চার বছর বয়স থেকে শুরু হত এবং এর ব্যাপ্তি ছিল ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত ।
ঘ) শিক্ষা পদ্ধতিঃ
বৌদ্ধবিহার গুলিতে শিক্ষা পদ্ধতি ছিল মূলত মৌখিক , বিতর্ক ও চিন্তাপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞানদান করা হত । পাঠদানের মাধ্যম ছিল প্রাকৃত ভাষা ।
ঙ) পাঠক্রমঃ
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ পাঠ ছাড়াও বেদ , পুরাণ ,ব্যাকরণ , জ্যোতির বিদ্যা , গণিত , চিকিৎসা শাস্ত্র , সঙ্গীত, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা ছিল । এই শিক্ষা ব্যবস্থায় বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের জন্য বিশেষ শিক্ষা , গৃহীদের জন্য শিক্ষা ও গণ শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল ।
চ) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিঃ
বৌদ্ধ শ্রমণদের জন্য ভিক্ষা , নিজেদের প্রয়োজনের জন্য সুতা কাটা কাপড় বোনা ,ইত্যাদির কাজ করতে হত ।এ ছাড়াও তাঁর চালান, কুস্তি , পাশা খেলা , গুরুর সেবা করা ইত্যাদি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ।
ছ) গুরু শিষ্যের সম্পর্কঃ
এই শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরু শিষ্য পরস্পরের প্রতি কর্তব্য পালন করত । সমবেদন মূলক নিয়ন্ত্রনের নীতি ছিল তাদের সম্পর্কের ভিত্তি ।
জ) শিক্ষার অনুষ্ঠানঃ
‘প্রব্জ্রা’ নামক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন শুরু হত এবং ‘উপ-সম্পদা” নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শেষ হত ।
6. ব্রাহ্মণ শিক্ষার পদ্ধতি কী ?
উত্তরঃ
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল গুরুকাল কেন্দ্রিক গুরু কখনও ব্যক্তিগতভাবে বা কখনও সমষ্টিগত ভাবে শিক্ষা দিতেন। তবে শিক্ষার লক্ষ্য যেহেতু শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশের উপযোগী ছিল তাই শিক্ষণ পদ্ধতি ছিল মূলত ব্যক্তি কেন্দ্রিক ও মৌখিক। অর্থাৎ গুরুমুখে শুনে শিক্ষার্থীদের পাঠ মনে রাখতে হত।
শিক্ষা প্রদ্ধতি কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল প্রথম পর্যায় হল ‘উপক্রম’ বা ‘প্রস্তুতি পর্ব’ এই পর্যায়ে শিক্ষাদানে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে গুরু ও শিষ্যরা বসতেন এবং শিষ্যরা গুরুর পাদবন্দনা করতেন। এরপর গুরু শিষ্যদের কয়েকটি শব্দ উচ্চারণ করে শোনাতেন এবং শিক্ষার্থীরা টা শ্রবণ করতেন। এই দ্বিতীয় পর্যায়টির নাম হল – ‘শ্রবণ’। শ্রবণের পর শিক্ষার্থীরা যেই শব্দ নির্ভুল ভাবে পুনরাবৃত্তি করতেন।
এই পর্যায়টির নাম হল আবৃত্তি। এরপর শব্দগুলির অর্থ বিষদভাবে ব্যাখ্যা করা হত। এই পর্যায়ের নাম ‘অর্থবাদ’। তারপর শিক্ষার্থীরা তাৎপর্য গুলিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা বা চিন্তা করার চেষ্টা করতো একে বলা হয় মনন। মননের পর শিক্ষার্থীরা একাগ্র চিত্তে ধ্যানের মাধ্যমে সত্যকে উপলব্ধির চেষ্টা করত। এই পর্যায়ের নাম হল ‘নিদিধ্যাস্’।
এই ভাবে সমষ্টিগতভাবে প্রদত্ত গুরুর শিক্ষা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হয়ে সম্পূর্ন শিক্ষণ প্রদ্ধতিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে সাহায্য করত।
7. বৌদ্ধ শিক্ষাকে গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ
বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা হল এমন একটি প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে প্রথম শিক্ষার গণতান্ত্রি করণের প্রয়াস দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ শিক্ষার দ্বার ব্রাহ্মণ, অবাহ্মন, ধনী, দারিদ্র, শুদ্রক সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এমনকি ব্রাহ্মণ বা অব্রাহ্মণ যে কেউই এই শিক্ষা ব্যবস্থায় আচার্যের পদে বসতে পারতেন। বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় গণতান্ত্রি করণের বিভিন্ন দিকগুলি হল –
প্রথমত,
বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই ব্যক্তিগত শিক্ষণ ও দলগত শিক্ষণের সমন্বয়।
দ্বিতীয়ত,
যৌথভাবে শিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
তৃতীয়ত,
এই শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে মাতৃভাষার গুরুত্বকে প্রথম উপলব্ধি করা হয়। কারণ মাতৃভাষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর দ্রূত মানসিক বিকাশের সম্ভবনা থাকে।
চতুর্থত,
বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় জনসাধারণের মধ্যে গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা বুদ্ধদেবের প্রচারিত ধর্ম প্রচার করতেন।
পঞ্চমত,
এই শিক্ষা ব্যবস্থায় সকল স্তরের মানুষ যাতে সমাজের উপযোগী হয়ে উঠতে পারে তার জন্য এই শিক্ষা ব্যবস্থায় বৃত্তি শিক্ষার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হত।
বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য যে হত বুদ্ধ দেবের মূল আদর্শ সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে প্রচারিত করা। তাই এই শিক্ষা ব্যবস্থায় গণশিক্ষা প্রচারের যথেষ্ট প্রয়াস ছিল। সুতরাং প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার উপাদান পুষ্ট ছিল।
8. ‘উপনয়ন’ ও ‘প্রবজ্যা’ বলতে কি বোঝ ?
উত্তরঃ
উপনয়নঃ
প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিশুর শিক্ষা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হত। এই রকমই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হল উপনয়ন। উপনয়নের মধ্য দিয়ে আর্য শিশু বিদ্যা গ্রহণের উপযুক্ত হত, যে গুরুর নিকট যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করত। অর্থাৎ তার নবজন্ম হত। শিক্ষাচলাকালীন গুরু। পরবর্তীকালে আবার নতুন করে উপনয়নের প্রয়োজন হত।
তাছাড়া ব্রহ্মচর্য আশ্রমে প্রবেশের পূর্বে ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় , ও বৈশ্যের জন্য উপনয়ন অবশ্য কর্তব্য ছিল ব্রাহ্মণ সন্তানের আট, ক্ষত্রিয় সন্তানের এগারো এবং বৈশ্য সন্তানের বারো বছর বয়সে উপনয়ন হত। উপনয়ন অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থী গুরুর সামনে উপস্থিত হত, তাকে প্রণাম করে ব্রহ্মর্যে আশ্রমে প্রবেশের অনুমোদন গ্রহণ করতেন।
প্রবজ্যাঃ
ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় যেমন উপনয়ন দিয়ে শিক্ষা আরম্ভ হত, তেমনি বৌদ্ধ, ভিক্ষুদের জীবনের আরম্ভ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হত। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় প্রবজ্যা। বৌদ্ধ ধর্মে জাতির বিচার না থাকায় যেকোনো বর্ণের লোকই প্রবজ্যা গ্রহণ করতে পারত। প্রবজ্যা গ্রহণ কারীর বয়স আট বছর অবশ্যই হতে হত। এবং পিতা মাতার অনুমতি ছাড়া প্রবজ্যা গ্রহণ করা মেত না। এছাড়া রাজকর্মচারী, কৃতদাস, চোর, ডাকাত, হত্যাকারী, ঋনী, বিকলাঙ্গ প্রভৃতি ব্যক্তির সংঘে প্রবেশের অধিকার ছিল না।
সংঘে প্রবেশ করার পর ১০ -৩০ দিন উপবাসে থাকতে হত। তখন তাকে পঞ্চশীলের উপদেশ দেওয়া হত। এরপর শ্মশ্রুমুন্ডন করে হলুদ বস্ত্র ও উত্তরীয় পরিচয় এবং পরিষদের সামনে উপস্থিত করা হত। এই পরিষদ শিক্ষার্থীকে প্রবজ্যা দান করতেন এবং জোড় হাত করে শিক্ষার্থীকে বলাতেন – ‘বুদ্ধং স্মরনং গচ্ছামি, ধর্মং স্মরণং গচ্ছামি, সংখ্যক স্মরণং গচ্ছামি’ এইভাবে প্রবজ্যা সম্পূর্ণ হত।
9. মধ্যযুগে ইসলামীয় শিক্ষার তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ ?
উত্তরঃ
মুসলিম প্রভাবিত যুগকে মধ্যযুগ বা ইসলামীয় সভ্যতায় যুগ বলা হয়। মুসলিম যুগের শিক্ষার তিনটি বৈশিষ্ট্য হল –
ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্যঃ
এই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীর নৈতিক ও জাগতিক জীবনের মান উন্নয়ন করা। ইসলাম ধর্মের আদর্শ ও পবিত্র কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী চরিত্রবান ও ধার্মিক মানুষ সৃষ্টি করাই ছিল। এই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য এই শিক্ষায় কোনোরূপ বর্ণ বৈষম্য ছিলনা, তবে নারী শিক্ষা ছিল অবহেলিত।
শিক্ষক- শিক্ষার্থী সম্পর্কঃ
উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসগুলি ছিল আবাসিক। আবাসিক বিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত পারস্পরিক সান্নিধ্য লাভের ফলে শিষ্যের জীবনধারার উপর গুরুত্ব প্রভাব প্রতিফলিত হত। সচ্চরিত্র শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পিতাপুত্রের ভিত্তিতে নৈতিক জীবন হত উন্নত।
শিক্ষা প্রদ্ধতিঃ
মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষণ পদ্ধতি ছিল সান্ত্রিক এবং মুখস্থ নির্ভর। শিশুরা স্পষ্টভাবে কথা বলতে শিখলেই কোরানের কিছু পংক্তি মুখস্থ করানো হত। সাতবছর বয়সে মন্তবে শিক্ষার্থীদের বর্ণমালার সাথে পরিচিত করানো হত। ব্যবহারিক বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থাছিল। মুসলিম যুগে ‘সর্দার পড়ো’ – এই ব্যবস্থারও প্রচলন ছিল। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের প্রয়োগিক প্রশিক্ষণ দেওয়া।
Thanks For Reading : প্রাচীন মধ্যযুগ প্রাক স্বাধীনতা ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা | একাদশ শ্রেণী
Read More Subject:
- একাদশ শ্রেনীর সংস্কৃত সেমিস্টার ২
- একাদশ শ্রেনীর ইতিহাস সেমিস্টার ২
- একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা
- একাদশ শ্রেণির এডুকেশন সেমিস্টার ২ সকল অধ্যায়ের প্রশ্নপ্ত্র
- একাদশ শ্রেণির দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টার প্রশ্ন উত্তর